ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

অভয়ারণ্য ঘোষণায় বিপাকে শরণখোলার ২০ হাজার মানুষ

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অভয়ারণ্য ঘোষণায় বিপাকে শরণখোলার ২০ হাজার মানুষ

বাগেরহাট সংবাদদাতা: সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ৭৩ শতাংশ বনকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়।  এ ঘোষণায় বিপাকে পড়েছে এ বনের ওপর নির্ভরশীল অন্তত ২০ হাজার  জেলে ও বাওয়ালী।

কোনো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে অভয়ারণ্য ঘোষণার  কারণে বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষ জীবিকার অভাবে গত তিন মাস ধরেই মানবেতর জীবনযাপন করছে।

উপজেলার বনসংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদী ও খালের পাশে জেলেদের মাছ ধরার নৌকাগুলো পড়ে আছে। কোনো কোনো নৌকা রাস্তায় উঠিয়ে রাখা হয়েছে। এ সময় কথা হলে চরপাড়া গ্রামের জেলে আল আমিন বলেন, ‘পনের বছর বয়স থেকেই সুন্দরবন থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছি। গত ৩ মাস ধরে বনের মধ্যে মাছ সংগ্রহ করতে যেতে পারছি না। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে চলছিলাম বেশ কিছুদিন। আমার উপর নির্ভরশীর পরিবারের চার সদস্য নিয়ে এখন খুবই সমস্যায় আছি। খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় দাদন হিসেবে নেওয়া ১লক্ষ ১৩ হাজার টাকা ফেরত নিতে প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছেন মহাজনেরা। কিভাবে টাকা ফেরত দিব তা ভেবে পাচ্ছি না।’

জেলে মামুন আকন বলেন, ‘সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ৭৩ শতাংশ অঞ্চল অভয়ারণ্য ঘোষণার পর ২৭ শতাংশ এলাকায় মাত্র ২শ’ থেকে ৩শ’ জন জেলে মাছ আহরণ করতে পারে। যার ফলে বেকার হয়ে পড়েছে অন্য জেলেরা। বর্তমানে সবাই অভাবের মধ্যে রয়েছে। অথচ চাঁদপাই রেঞ্জের মাত্র ১৮ শতাংশ এলাকাকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে বনবিভাগ। অভয়ারণ্য ঘোষণার পর বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে সপ্তাহখানেক দিনমজুরের কাজ করছিলাম। এক ছেলে এক মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে গেলাম। স্যাররা বললেন ভর্তি নেওয়া যাবে না। আপনারা এখানে এসেছেন কাজ করার জন্য আবার কখন চলে যাবেন। তাই আমরা ভর্তি নিতে পারব না। এরপর উপায়ন্তর না পেয়ে ফিরে এসেছি বাপের ভিটায়।’
 


তিনি অন্যান্য এলাকার মত শরণখোলা রেঞ্জের অভয়ারণ্যও কমিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

চালিতা বুনিয়া গ্রামের জেলে রেজাউল বলেন, ‘সুন্দরবন থেকে মাছ সংগ্রহ করে ভালভাবে জীবন চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বনে যাওয়া বন্ধ হওয়ায় খুবই বিপদে পড়েছি। কোরবানির ঈদে ছেলে মেয়েকে মাংস কিনে খাওয়াতে পারিনি। মহাজনের কাছে ৮০ হাজার টাকা দেনা।’ তিনিও সরকারের কাছে অভয়ারন্য কমিয়ে মাছ ধরার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।

শরণখোলা বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী জালাল মোল্লা বলেন, ‘মাছ আহরণের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে পাঠাতে গেলে দাদন দিতে হয়। ওই দাদনের একটি অংশ পরিবারকে দিয়ে জেলেরা সুন্দরবনে মাছ শিকারে যায়। এ অবস্থায় শতাধিক জেলের কাছে আমার প্রায় ২১ লক্ষ টাকা দাদন দেওয়া রয়েছে। আমার কাছেও আবার অন্য বড় কারবারীরা টাকা পাবে। গত তিন মাস ধরে ব্যবসা বন্ধ। দিশেহারা হয়ে পড়েছি।’

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু মুন্সি বলেন, ‘তিন মাস ধরে স্থানীয় জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছে। নতুন কর্মসংস্থানের জন্য কেউ কেউ ইতিমধ্যে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জামিয়েছেন। যারা আছে তারাও মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এ অবস্থা থাকলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের জেলেদের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে।’

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন  কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশ বন্যপাণী সংরক্ষণ আইন ১৯৭৪-এর ক্ষমতাবলে সুন্দরবন পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলের ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৬‘শ নিরানব্বই হেক্টর এলাকাকে বন্যপ্রাণী অভায়রণ্য ঘোষণা করা হয়। এ অবস্থায় সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল অনেকে বেকার হয়ে পড়েছেন। এসব বেকারদেরকে পুনর্বাসনের জন্য ৪শ ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প আসছে। যার মধ্যে ৫ বছর মেয়াদী লাইভলিহুড ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামে ২শ ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে বনজীবীদের পুনর্বাসনে। আশা করছি এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জেলেদের বেকার সমস্যার সমাধান হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮/আলী আকবর টুটুল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়