ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গুলজারের ছোটগল্প || দাদাজি

ফজল হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ৭ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গুলজারের ছোটগল্প || দাদাজি

ভাষান্তর : ফজল হাসান

নিমগ্ন দাদাজি অলস ভঙ্গিতে হাতের লাঠি দিয়ে উঠানের মাটিতে ঠকঠক শব্দ করে বসার লম্বা বেঞ্চের দিকে হেঁটে যান। জসওয়ান্তের ছেলেকে গাছ থেকে টেনে নামিয়ে আনা এবং পিটুনি দেয়া দাদাজির মন খারাপের কারণ। তবে অনেকেই হয়তো একে পিটুনি বলবে না- পাছায় গুটিকয়েক থাপ্পর এবং গালমন্দ করা।

গ্রামে আসার পর থেকে বান্টি একটা না-একটা কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকে- সব সময় দুষ্টুমি করে সে ছলচাতুরির ফাঁদ পাতবে, নতুবা কারোর সঙ্গে মারামারি করবে। কিছুতেই স্থির থাকতে পারে না। এই তো সেদিন গ্রামের বিরুর সঙ্গে মিলে সে পুকুরের পানিতে মাটির ঢিল ছুঁড়ে খেলছিল। এ খেলা সে কখনও শহরে শিখতে পারতো না। একমাত্র গ্রামের পুকুরের শান্ত পানির ওপর নির্দিষ্ট কায়দায় সজোরে ঢিল ছুঁড়লে লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে পারে, যা উত্তাল সমুদ্রের পানিতে সম্ভব নয়। হালকা ও সমতল মাটির ঢিল অথবা মাটির কলসের মাথার দিকে গোলাকার মসৃণ ভাঙা অংশ পানিতে বিশেষভাবে ছুঁড়ে মারলে তা ডুবে যাবার আগে তিন-চার বার লাফিয়ে চলে। এটা এক ধরনের খেলা। আত্মগরিমা নিয়ে বিরু ঘোষণা করেছে, সে ঢিল ছুঁড়লে ডুবে যাবার আগে পানির উপর ঢিল নিদেন হলেও পাঁচ বার, কখনও ছয় বার, এমনকি সাত বারও লাফ দেবে। বান্টি মনে মনে ফন্দি আঁটে। সে মাটির পাত্র ভাঙে এবং ভাঙা টুকরো নিয়ে বিরুর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। মাটির টুকরোগুলো খুবই মসৃণ। তাই সে ভেবেছিল টুকরোগুলো পুকুরের অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারবে।

বিরু ধোপার ছেলে। প্রতিদিন সে ময়লা কাপড় নেয়ার জন্য আসতো। ভাঙা বাসনের রহস্য উদঘাটনের জন্য দাদাজিকে যে ক’জন সাহায্য করেছে তাদের মধ্যে সে ছিল একজন। বান্টিকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার জন্য দাদাজি বলেন, ‘এই ছেলে, ঢিল ছুঁড়ে খেলার জন্য চীনামাটির বাসন ভাঙার প্রয়োজন নেই।’
দাদাজির কানে বিষয়টি তোলার পেছনে কে সেই বিশ্বাসঘাতক, তা বুঝতে পারা বান্টির জন্য মোটেও কোনো কঠিন কাজ ছিল না। সে ধাক্কা দিয়ে বিরুকে লেকের পানিতে ফেলে দিয়েছিল। বিরু গ্রামের ছেলে- সে ঠিকই সাঁতার কেটে লেকের পাড়ে উঠে এসেছিল। কিন্তু বান্টি সাঁতার জানে না, এমনকি কম পানিতেও পা নেড়ে ভেসে থাকতে পারে না। হট্টগোলের মাঝে সে নিজেই পানিতে পড়ে যায়। অনেক কষ্ট করে সে নিজেকে পানিতে ভাসিয়ে রাখে এবং কোনো রকমে ডুবে যাওয়া থেকে আত্মরক্ষা করে। কিন্তু সকাল বেলা থাপ্পর খাওয়ার জন্য বান্টি দাদাজির ওপর রাগান্বিত। আজকাল চিঠিপত্র আদান-প্রদানের মাধ্যমে কেউ যোগাযোগ রক্ষা করে না। বাবার জন্য জসওয়ান্তু বাড়িতে টেলিফোনের সংযোগ এনেছে। বান্টি বাবাকে ফোন করে। বাবা যেন আসে এবং শীঘ্রই তাকে নিয়ে যায়। গ্রামে থাকা অনেক হয়েছে। তাই ছুটির বাকি দিনগুলো সে শহরেই কাটিয়ে দিতে চায়।

দাদাজি চিন্তিত এবং তার মন সামান্য খারাপও। এটা সত্য যে, যখন কারোর নিজের সন্তান জন্মগ্রহণ করে, তখন বাবা-মার প্রতি রক্তের টান কিছুটা শিথীল হয় এবং নিজের সন্তানের সঙ্গে বন্ধন আরো বেশি দৃঢ় হয়। কিছুতেই জসওয়ান্ত স্মরণ করতে পারে না, কখন সে খালি পায়ে বৃষ্টিতে বাইরে যেতে চেয়েছিল এবং তার জন্য সে বকুনি খেয়েছিল। ‘যাও! প্রথমে বুট জুতা পড়ো!’ জসওয়ান্তকে কেউ চিৎকার করে কিছু বলুক, মা কখনই তা সহ্য করতে পারতেন না। বরং সবার অলক্ষ্যে তিনি ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে অন্যত্র চলে যেতেন।
যেকোন কিছুই ঘটতে পারতো...  কেমন করে তিনি জসওয়ান্তকে বলবেন যে, বৃষ্টির মধ্যে তার ছোট বোন খালি পায়ে বাইরে গিয়েছিল এবং পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়েছিল? তার ডান পা শুকিয়ে গিয়েছিল। দাদাজি সাক্ষী যে, পোলিও আক্রান্ত তার ছোট বোনকে বিয়ে দেয়ার জন্য বাবা-মা কতটুকু ঝামেলার মুখোমুখি হয়েছিল। বছরের পর বছর দাদাজি অসংখ্য স্মৃতি জমিয়েছেন এবং সেসব স্মৃতির প্রতিটি ঘটনা জট খুলে তৈরি করতে পারে আরেকটা নতুন ঘটনা। এখন যদি কেউ অন্যের সঙ্গে কোনো স্মৃতি ভাগাভাগি কিংবা আলাপ-আলোচনা না করে, তাহলে কিসের জন্য তারা আছে? এটা কী তাহলে বুড়ো এবং বুদ্ধিমান হওয়া নয়?

বাবার বয়স নিয়ে জসওয়ান্ত চিন্তিত। বাবা যখন বরোদা ব্যাঙ্ক থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন, তখন সে গ্রামের পারিবারিক পুরনো বাড়িঘরের কথা স্মরণ করেছিলেন। স্কুলে পড়াশোনা করার সময় জসওয়ান্তই বলেছিল, তারা গ্রামের বাড়ি রেখে দেবে, যেন ভবিষ্যতে নাতি-নাতনি এসে দাদাজিকে দেখতে পারে। কিন্তু এখন সেই বাড়িতে কেউ বসবাস করে না।

