জানুয়ারির মধ্যে নিউ ইয়র্কের আদালতে মামলার সিদ্ধান্ত
বিশেষ প্রতিবেদক : আগামী জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া রিজার্ভের টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে নিউ ইয়র্কের আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে সেখানকার প্রতিষ্ঠিত চারটি ল ফার্মের কাছ থেকে প্রাকযোগ্যতা তথ্য চাওয়া হয়েছে। এদের মধ্য থেকে একটি ল ফার্মকে মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
রোববার সকালে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বেশ কযেকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ফিলিপাইন থেকে আরো ২৮ মিলিয়ন ডলার ফেরত আসার একটি সম্ভাবনা রয়েছে। ওই অর্থ পাওয়া গেলে মামলা নিয়ে অন্যভাবে চিন্তা করা হবে। তবে আপাতত ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এবং ফিলিপাইনের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্ক আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
তিনি বলেন, যেহেতু জানুয়ারির মধ্যেই মামলা করতে হবে সেজন্য নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক সব কাজ সম্পন্ন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসির সঙ্গে পরামর্শ করে জানুয়ারির মধ্যে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নিউ ইয়র্কে ল ফার্ম নিয়োগ এবং তাদের কাছ থেকে সেবা নেওয়ার মূল্য পরিশোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা চারটি ফার্মের প্রাকযোগ্যতা যাচাই করে একটি ফার্মকে নিয়োগ দেব। তাদের সেবামূল্য পরিশোধের দুটি উপায় আপাতত চিন্তা করা হয়েছে, যেটি আমাদের জন্য লাভবান হবে আমরা সেটাই গ্রহণ করব। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা। অপরটি হচ্ছে, উদ্ধারকৃত অর্থের একটি অংশ তাদের পরিশোধ করা হবে।
তিনি বলেন, উদ্ধারকৃত অর্থের শতকরা একটি অংশ আইনজীবীদের সেবামূল্য দেওয়াটাই আমাদের জন্য বেশি উপযোগী হবে বলে মনে হচ্ছে। কোনো কারণে মামলার ফলাফল আমাদের বিপক্ষে গেলে আমাদের আর্থিক ক্ষতি কম হবে। তবু অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এখন পর্যন্ত মামলার ফলাফল আমাদের পক্ষে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। কারণ, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে আমরা আমাদের অর্থ আমানত হিসেবে রেখেছিলাম। এ দায় তারা কোনোভাবে এড়াতে পারে না।
এর আগে গত ৩ মার্চ এক বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম ইউনুসুর রহমান, সিআইডির প্রতিনিধিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমরা আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি, মোকদ্দমা করব। এপ্রিল মাসের মধ্যেই করব। মামলাটি হবে নিউ ইয়র্কে।’
তিনি বলেন, আমাদের সংস্থাগুলোর তদন্ত চলছে। সিআইডিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলেই মামলার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
মামলা পরিচালনার জন্য নিউ ইয়র্কে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, মামলার করার জন্য এখনো ল ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে নিউ ইয়র্কেই ল ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হবে। সেখানে বাঙালি আইনজীবীরাও রয়েছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
সে সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেছিলেন, এপ্রিলের মধ্যে নিউ ইয়র্কে রিজার্ভ চুরির মামলা করা হয়তো সম্ভব হবে না। মামলার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এখনো সম্পন্ন হয়নি। বিশেষ করে সিআইডি যে তদন্ত করছে, সে তদন্তের প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। মামলায় এ প্রতিবেদনের প্রয়োজন হবে। তবে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মামলা করার সুযোগ আছে। তার আগেই মামলা করা হবে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ফেরত আসে। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার এখনো ফেরত আসেনি। আর এই ডলার উদ্ধারের জন্য ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ আগস্ট ২০১৮/হাসনাত/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন