‘৫০০০ ট্যাকায় সবার পক্ষে কি ব্লেজার বানানো সম্ভব ?’
আহমদ নূর : ‘বিদেশ থেকে এসব ব্লেজার চট্টগ্রামে আসে, পরে ঢাকায় আসে। সেখান থেকে আমরা এগুলো লট হিসাবে কিনি, কম দামে বিক্রি করি। বাবা, পাঁচ হাজার ট্যাকা দিয়া কী সবের পক্ষে ব্লেজার বানানো সম্ভব? তাই অনেকে আইস্যা আমাগো কাছ থেকে ব্লেজার কিনে। দামে সস্তা কিন্তু সব ব্র্যান্ডের মাল আছে।’
কথাগুলো বলছিলেন বাদল শেখ নামের এক মৌসুমী পোশাক বিক্রেতা। শীতে রাস্তায় ফেরি করে কম দামে ব্লেজার বিক্রি করেন তিনি। তার সঙ্গে আরো অনেকেই শীতকে উপলক্ষ করে একই ব্যবসা করছেন।
বুধবার বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা। রাজধানীর গুলিস্তানে জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে ব্লেজার বিক্রি করছিলেন বাদল শেখ। এ সময় তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘টেইলার্সে একটি ব্লেজার বানাইতে গেলে পাঁচ/সাত হাজার ট্যাকা লাগে। কিন্তু সবার তো এতো সামর্থ নাই। আবার সবাইর তো ভাল কাপড় পরতে হবে। তাই আমরা এই ব্যবসা করি। এখান থেকে যা আয় হয় তাই দিয়া সংসার চালাই।’
বাদল শেখের বাড়ি বিক্রমপুরে। ব্যবসার জন্য তার ঢাকায় থাকা হয়। ব্যবসা করে যা আয় হয় তা দিয়ে ঢাকায় নিজে চলেন, পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতে থাকা পরিবারের কাছেও টাকা পাঠান। মূলত বাদলের আয়েই তার পরিবার চলে।
কথা প্রসঙ্গে বাদল জানান, তারা যেসব ব্লেজার বিক্রি করেন তা অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ইতালি, আফ্রিকা, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে বাংলাদেশে আসে। এগুলো মূলত অন্যের ব্যবহার করা। প্রথমে এগুলো চট্টগ্রামে আসে। পরে এগুলো ঢাকার মায়াকাঞ্চন নামের একটি জায়গায় আসে। সেখান থেকে তারা ব্লেজার সংগ্রহ করেন।
বাদল শেখ জানান, তিনি এবং অন্য যারা এই ধরণের ব্যবসা করেন তারা প্যাকেট হিসেবে ব্লেজার কেনেন। এক প্যাকেটে পাঁচ থেকে ১০টি ব্লেজার থাকে। প্রতিটি ব্লেজার ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। এতে তার কিছু লাভ থাকে। প্রতিদিন ১০/১৫টি ব্লেজার বিক্রি করতে পারেন। সব খরচ বাদে দিনে সাতশ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়।
বাদল শেখ বলেন, ‘প্রতিদিন যা বিক্রি করি তা থেকে বেশ লাভ হয়। কিন্তু কোনো কোনো সময় চালানে ডিফল্ট পোশাক যেমন, ময়লা, ছেড়া থাকে। তখন এগুলো বিক্রি করা যায় না। তাই কিছু ক্ষতি হয়ে যায়। তবে যখন ভাল চালান আসে তখন পুষিয়ে নেওয়া যায়।’
বাদল শেখের কাছ থেকেই ব্লেজার কেনেন আশরাফ আলম। কেনার আগে বেশ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেন ব্লেজারটি। পছন্দের পর গায়ে দিয়ে দেখেনও তিনি। সব ঠিক হওয়ার পর ৩৪০ টাকায় ব্লেজার কিনেন আশরাফ। এসময় তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক ভাল ব্লেজার পাওয়া যায়। শীতের সময় এগুলো খুবই কার্যকরী। ব্র্যান্ডের কোনো পোশাকের দোকানে একটি ব্লেজারের দাম সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা। সে তুলনায় এখানে ৩৪০ টাকা খুবই কম। কেনার পর তো মনে হচ্ছে ভালই হয়েছে। আগে একটু ঠাণ্ডা লাগছিল। এখন গরমই লাগছে।’
বাদল শেখ বলেন, ‘আমাদের বাড়তি পুঁজি নাই তাই কোথাও দোকান দিয়ে বসতে পারছি না। ঢাকায় অনেক দোকান আছে যেখানে আমরা যা বিক্রি করি তা তারাও বিক্রি করে। তফাৎ একটাই তারা দোকানে বসে বিক্রি করে। দামও বেশি নেয়। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কম দামে বিক্রি করি। অনেক কষ্টে কাস্টমারদের বুঝাতে হয়। তারপর বিক্রি করতে হয়।’ নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চ মধ্যবিত্তরাও তাদের কাছ থেকে ব্লেজার কেনেন বলে জানান বাদল শেখ।
শীতকে কেন্দ্র করে জমজমাট ফুটপাত বাজার
চলতি মাসের শুরুর দিক থেকেই দেশের সর্বত্র শীত অনুভূত হচ্ছে। ফলে শীতের দিনগুলোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন অনেকে। শীতে একটু উষ্ণতা পেতেই মানুষের যত প্রস্তুতি। এ জন্য শপিং মল থেকে শুরু করে ফুটপাত পর্যন্ত শীতের কাপড়ের দোকানে ভিড় বাড়ছে মানুষদের।
সম্প্রতি রাজধানীর নিউমার্কেট, দৈনিক বাংলা, গুলিস্তান, এলিফেন্ট রোড, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতে শীতের কাপড় কিনতে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন। এদের মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে নিম্ন মধ্য বিত্ত, মধ্য বিত্ত এমনকি উচ্চ মধ্যবিত্তরাও রয়েছেন। তারা বলছেন, কম দামে ভাল পোশাক কেনার জন্য তারা ফুটপাতে এসেছেন।
নিউ মার্কেটে রিকশা চালক ইসলাম উদ্দীন বলেন, ‘শীত চলে এসেছে। ছেলে-মেয়েদের একটু কষ্ট হয়ে যায়। এজন্য সন্তান, স্ত্রী ও নিজের জন্য তিনি শীতের পোশাক কিনছেন।
দৈনিক বাংলা মোড়ে ফুটপাত থেকে কম্বল কিনছিলেন একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আব্দুল আলীম। তিনি বলেন, ‘আগের বছরের তুলনায় এ বছর মনে হচ্ছে শীত একটু বেশিই পড়ছে। এজন্য আগেভাগেই কম্বল কিনে নিচ্ছি। কম দামে কম্বল কিনতে তাই ফুটপাতে এসেছি।’
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ নভেম্বর ২০১৭/নূর/শাহনেওয়াজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন