ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

খালের নাম বামনশাহী

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খালের নাম বামনশাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : খালের নাম বামনশাহী। চট্টগ্রামের চাঁন্দগাঁও থানা এলাকা দিয়ে প্রবাহিত এ খালটি বর্তমানে  মৃতপ্রায়।

এক সময়ের স্রোতস্বিনী বামনশাহী এখন চট্টগ্রাম নগরীর অন্তত দুই লক্ষাধিক মানুষের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। দূষিত পানির দুর্গন্ধ আর মশার উৎপাতে খালের দুই তীরে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের বসবাসই অসহনীয় হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এ দুর্ভোগ চললেও খালটি খনন কিংবা দূষণ রোধে কোন পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি।

স্থানীয়রা জানান, বামনশাহী খালের উৎপত্তি চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন এলাকা থেকে। এটি নগরীর বিভিন্ন এলাকা হয়ে চান্দগাঁও ও মোহরা দিয়ে কর্ণফুলী নদীর সাথে সংযুক্ত হয়েছে।

একসময় বামনশাহী খাল ১০০ থেকে ১৫০ ফুট প্রশস্ত ছিল। ভরাট ও দখল হতে হতে প্রশস্ততা এখন ৬০ থেকে ৮০ ফুটে দাঁড়িয়েছে। পুরো খাল দিয়েই এখন বর্জ্য পদার্থ প্রবাহিত হওয়ার ফলে খালে কোন স্বচ্ছ পানির দেখাও মিলেনা। দূষিত কালো পানি ছাড়া এই খালে আর কিছুই দেখতে পাননা এলাকাবাসী।

চট্টগ্রাম নগরীর বিশাল এলাকার বিশেষ করে অক্সিজেন ও কুলগাঁও এলাকার ট্যানারি ও বিভিন্ন শিল্প কারখানার দূষিত বর্জ্য পদার্থ এই খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। ব্যস্ত শহরের বর্জ্যে কর্ণফুলীর পানিও দূষিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় অধিবাসী আবদুর রহমান, নুরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর চৌধূরীসহ আরও অনেকে জানান, এই এলাকায় খালের পানির দুর্গন্ধে বাস করা যাচ্ছে না। আর খাল থেকে জন্মলাভ করা মশার আক্রমনেও অতিষ্ট এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানানো হলেও কোন উদ্যোগ নেই।

এলাকাবাসী জানান, চাঁন্দগাও থানার মোহরার চররাঙামাটিয়া এলাকার ব্রাহ্মণশাহ পাড়া (জেলে পাড়া) ও কালুরঘাট জেলে পাড়ার জেলেরা এক সময় এই খালের মাছের ওপর নির্ভরশীল ছিল। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো এখানের জেলে সম্প্রদায়। কিন্তু নব্বই দশকে দূষণ শুরু হওয়ার পর থেকে খালে মাছ মারা বন্ধ হয়ে যায়।

মাত্র ২৫ বছরের ব্যবধানে খালটি কি পরিমাণ দূষণ আর দখলের শিকার হয়েছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। নব্বই দশকেও এই খালের স্বচ্ছ পানিতে গোসল করতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। চলতো স্টিমার, নৌকা ও সাম্পানও। কিন্তু এখন সবই স্মৃতি।

মাত্র ২৫ বছরের ব্যবধানে মরে গেছে বামনশাহী খাল। এখন মাছ মারা দূরের কথা উল্টো দুষণের দুর্গন্ধে খালের পাড়ে দাঁড়ানো যায় না।

বামনশাহী খালের দূষণ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের নদী গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া জানান, নগরীর বিভিন্ন শাখা খালের দুষণের পানি বামনশাহী খালে পড়ছে। এই খালের পানি পড়ছে নদীতে। তাতে ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এই মুহূর্তে খালটি দূষণ ও দখলমুক্ত করা না হলে খালটি মরে গিয়ে আরও বিপর্যয় ডেকে আনবে। এই খালের দূষিত বর্জে কর্ণফুলী ও প্রাকৃতিক মৎস্য ক্ষেত্র হালদা নদীকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।



রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/রেজাউল করিম/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়