ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শিশু দাসের শ্রমেই চলছে বিড়ি শিল্প

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশু দাসের শ্রমেই চলছে বিড়ি শিল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক : দারিদ্র্যের ফাঁদে আটকা পড়া হাজার হাজার শিশুকে দাসের মতো খাটিয়েই দিনের পর দিন নিজেদের মুনাফা বাড়িয়ে চলেছে বাংলাদেশের বিড়ি শিল্প। 'International Journal of Behavioral and Healthcare Research' জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে সম্প্রতি এই চিত্রই উঠে  এসেছে।

‘Short-term (private) gains at the cost of long-term (public) benefits : child labour in bidi factories of Bangladesh’ শীর্ষক এই গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছে, কীভাবে বিড়ি মালিকদের মুনাফা জোগানের ব্যবস্থা করতে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদে গোটা দেশের ভবিষ্যৎই সংকটের মুখে পড়ছে। এছাড়া বিড়ি কারখানায় শিশু শ্রমিকদের অস্বাস্থ্যকর এবং অমানবিক কাজের পরিবেশ নিয়ে বিশদ পর্যবেক্ষণ রয়েছে এই গবেষণায়।

শৈশবের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে এবং জনস্বাস্থ্যের প্রতি চরম উদাসীনতা দেখিয়ে যে শিল্প চলছে, তা নিরুৎসাহিতকরণে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি তামাকপণ্যে বর্ধিত করারোপের প্রতি এই গবেষণায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞার ওই গবেষণাপত্রে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, বিড়ি এবং অন্যান্য তামাকপণ্যে কর বাড়িয়ে ভোক্তা পর্যায়ে এগুলোর দাম বাড়িয়ে তুলতে হবে। কার্যকরভাবে করারোপের মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে যদি বিড়ির চাহিদা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা যায়, তাহলে বিড়ি কারখানাগুলো বাধ্য হবে নিজেদের উৎপাদন এবং বিনিয়োগ কমিয়ে আনতে।  উৎপাদন হ্রাসের ধারাবাহিকতায় হ্রাস পাবে বিড়ি কারখানাগুলোর শ্রমশক্তিও। এভাবে বিড়ির চাহিদা এবং সরবরাহ কমিয়ে আনার মাধ্যমে বিড়ি শিল্পে অমানবিক শিশুশ্রম ব্যবহরের কার্যকর সমাধান করা যেতে পারে। এছাড়া বিড়ি কারখানাগুলোতে শিশুশ্রম এবং শোষণের ব্যাপারে বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ এবং নিয়ন্ত্রণ আরোপের ক্ষেত্রে সরকারের উদাসীনতার দিকেও আঙুল তুলেছে এই গবেষণাপত্র।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের যে জেলাগুলোতে প্রচুর পরিমাণে তামাক জন্মায় (বিশেষত রংপুর এবং লালমনিরহাট), সেখানকার দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারগুলোর শিশুদের সস্তাশ্রমের ওপর নির্ভর করেই টিকে আছে বিড়ি শিল্প।

স্থানীয় অধিবাসীদের হিসাবে, প্রতিটি বিড়ি কারখানার ৬০-৬৫ ভাগ শ্রমিকই বয়সে শিশু। লালমনিরহাট জেলায় দেখা গেছে, ২১ হাজার বিড়ি শ্রমিকের মধ্যে ১৫ হাজারই শিশু, যাদের বয়স ৪ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে।

উল্লেখ্য, ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬’ অনুযায়ী, ১৪ বছরের আগে কোনো শিশুকে কর্মে নিয়োগ দেওয়া অবৈধ।

শ্রমিকদের নিরাপত্তার প্রতি সীমাহীন অবজ্ঞা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিড়ি কারখানায় কাজ করা শিশু শ্রমিকদের প্রায়ই ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট, ঘন ঘন জ্বর, কাশি, মাথাব্যথা, তলপেটের প্রদাহ, ডায়রিয়া এবং পেশির ব্যথায় ভুগতে দেখা যায়। তামাকের গুঁড়োতে ভর্তি থাকা কারখানার বাতাস থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য কোনো ধরনের সুরক্ষামূলক গ্লাভস কিংবা মাস্ক দেওয়া হয় না। বিড়ি কারখানায় কাজ করতে আসা নারীরা প্রায়ই সাথে করে তাদের শিশুসন্তানদের কারখানায় নিয়ে আসেন।

রংপুরের এক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানকার শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের প্রায় ৮০ ভাগই বিড়ি কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন বা একসময় কাজ করেছেন।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বর্ধিত করারোপের মাধ্যমে বিড়ির চাহিদা হ্রাস করা, বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ, ব্যাপক পরিসরে প্রচারণা চালানো, স্কুলে শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে উপবৃত্তির ব্যবস্থা, বিড়ি শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থা এবং জীবনমানের উন্নয়ন করার সুপারিশ করা হয়েছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ এপ্রিল ২০১৮/সাওন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়