‘আপনি কেন যান না এবং নিজের চোখে দেখে আসেন না?’ জসওয়ান্ত বলেছিল। ‘সেখানে যা কিছু মানাবে, তাই করুন- সংস্কার করুন, বিক্রি করুন যা খুশি। যাহোক, অবসরকালীন ভাতা দিয়ে শহরে বসবাস করা আপনার জন্য সহজ হবে না। এখন বান্টি স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে এবং খরচ অনেক বেড়ে গেছে।’ দাদাজি বুঝতে পেরেছেন ছেলের না-বলা কথা। কিন্তু বান্টির সঙ্গে তার স্নেহ-মমতার বন্ধন অনেক গভীর হয়েছে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে তিনি নাতির সঙ্গে অফুরন্ত সময় কাটিয়েছেন। দাদা এবং নাতির মধ্যে গল্প কথকতার একটা নিবীড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। গল্প বলার মাধ্যমে তারা একজন আরেকজনের সান্নিধ্য উপভোগ করে। বান্টি ক্রিকেট নিয়ে গল্প করতো এবং দাদাজি দুঃসাহসিক অভিযানের কাহিনী বলতেন। দ্বিতীর বার যখন জসওয়ান্তের স্ত্রী গর্ভবতী হয়, দাদাজি গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। তার মনে আত্মবিশ্বাস কমে গিয়েছিল। কিন্তু গ্রামে ফিরে আসতেই সেই ভাঙা হৃদয়ে পুনরায় আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে এবং মন প্রফুল্ল হয়, যেমন করে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসে পল্লবিত হয় এবং শেকড় গজায়। স্মৃতির সবগুলো দরজা যেন বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মতো খুলে যায়। তিনি তার দাদাজির সঙ্গে সময় কাটানোর স্মৃতি স্মরণ করা শুরু করেন। সত্যি বলতে কি, বড় হওয়ার সময়ে তিনি আত্মীয়-স্বজন থেকে যেটুকু স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছেন, তার নিজের সন্তানেরা সেটুকু পায়নি। তার বাবা চার কস পথ হেঁটে মাদ্রাসায় যেতেন। তিনি নিজেও সাইকেল চালিয়ে হাই স্কুলে গিয়েছেন। এছাড়া তিনি যখন কলেজের ছাত্রাবাসে থাকতেন, তখন প্রতি মাসে বাড়িতে তৈরি ঘি এবং পিনি নিয়ে দাদাজি তাকে দেখতে আসতেন। গ্রামের বাড়িটা তার দাদা নির্মাণ করেছিলেন। তিনি দেখেছেন কীভাবে বাড়িটার পরিবর্তন হয়েছে। সব সময় পুনঃনির্মাণের কাজ লেগে থাকতো। কখনো তার দাদা কিংবা বাবার মাধ্যমে ঘরের সঙ্গে কোন নতুন কক্ষ বা বারান্দা যুক্ত হতো। তিনি যখন কলেজে পড়াশোনা করেছেন, তখন কংক্রিটের ছাদ করা হয়েছিল। নতুন তৈরি বারসাতিতেই তিনি সিগারেটের প্রথম স্বাদ নিয়েছিলেন এবং সেখানেই ধরা পড়েছিলেন। আচমকা মটকে যাওয়া তেঁতুল গাছের ঝুলে পড়া ডালাপালা ভেঙে তিনি নিজের হাতে ছাদ তৈরি করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সেই ছাদ দারুণ ভালোবেসেছিলেন। এছাড়া ছাদ থেকে নিচে নেমে আসা দেয়ালের পাইপ দিয়ে তিনি নিচে নেমে এসে প্রেয়সীর সঙ্গে দেখা করতেন।

জসওয়ান্তের পালিয়ে গিয়ে দেখা করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তিনি যখন প্রেমে পড়েছিলেন, তখন একদিন মেয়েটিকে সঙ্গে করে বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন এবং মায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি সেই মেয়েটিকে ভালোবাসেন এবং তাকে বিয়ে করার ইচ্ছের কথাও প্রকাশ করেছিলেন। সেই ছিল পুরো ঘটনা। হ্যাঁ, তবে তার প্রতি চিৎকার-চেঁচামেচিও করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও দাদাজি মনে করতে পারেন না, তিনি কবে জসওয়ান্তের গায়ে হাত তুলেছিলেন। তাহলে আজ কেমন করে তিনি বান্টির উপর হাত তুলতে পারলেন?

জসওয়ান্তের আসার পর থেকে বান্টি আরো বেশি দূরত্ব বজায় রেখেছে। দাদাজির সঙ্গে কথাবার্তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। ধীরে ধীরে জসওয়ান্ত বান্টিকে বুঝাতে চেষ্টা করে, কিন্তু বান্টি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সকালে যখন তারা চলে যাচ্ছিল, তখন জসওয়ান্ত বান্টিকে বললো, ‘যাও, দাদাজির পা ছুঁয়ে বিদায় নিয়ে আসো।’
বান্টি মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। দাদাজি বান্টির কাছে এগিয়ে যান এবং আলতো হাতে বান্টির চুল এলোমেলো করেন। অশ্রুতে তাঁর চোখ ভরে যায়।

‘তাহলে তুমি আমার সঙ্গে কথা বলবে না?’

‘না, কখনও না।’

‘কেন?’

‘গাছ থেকে নামিয়ে কেন আমাকে মেরেছিলেন?’

‘আমি তো তোমাকে মারিনি, দাদাভাই। আমি অন্য কাউকে মেরেছি।’

বান্টি দাদাজির অশ্রুভেজা চোখের দিকে তাকায়।

‘হ্যাঁ, দাদাভাই ... শোনো, আমি সেই ছেলেটিকে মেরেছি যে অনেকদিন আগে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে পা ভেঙেছিল। এদিকে তাকিয়ে দেখ...’  বলেই দাদাজি লম্বা বেঞ্চের উপর বসে প্যান্টের নিচের অংশ উপরে তোলেন এবং বান্টিকে হাঁটুর নিচের ক্ষতচিহ্ন দেখান।

‘দেখ, সেই সময় আমি তোমার বয়সী ছিলাম। আমার দিকে তাকিয়ে দেখ, আজও আমি কেমন করে খোঁড়া হয়ে হাঁটাচলা করি।’

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দাদাজি ছেলে এবং নাতির সঙ্গে অপেক্ষারত ট্যাক্সির দিকে যান।

 

পাদটীকা

মূল গল্পে কোনো পাদটীকা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের পাঠক-পাঠিকাদের কথা বিবেচনা করে কয়েকটি অপরিচিত শব্দের ব্যাখ্যা পাদটীকা হিসাবে জুড়ে দেয়া হলো:

১.কস: দূরত্ব মাপার এক ধরনের একক, যা বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মাপের হয়     

২. পিনি: এক ধরনের পাঞ্জাবি এবং উত্তর-ভারতীয় খাবার, যা শীতকালে মিষ্টান্ন হিসাবে খাওয়া হয়

৩. বারসাতি:  ছাদসহ ছোট ঘর অথবা বাইরের দিকে বারান্দাসহ এক কক্ষবিশিষ্ট সারিবদ্ধ বাড়ি। সাধারণত এ ধরনের ঘর আলাদা হিসাবে সাবলেট দেয়া হয়

লেখক পরিচিতি

ভারতের প্রথিতযশা গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, কবি, ছোটগল্প লেখক এবং ঔপন্যাসিক গুলজার। তাঁর আসল নাম সাম্পুরাণ সিং কারলা । তৎকালীন অখণ্ড ভারতের পাঞ্জাব (বর্তমানে পাকিস্তানে) প্রদেশের ঝিলাম জেলার দিনা শহরে তিনি ১৯৩৪ সালের ১৮ অগাস্ট জন্মগ্রহণ করেন। মূলত হিন্দি, উর্দু এবং পাঞ্জাবি ভাষায় সাহিত্য রচনা করলেও ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় লেখালেখি করেন। ‘টু’ তাঁর একমাত্র উপন্যাস, যা ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পরে শরণার্থীদের করুণ কাহিনী নিয়ে রচিত। তিনি তিনটি কাব্যগ্রন্থ এবং দুটি ছোটগল্প সংকলন রচনা করেন।
গুলজারের কর্মজীবন শুরু হয়েছে সংগীত পরিচালক হিসেবে। পরবর্তী সময়ে তিনি গীতিকার, চিত্রনাট্যকার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেন। গীতিকার হিসাবে তিনি ২০০৪ সালে পদ্ম ভূষণ এবং ২০০২ সালে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারসহ একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন। ‘স্লামডগ মিলনিয়র’ চলচ্চিত্রের গান ‘জয় হো’ রচনার জন্য তিনি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড এবং গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডও অর্জন করেছেন।

গল্পসূত্র

‘দাদাজি’ গল্পটি গুলজারের ইংরেজিতে অনূদিত একই শিরোনামের গল্পের অনুবাদ। হিন্দী থেকে গল্পটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন সঞ্জয় শেখর। গল্পটি লেখকের ‘হাফ এ রুপি স্টোরিজ’ ছোটগল্প সংকলন থেকে নেয়া।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জুন ২০১৮/তারা 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়