ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ফাগুনের বিষাদ হুমায়ুন ফরীদি

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৯, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফাগুনের বিষাদ হুমায়ুন ফরীদি

বিনোদন প্রতিবেদক : হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন বাংলাদেশের অভিনয়জগতের এক উজ্জ্বল তারা। আশি ও নব্বইয়ের দশকে যে ক’জন অভিনয়শিল্পী মঞ্চ ও টিভি নাটককে জনপ্রিয় করেছিলেন, হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন তাদের শীর্ষস্থানীয়। মঞ্চে, ক্যামেরার সামনে এমনকি দৈনন্দিন জীবনেও যার দাপুটে সাবলীলতা মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন করেছেন। নায়ক কিংবা খলনায়ক-সব চরিত্রেই সমান পারদর্শিতা দেখানো এই গুণী শিল্পী কাটিয়েছেন অভিনয়ের বর্ণাঢ্য জীবন। এ মানুষটি আর আমাদের মাঝে নেই। ফাগুনের রঙে বিষাদ ছড়িয়ে ২০১২ সালে চিরতরে চলে গেছেন তিনি। রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন হুমায়ুন ফরীদি।

নাটক, চলচ্চিত্র কিংবা মঞ্চ-সবখানেই ছিল হুমায়ুন ফরীদির অবাধ বিচরণ। ঢাকা থিয়েটারের ‘শকুন্তলা’, ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘কীর্তনখোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’-এর মতো মঞ্চনাটকে অভিনয় করে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সদস্য হিসেবে গ্রাম থিয়েটারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হিসেবে শুধু রাজধানীতে নয়, বিভিন্ন জেলার মঞ্চেও অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন।

মঞ্চের গণ্ডি পেরিয়ে টিভি নাটক আর চলচ্চিত্রেও স্বতন্ত্র অবস্থান গড়ে নেন হুমায়ুন ফরীদি। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘নীল নকশার সন্ধ্যায়’ ও ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’ নাটকে অভিনয় করে তিনি তাক লাগিয়ে দেন। তার অভিনীত ধারবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’ আজও দর্শকের স্মৃতির পাতায় ভাস্বর। এতে কানকাটা রমজান চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি। অন্য নাটকগুলোর মধ্যে আছে ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘বকুলপুর কতদূর’, ‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা’, ‘একটি লাল শাড়ি’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘কাছের মানুষ’। সর্বশেষ তিনি ‘তখন হেমন্ত’ নামে একটি ধারাবাহিক নাটক পরিচালনা করেন এবং ‘পূর্ণ চাঁদের অপূর্ণতায়’ নামের একটি নাটকে অভিনয় করেন।

তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’। প্রথম বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘সন্ত্রাস’। এছাড়া উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘মায়ের মর্যাদা’, ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ও ‘পালাবি কোথায়’। বাংলা চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে তিনি যোগ করেছিলেন এক নতুন মাত্রা। ‘সন্ত্রাস’ সিনেমায় প্রথম খল চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি ‘মাতৃত্ব’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ২০০৪ সালে।

হুমায়ুন ফরীদির জন্ম ১৯৫২ সালের ২৯ মে ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে ঢাকার নারিন্দায়। তার বাবার নাম এটিএম নুরুল ইসলাম, মায়ের নাম বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে ফরীদি ছিলেন দ্বিতীয়। ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে। একই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হন। কিন্তু পরের বছরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় খাতা-কলম বাক্সবন্দি করে কাঁধে তুলে নেন রাইফেল। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে দামাল ছেলের মতো লড়াই করেন ফরীদি।

স্বাধীনতার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তি হন। এখানেই তার অভিনয় প্রতিভার বিকাশ হয়েছিল। অর্থনীতির ছাত্র ছিলেন তিনি। কিন্তু সেলিম আল দীনের কাছে নাট্যতত্ত্বে দীক্ষা নেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই সদস্যপদ পান ঢাকা থিয়েটারের। এই নাট্যদল থেকেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে তার অভিনয়ের রঙগুলো। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নাট্য বিষয়ক সম্পাদক।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/রাহাত/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়