ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৭, ১১ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে

দেশে বেকারত্বের হার বাড়ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে ক্রমশ। সম্প্রতি প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্টে (ডব্লিউইএফ) বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আগামীতে ১৫টি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ বা ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বেকারত্ব। আর এ বছরের মে-তে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) একটি জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যাতে বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা এখন ২৬ লাখ। বিবিএসের হিসেবে, উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি— নয় শতাংশ।

কয়েক বছর আগে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিশ্বে বাংলাদেশেই শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে বলা যাবে না। দেশে বেকারের সংখ্যা যে ব্যাপকহারে বাড়ছে তার কিছুটা নমুনা দেখা যায় সম্প্রতি যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে আয়োজিত চাকরি মেলায় আসা প্রার্থীদের ঢল দেখে।

তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে যাদের জ্ঞান বা কাজের অভিজ্ঞতা আছে, তাদের জন্যই এই মেলার আয়োজন ছিল। উদ্যোক্তাদের ধারণা ছিল তিন হাজারের মতো চাকরিপ্রার্থী আসতে পারেন। মেলায় চাকরিপ্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত দেখে সরাসরি কর্মী বাছাই করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু মেলায় আসা চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজারেরও বেশি। শেষ পর্যন্ত চাকরিপ্রত্যাশীরা নির্দিষ্ট বাক্সে জীবনবৃত্তান্ত রেখে চলে যান।

বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। এছাড়া গড় আয়ুও বেড়েছে। কিন্তু কর্মসংস্থানের জন্য যে বিনিয়োগ দরকার তাতে যথেষ্ট ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশে বর্তমানে নতুন শিল্প-কারখানা তৈরি হচ্ছে না। আর বেসরকারি উদ্যোগে শিল্প-কারখানা গড়ে না উঠলে কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান তৈরি হবে না। ফলে বেকারের সংখ্যা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।

ছোট এই দেশে জনসংখ্যার চাপ অনেক বেশি। তাই প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। একজন মানুষের অপরাধী হওয়ার সঙ্গে তার অর্থনৈতিক অবস্থার একটি সম্পর্ক রয়েছে। একজন শিক্ষিত যুবক সঠিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে না পারলে তার মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়। পারিবারিক ও সামাজিক উপেক্ষা একজন বেকার যুবকের, বিশেষ করে শিক্ষিত বেকার যুবকের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে। এর ফলে সে অপরাধমূলক কাজে জড়িত হয়ে পড়তে পারে।

কাজেই আমাদের উন্নয়ন কৌশলে কর্মসংস্থানকেই এক নম্বর অগ্রাধিকার করার পাশাপাশি তা যথাযথ বাস্তবায়নের প্রতি সরকারকে মনোযোগী হতে হবে। বেকার তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করতে পারলে উন্নয়নের সব পরিকল্পনাই মুখ থুবড়ে পড়বে। সরকারের শীর্ষমহল এবং শ্রম-শিল্প-কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে। সুতরাং বেকারত্ব হ্রাস ও কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে এখনই পদক্ষেপ নেয়া দরকার।

বেকারত্ব কমিয়ে আনতে হলে সুষ্ঠু বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি শিল্প-কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। দূর করতে হবে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো সংকট। শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান দীর্ঘসূত্রতা-জটিলতা দূর করতে হবে। স্বল্প সুদে দ্রুত ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি উদ্যোক্তারা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান তৈরিতে ভূমিকা রেখে সরকারের অংশীদার হিসেবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তারা যেন কোনো ধরনের হয়রানির মুখে না পড়েন, সেটাও নিশ্চিত করা দরকার।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ অক্টোবর ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়