ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

পিন্টুর স্বীকারোক্তি : যেভাবে হত্যা করা হয় প্রবীরকে

হাসান উল রাকিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৫ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পিন্টুর স্বীকারোক্তি : যেভাবে হত্যা করা হয় প্রবীরকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ : বন্ধকী স্বর্ণ আত্মসাতের ইচ্ছা ও এক ব্যক্তির কুপ্ররোচনায় পরিকল্পিতভাবে প্রবীর চন্দ্র ঘোষকে হত্যা করেছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে খুনি পিন্টু দেবনাথ।

প্রবীর হত্যা মামলার প্রধান আসামি পিন্টু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ বাথরুমের ভেতরে নিয়ে সাত টুকরা করে বাজারের ব্যাগের বস্তায় ভরে ভাড়া বাসার সেফটি ট্যাংকে ফেলে দিয়ে লাশ গুমের চেষ্টা চালায়।

শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতের খাসকামরায় এ জবাববন্দি রের্কড করা হয়। দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত র্দীঘ সাত ঘণ্টা ধরে প্রবীর চন্দ্র ঘোষ হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় পিন্টু।

হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মফিজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আদালতে দেওয়া আসামি পিন্টু দেবনাথের জবানবন্দির বরাত দিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মফিজুল ইসলাম জানান, তিন মাস আগে আসামি পিন্টু দেবনাথ প্রবীর চন্দ্র ঘোষকে হত্যার পরিকল্পন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সুযোগ খুঁজতে থাকে। ঈদের সময় লোকজনের আনোগোনা কম এবং বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার সময় নিরিবিলি সময়কে বেছে নেয় খুনের জন্য।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৮ জুন রাত সাড়ে ৯টয় প্রবীর চন্দ্র ঘোষকে মোবাইলফোনে নগরীর বালুর মাঠের বাসা থেকে ডেকে এনে নগরীর আমলাপাড়া এলাকার পিন্টু ঘোষের ভাড়া বাসায় (১৫ কেসি নাগ রোডের রাশেদুর রহমান ঠান্ডুর বাড়ি) নিয়ে আসে। সেখানে তাকে স্প্রাইট, বিস্কুট খেতে দেয়। এ সময় তারা বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখছিল।

রাত ১০টার দিকে পিন্টু দেবনাথ রান্না ঘর থেকে চাপাতি নিয়ে প্রবীরের পেছনে মাথায় আঘাত করে। প্রবীর চন্দ্র ঘোষ বিছানায় লুটিয়ে পড়ে বাঁচার চেষ্টা করে। পিন্টু এলোপাথাড়ি আরো কয়েকটি আঘাত করলে প্রবীর নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে পিন্টু প্রবীরের বুকের ওপর উঠে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। লাশ গুম করার জন্য বাথরুমে নিয়ে সাত টুকরা করে বাজারের ব্যাগে ভরে সেফটি ট্যাংকের ভেতরে ফেলে দেয়।

উপপরিদর্শক মফিজুল ইসলাম আরো জানান, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী দেখা যায়, পিন্টুর দেবনাথের একক পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। পিন্টু স্বীকার করেছে যে, প্রবীর ঘোষের কাছ থেকে সে স্বর্ণ বন্ধক নিয়েছিল। ওই স্বর্ণের কিছু অংশ সে গলিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শনিবার সকাল ৯টায় পিন্টুর কালির বাজারের দোকানে তল্লাশি চালিয়ে পাঁচ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে।

মফিজুল ইসলাম জানান, প্রবীরের লাশ তিনটি ব্যাগে ভরে পাঁচ টুকরা সেফটি ট্যাংকে ফেলে এবং দুই পা আরেকটি ব্যাগে ভরে পাশের নর্দমায় ফেলে দেয়। রক্তমাখা চাদর, বালিশ ও পিন্টুর পরিহিত জামাকাপড় একটি ব্যাগে ভরে শীতলক্ষ্যা নদীর চারারগোপ (আলুঘাট) এলাকায় নদীতে ফেলে দেয়।

দীর্ঘ দিন পেরিয়ে যাওয়ায় এবং নদীর জোয়ার-ভাটার কারণে ওই আলামত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও প্রবীরের পায়ের স্যান্ডেল একটি ব্যাগে মুড়িয়ে বাসার সামনের ময়লার স্তূপে ফেলে দেয় পিন্টু। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ময়লার স্তূপ সরিয়ে নেওয়ায় চাপাতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ চাপাতিটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

এসআই মফিজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, পিন্টুর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে কুপ্ররোচনাকারী হিসেবে একজনের নাম এসেছে। তার নাম ও ঠিকানা যাচাই-বাছাই করে তাকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তবে এসআই ওই কুপ্ররোচনাকারীর নাম বলতে চাননি।

ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পিন্টু দেবনাথ ওই রাত থেকেই প্রবীরের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাথে প্রবীরকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। ঘটনাটি অপহরণ সাজানোর জন্য তার সহযোগী বাপেন ভৌমিকের দ্বারা কুমিল্লার চান্দিনা থেকে এক কোটি টাকার মুক্তিপণ চেয়ে পিন্টুর মোবাইলফোন থেকে খুদেবার্তা পাঠায় প্রবীরের বড় ভাইয়ের মোবাইল ফোনে। ওই মোবাইলের সূত্র ধরেই জেলা গোয়েন্দা পুলিশ বাপেনকে গ্রেপ্তার করে প্রবীরের মোবাইলফোনটি উদ্ধার এবং পিন্টু দেবনাথকে গ্রেপ্তার করে।

গত ৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টায় পিন্টুর ভাড়া বাসার সেফটি ট্যাংক থেকে প্রবীরের লাশ উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ১০ জুলাই পিন্টু দেবনাথকে পাচঁ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষ। ১৯ জুন তার বাবা ভোলা নাথ ঘোষ নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়রি করেন। লাশ পাওয়ার পরে নিহতের ছোট ভাই বিপ্লব চন্দ্র ঘোষ বাদি হয়ে অপহরণের পর হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।



রাইজিংবিডি/নারায়ণগঞ্জ/১৫ জুলাই ২০১৮/হাসান উল রাকিব/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়