শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা : এফবিসিসিআই

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।

রোববার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন লিখিত বক্তব্যে জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে চলছে পরিবহন ধর্মঘটও। এ কারণে অনেক বিদেশি ক্রেতা তাদের বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছে। একই সঙ্গে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় আবারও মূল্যস্ফীতি বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দল-মত নির্বিশেষে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আমরা প্রথম থেকেই নৈতিকভাবে সমর্থন করে আসছি। আন্দোলনের বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে সমর্থন দিয়ে সরকার ছাত্রদের সমস্ত দাবি সুরাহা করার জন্য সম্ভাব্য বেশকিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আইন প্রণয়নসহ আরো কঠোরভাবে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং এ আন্দোলন থেকে উদ্ভূত পরিবহন ধর্মঘটের কারণে দেশের জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক বিবেচনায় যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমরা ব্যবসায়ী সমাজ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও পরিবহনকে ব্যাহত করে এমন কোনো ধরনের ধর্মঘট বা আন্দোলনকে সমর্থন করিনি এবং আগামীতেও করব না। বিশেষ করে, এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দূরপাল্লার যানবাহন ভাঙচুর এবং আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে সহিংসতা ঘটেছে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি সমুন্নত রাখা, রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখতে, বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে আমরা বিভিন্নভাবে উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা নিয়েছি।

এ পরিস্থিতিতে পরিবহন ধর্মঘট বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং দেশের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও জানান তিনি।

চলমান আন্দোলনে চট্টগ্রামসহ অন্যান্য সব বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে জানায় এফবিসিসিআই।

আন্দোলনে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ জানতে চেয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের উত্তরে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এ ধরনের আন্দোলনে দুই ধরনের ক্ষতি হয়। আর্থিক ও সুনামের ক্ষতি। তাজরীনের জন্য সুনামের যে ক্ষতি হয়েছিল, বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেও সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। সাধারণত হরতালে প্রতিদিন ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ ধরনের আন্দোলনে তো কিছু যানবাহন চলেছে, আবার কিছু চলেনি। তবে সংগঠনের পক্ষে এখনো ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়নি।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ী এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন সবার মনে দাগ কেটেছে। সরকারও দাবি মেনে নিয়েছে। কিন্তু এ ধরনের আন্দোলন যদি দীর্ঘমেয়াদী হয়, তখন এতে স্বার্থান্বেষী মহল ঢুকবেই। একটি মহল এখন ভুয়া খবর ছড়ানোর চেষ্টা করছে, গতকাল আমরা যা দেখেছি। তাই সবার প্রতি আহ্বান থাকবে, আমরা যেন এ ধরনের ফেক নিউজে বিভ্রান্ত না হই।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- এফবিসিসিআর সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহ-সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ, বিজিএমইএর প্রাক্তন সভাপতি আতিকুল ইসলাম এবং এফবিসিসিআইয়ের বিভিন্ন সদস্য সংস্থার প্রতিনিধিরা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ আগস্ট ২০১৮/নাসির/রফিক