বিশ্বকাপ ১৯৯৬ : শ্রীলঙ্কার চমকে অবাক বিশ্ব
ইয়াসিন হাসান : দিন তারিখের হিসেব ফুরিয়ে আর মাত্র কয়েক দিন পরেই মাঠে গড়াবে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯। অংশগ্রহণকারী দশ দলের বেশ কয়েকটি এর মধ্যেই পা রেখেছে আয়োজক ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের মাটিতে। নতুন বিশ্বকাপে উন্মাদনায় ভেসে যাওয়ার আগে একবার ফিরে তাকানো যাক ১৯৯৬ বিশ্বকাপের দিকে।
রঙিন পোশাক, সাদা বল আর দিবারাত্রির ম্যাচ। ১৯৯৬ বিশ্বকাপ ক্রিকেটপ্রেমিদের চোখের সামনে এখনও ভেসে উঠে এ তিনটি কারণে। সেবার ক্রিকেটের মহাযজ্ঞে প্রথমবারের মতো তিনটি অধ্যায় যুক্ত হয়। বিশ্বকাপ আরও বেশি জমজমাট হয়ে উঠে এশিয়ায় আয়োজন করায়।
ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ততদিনে ক্রিকেটপাগল জাতি। মাঠ, মাঠের বাইরে ক্রিকেটের প্রসার এমনভাবে হয়েছিল যে এশিয়ার এই তিন দেশে ক্রিকেট ছাড়া অন্য কিছুই যেন চলত না। তাইতো বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচে গ্যালারি থাকত টইটুম্বুর। ঊনবিংশ শতাব্দির পরিচিত ব্র্যান্ড উইলস সেবার বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো পৃষ্ঠপোষক হয়। তাই বিশ্বকাপের নামকরণ হয়েছিল, ‘উইলস ওয়ার্ল্ড কাপ।’
প্রথমবারের মতো সেবার বিশ্বকাপে অংশ নেয় ১২টি দল। বিশ্বকাপে অভিষেক হয় কেনিয়া, নেদারল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এই বিশ্বকাপ। এশিয়ার সমর্থকরা শুরু থেকেই প্রত্যাশা করছিল, বিশ্বকাপ যেন তাদের ঘরেই থাকে। ভারত, পাকিস্তান পারেনি। পেরেছিল শ্রীলঙ্কা।
প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কা ঘরে তোলে বিশ্বকাপ। তবে শ্রীলঙ্কার কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যাত্রা নিয়ে ছিল সমালোচনায় বিদ্ধ! যদিও তাদের কিছুই করার ছিল না। বিশ্বকাপের মাত্র এক মাস আগে তামিল টাইগার্স শ্রীলঙ্কায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বোমাবর্ষণ করে। ওই ঘটনার জের ধরে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ শ্রীলঙ্কা সফর করতে অস্বীকৃতি জানায়।
আইসিসি দুই ম্যাচেই শ্রীলঙ্কাকে বিজয়ী ঘোষণা করে। তাতে কোয়ার্টার ফাইনালে সহজেই নাম লিখায় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। তবে ওই দুই ম্যাচে মাঠে নামার আগে শ্রীলঙ্কা জিতে গেলেও যেই তিনটি ম্যাচে তারা খেলেছিল তিনটিতেই তারা জিতেছিল। কোয়ার্টার ফাইনালে পূর্ণ ১০ পয়েন্ট নিয়েই উঠে রানাতুঙ্গার দল। অন্যগ্রুপ থেকে ভারত ও পাকিস্তানও উঠে কোয়ার্টার ফাইনালে।
ক্রিকেটের দুই পরাশক্তি শেষ চারের লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়। তাতে ভারত শেষ হাসিটা হাসলেও পারেনি পাকিস্তান। ৩৯ রানের জয়ে ভারত পায় সেমিফাইনালের টিকিট। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেট হারিয়ে যায় সেমিতে। সেমিতে ভারত ও শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক ম্যাচটি হয় ইডেন গার্ডেনসে। ভারতীয় সমর্থকরা ধরেই নিয়েছিল ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ভারত খেলবে ফাইনাল।
বিশেষ করে ভারত যখন ২৫২ রানের লক্ষ্য পায় তখন ভারতজুড়ে উৎসব শুরু হয়েছিল। পাশাপাশি শচীনের ব্যাট চলছিল যুদ্ধের ময়দানের রাজাদের মতো। ৬৫ রান করে ফেলেছিলেন দ্রুত। কিন্তু তার আউটের পর সব ওলটপালট। ৯৮ থেকে ১২০ রানে যেতে ভারত হারায় ৬ উইকেট। শ্রীলঙ্কার জয় তখন সময়ের ব্যাপার। এ সময়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠে গোটা ইডেন। আগুন জ্বালিয়ে ঘরের ছেলেদের পারফরম্যান্সের প্রতিবাদ করে সমর্থকরা। শ্রীলঙ্কা এমন পরিস্তিতিতে ম্যাচ খেলতে অস্বীকৃতি জানায় এবং ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড তাদের জয়ী ঘোষণা করে।
আরেক সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ৫ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে উঠে ফাইনালে। সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার জয়ের রাজা অরবিন্দ ডি সিলভা ফাইনালেও ছিলেন জয়ের নায়ক। পরপর দুই ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি তুলে শ্রীলঙ্কাকে প্রথম বিশ্বকাপের স্বাদ দিয়েছিলেন এ ক্রিকেটার। লাহোরের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ২৪১ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ডি সিলভার ১০৭, গুরুসিনহার ৬৫ ও রানাতুঙ্গার ৪৭ রানে ইতিহাস গড়ে লঙ্কানরা।
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন সনাৎ জয়াসুরিয়া। ‘মাতারার হ্যরিকেন’ ৬ ম্যাচে ২২১ রান ও ৭ উইকেট নিয়েছিলেন জয়াসুরিয়া। টুর্নামেন্টে সবথেকে বেশি রান করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার (৫২৩)। বোলিংয়ে ছিল ভারতের আধিপত্য। অনীল কুম্বলে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। ১৫ উইকেট নিয়েছিলেন এ লেগ স্পিনার। সবকিছুতেই ভারতীয়দের আধিপত্য থাকলে শেষ হাসিটা হেসেছিল শ্রীলঙ্কা।
সিংহের দেশ সেবার অবাক করেছিল গোটা বিশ্বকে। পৃথিবী চেয়ে দেখেছিল রানাতুঙ্গা, ডি সিলভা, জয়াসুরিয়াদের বিজয় উৎসব।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ মে ২০১৯/ইয়াসিন/আমিনুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন