ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পদ্মায় লঞ্চডুবি : মাদারীপুরে নিখোঁজ ২৯

দিলারা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৬ আগস্ট ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পদ্মায় লঞ্চডুবি : মাদারীপুরে নিখোঁজ ২৯

মাওয়ায় পদ্মা নদীতে লঞ্চডুবিতে স্বজনদের আহাজারি

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর : মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা নদীতে লঞ্চডুবিতে মাদারীপুরের ১১ গ্রামের ২৯ জন এখনো নিখোঁজ। আরো অনেক স্বজনের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজন হারানোদের খোঁজে এখনো পদ্মার পাড়ে ছুটছে নিখোঁজদের স্বজনেরা। স্বজনদের আহাজারিতে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে হৃদয়বিদারক আবহ। কিছুতেই থামছে না কান্নার রোল। বুকফাটা চিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ।

সোমবার সকালে কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে মাওয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া পিনাক-৬ লঞ্চটি আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়।  এ ঘটনায় মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের খালাসীকান্দি গ্রামের দুই বোন ইমা আক্তার (১৮) ও আফরোজা আক্তার (১৮) এখনো নিখোঁজ। এরা খালাতো দুবোন ঢাকা মতিঝিল আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছিল তারা। প্রমত্তা পদ্মায় লঞ্চডুবিতে নিখোঁজ হওয়ায় পরিবারে নেমে  এসেছে শোকের ছায়া। ইমার বাবা হায়দার চৌকিদার পদ্মার পাড়ে লাশের অপেক্ষায় প্রলাপ বকছেন।
 
শিবচরের বাঁশকান্দি ইউনিয়নের শিবপুরের নাওয়ারা গ্রামের সোহাগ খান (২৫), স্ত্রী বিথিকা (১৮) ও একমাত্র সন্তান সুজাতা (১), দত্তপাড়া ইউনিয়নের চর বাঁচামারা গ্রামের লুৎফর মোল্লা (৫৫), ভাতিজা, রুস্তম মোল্লা (৪০), সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের চর আড়িয়াল খাঁ গ্রামের লুৎফর মুন্সি (২০), ভাই সরোয়ার মুন্সি (১৮), মুন্সি কাদিরপুর গ্রামের স্বর্ণা (১৮), পাচ্চর গোয়ালকান্দা গ্রামের মিজানুর রহমান হাওলাদার (৩৫), স্ত্রী রোকসানা (৩০), মেয়ে মিলি (৭), ছেলে মঈন (৫), সন্ন্যাসীরচর দৌলতপুর গ্রামের ফরহাদ মাদবর (৩০), স্ত্রী শিল্পী (২২), ভাই বিল্লাল (১৮), ছেলে ফাহিম (১), মাদাবরেরচর উত্তর বাখরেরকান্দি গ্রামের তারা মিয়ার মেয়ে স্কুলছাত্রী শাহীনুর (১৩) ও ছেলে নূর আলম (১৫), একই ইউনিয়নের খাড়াকান্দি গ্রামের রুবেল মিয়া (২৬), স্ত্রী আফরোজা (২০), বড় বোন হালিমা (৩৫), ছোট ভাই রফিক (২২), সাড়ে ১১ রশি গ্রামের ইউসূফ মেম্বারের ছেলে আলকার (৩৩) নিখোঁজ রয়েছেন।

কালকিনি উপজেলার ডাসার ইউপি চেয়ারম্যান কাজী সবুজের স্ত্রী তিশা আক্তার ময়না (২৫), ছেলে তৌহিদ (১), মা হিরন নেছা (৬৫) ও শ্যালক সেনাসদস্য আল-আমীন সরদার নিখোঁজ রয়েছেন। আর সাঁতরে তীরে উঠতে পারায় প্রাণে বেঁচে যায় তার বড় ভাই স্বপন কাজী (৪৫) ও ভগ্নিপতি জাহিদ হাওলাদার (৩৩)। এ খবর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে পুরো এলাকায় মাতম চলতে থাকে। এরা সবাই ঢাকায় চিকিৎসাধীন চেয়ারম্যান কাজী সবুজকে দেখার জন্য ঢাকা যাচ্ছিলেন।

নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যরা পদ্মাপাড়ে ছুটে গেছেন। তাদের একমাত্র দাবি হারানো স্বজনের লাশ ফিরে পাওয়া।

কাওড়াকান্দি ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের আরো অনেক এলাকার মানুষ ছুটে যাচ্ছে পদ্মার পাড়ে। সবার চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা। অনেকে জানেও না আদৌ তাদের স্বজনরা ওই লঞ্চের যাত্রী ছিল কি না। যোগাযোগ না করতে পেরে শুধু সংবাদ শুনে চলে এসেছে স্বজনের খোঁজে।

শিবচরের গোয়ালকান্দা গ্রামের নিখোঁজ মিজানের বাবা নুরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ‘লঞ্চডুবির দুই দিন পেরিয়ে গেলেও আমার ছেলে, ছেলেবউ, নাতি-নাতনির কোনো খোঁজ পাই নাই। আমি সরকারি অনুদান চাই না। স্বজনদের লাশ চাই।’
 
মাদবেররচর উত্তর বাখরেরকান্দি গ্রামের তারা মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি আমার দুই ছেলে-মেয়ের লাশ নেওয়ার জন্য বসে আছি।’

 


রাইজিংবিডি/মাদারীপুর/৬ আগস্ট ২০১৪/দিলারা/এএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়