ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কাজুও ইশিগুরো : ইংরেজের কোটে জাপানের চেরিফুল

মুম রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩১, ৫ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাজুও ইশিগুরো : ইংরেজের কোটে জাপানের চেরিফুল

কাজুও ইশিগুরো

|| মুম রহমান ||

পারমাণবিক বোমা বিক্ষত জাপানের নাগাসাকিতে ১৯৫৪ সালে জন্মেছিলেন কাজুও ইশিগুরো। বিশ্বসাহিত্যে আজ তিনি নিজেই এক বিস্ফোরণ; অবশ্যই সু-অর্থে। তবে জাপানে জন্ম হলেও ইশিগুরো ব্রিটিশ সাহিত্যিক হিসেবেই পরিচিত। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই তিনি পরিবারের সাথে ব্রিটেন চলে আসেন। ১৯৮০ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট এঞ্জিলা থেকে ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ে মাস্টার্স করেন। ১৯৮২ সালে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পান। তার উচ্চশিক্ষা ব্রিটেনেই হয়েছে। ক্রমশই তিনি পুরো দস্তর ব্রিটিশ হয়ে ওঠেন। ব্রিটেনের গুরুত্বপূর্ণ সব পুরস্কার ও পদবিতে ভরে ওঠে তার শোকেস। অফিসার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পারর (OBE), ফেলো অফ দ্য রয়েল সোসাইটি অফ আর্টস (FRSA), ফেলো অফ দ্য রয়েল সোসাইটি অফ লিটারেচার (OBE) এর মতো নামকরা আর গালভারি পদবি পেয়েছেন তিনি।

যদিও ইশিগুরোর প্রথম দুটি উপন্যাসের প্রেক্ষাপট জাপান, তবু তার রচনায় জাপানি রীতির কোনো প্রভাব নেই। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি যদি ছদ্মনামে লিখতাম এবং আমার বইয়ের জ্যাকেটে অন্য কেউ আমার হয়ে ছবিতে পোজ দিতো আমি নিশ্চিত কেউ এটা বলার কথাও ভাবতো না যে, এই লোকটাই সেই জাপানি লেখক।’

বলা দরকার, এ কথা অবশ্য তিনি উল্লেখ করেন, তার রচনার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের কথা চিন্তা করে। কখনোবা তার লেখাতে জুনিচিরো তানিজাকি’র প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তবে কাজুও ইশিগুরো সাহিত্য নয়, তার লেখায় জাপানি চলচ্চিত্রের প্রভাব আছে বলে উল্লেখ করেন। ইউসুজিরো ওজু এবং মিকিও নারুসের চলচ্চিত্র তাকে প্রভাবিত করে। দেশ ছাড়ার ত্রিশ বছর পর জাপান ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে দেশে ফিরলে নোবেলজয়ী জাপানি অপর সাহিত্যিক কেনজাবুরে ওয়ে (১৯৯৪ সালে নোবেল পেয়েছেন)-এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, তার প্রথম দুটি উপন্যাসের জাপানি পরিপ্রেক্ষিত অনেকটাই কাল্পনিক। তিনি বলেন, ‘আমি বড় হয়েছি আমার করোটির ভেতর অন্য আরেকটি দেশের তীব্র কল্পনা নিয়ে, এক অতি গুরুত্বপূর্ণ দেশ যার সঙ্গে আমার রয়েছে দৃঢ় আবেগী বন্ধন... ইংল্যান্ডে আমি সব সময় এই ছবি আমার মগজে নিয়ে বড় হয়েছি, এক কাল্পনিক জাপানের ছবি।’

পাসপোর্ট আর বিশ্ব রাজনীতির বিবেচনায় কাজুও ব্রিটিশ হলেও তার আত্মা আর রক্তজুড়ে জাপানের সুর রয়ে গেছে। তার নিজের ভাষ্যমতেই: ‘আমি পুরোপুরি ইংরেজ লোকদের মতো নই, কারণ আমি বড় হয়েছি জাপানি পিতা-মাতার ক্রোড়ে, জাপানি মাতৃভাষার গৃহে। আমার পিতামাতা বুঝতে পেরেছিলেন আমরা এই দেশে এতো দীর্ঘকাল ধরে অবস্থান করবো। তারা আমাদের সঙ্গে জাপানি মূল্যবোধের সংযোগ রাখার দায়িত্ব পালন করেছেন সদাই। নিশ্চয়ই আমার একটা সুনির্দিষ্ট পটভূমি আছে, আমার দৃষ্টিভঙ্গি তাই সামান্য হলেও আলাদা।’

দেশ, ভাষা কিংবা জাতিগত কারণে মানুষ কখনোই বস্তুর মতো খণ্ড-বিখণ্ড হয় না। মানুষ এক সামগ্রিক সত্তা। ভিন্ন সংস্কৃতির, ভিন্ন জাতির প্রেক্ষাপটে মানুষ অনেক বেশি বৈচিত্রময় ও ভিন্নতর হয়। কাজুও ইশিগুরোর লেখায় সেই ভিন্নতা পাই। এ যেন এক ইংরেজের কোটে জাপানের চেরিফুল।

নিঃসন্দেহে আগামী ৮ নভেম্বর জীবনের ৬৩তম জন্মদিনটি কাজুও ইশিগুরোর জন্য আলাদা গুরুত্বপূর্ণ ও বৈচিত্রময় হবে। ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, চিত্রনাট্যকার, গীতিকার, কলামলেখক ইশিগুরোর নোবেল প্রাপ্তি জাপান ও ব্রিটেনে আনন্দের জোয়ার বইয়ে দেবে। ‘এন আর্টিস্ট অফ দ্য ফ্লোটিং ওয়ার্ল্ড’, ‘দ্য রিমেইন্স অফ দ্য ডে’, ‘হোয়েন উই ওয়্যার ওরফান’, ‘নেভার লেট মি গো’ তার বিশ্বখ্যাত উপন্যাস। পাঁচটি গল্প নিয়ে রচিত তার গল্পগ্রন্থ নকটার্নসও বিশ্বব্যাপী আলোচিত। তিনি ইতিপূর্বে উইনিফ্রেড হল্টবি মেমোরিয়াল প্রাইজ (১৯৮২), হোয়াটব্রেইড প্রাইজ (১৯৮৬), বুকার প্রাইজ (১৯৮৯) স্যাভালি দ্যু  লর্দে দে আর্টস এত্যুদেস লেটার (১৯৯৮) পেয়েছেন। আজকের সময়ের অন্যতম বিখ্যাত এই ইংরেজ জাপানি লেখক চারবার ম্যান বুকার প্রাইজের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ২০০৮ সালে ‘দ্য টাইমস’ ম্যাগাজিন তাকে ব্রিটেনের সেরা ৫০ লেখকের তালিকায় রেখেছিল। তারও আগে ২০০৫ সালে ‘টাইম’ ম্যাগাজিন তার ‘নেভার লেট মি গো’ উপন্যাসকে শত সেরা ইংরেজি উপন্যাসের তালিকায় ঠাঁই দিয়েছিল। ২০১০ সালে মার্ক রোমানেকের পরিচালনায় নেভার লেট মি গো চলচ্চিত্রায়িত হয়। তারও আগে জেমস আইভরি ১৯৯৩ সালে ‘দ্য রিমেয়ন্স অফ দ্য ড ‘ এবং ২০০৫ সালে ‘দ্য হোয়াই কাউন্টেস’ উপন্যাস দুটি নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করেন।
 

 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ অক্টোবর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়