ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সুরের আলোয় আলোকিত তিনি

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ৩ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুরের আলোয় আলোকিত তিনি

মতিন মিয়া ওরফে বাঁশি মতিন, ছবি: আমিনুর রহমান হৃদয়

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : চোখের আলো নেই, সুরের আলোয় আলোকিত তিনি। মন খারাপ থাকলে বাঁশি বাজান। নাম মোহাম্মদ মতিন মিয়া হলেও, ক্যাম্পাসে তিনি বাঁশি মতিন নামেই পরিচিত। তার বাঁশির মধুর সুর শুনতে ভিড় জমায় ক্যাম্পাসের তরুণ-তরুণীরা।

মতিন মিয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পড়ছেন ইতিহাস বিভাগে। জাবির মওলানা ভাসানী হলের পুকুরের সিঁড়িতে বসে আড্ডা হয় বাঁশি মতিনের সঙ্গে। জানতে চাই সুরের প্রতি তার ভালোবাসার শুরুটা কিভাবে? মতিন মিয়া জানালেন, তার গ্রামের বাড়ি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার কাঞ্চাপুর উপজেলায়। সেখানের মানুষের মধ্যে প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানের একটা প্রভাব রয়েছে। তাই গ্রামের অন্যদের কাছে দেখে দেখে বাঁশির প্রতি প্রথম আগ্রহ।

মতিন মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নিঃসঙ্গতা দূর করতে বাঁশি বাজাই, জোছনা রাতে হলের ছাদে, পুকুর পাড়ে। আমাকে বাঁশি সবচেয়ে ভালো বুঝে। তাই বাঁশি বাজিয়ে আমি বেশি তৃপ্তি পাই।’

দৃষ্টিহীন হওয়ায় ছোটকাল থেকেই অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন মতিন মিয়া। মতিন মিয়া জানান, ছোটবেলায় তিনি খুব দুষ্ট ছিলেন। স্বাভাবিক অন্য দশজনের মতোই গাছে উঠতে পারতেন, সাঁতার কাটতে পারতেন। গাছে উঠে পাখির বাসা ভাঙতেন, একবার মৌমাছির কামড় খেতে হয়েছিল। একবার কারেন্টের পিলারে উঠে দুর্ঘটনায় শিকার হয়েছিলেন। এজন্য গ্রামের মানুষদের কাছে শুনতে হতো ‘আতুঁড় ল্যাংড়া কানা, পয়গাম্বরের দুশমন’। অন্ধ হওয়ায় গ্রামের ছেলেরা তাকে খেলায় নিতো না, তেমন বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনি কারো সঙ্গে। ফলে নিঃসঙ্গ জীবনে বাঁশি হয়ে উঠে তার পরম বন্ধু। পল্লীগীতি, লালন গীতির সুর তার বেশি প্রিয়।

বাঁশির সুরের পাশাপাশি পরে শিখে নেন হারমোনিয়াম, তবলা, একতারা, দোতারা। বাঁশির সুর এনে দিয়েছে মতিনকে ক্যাম্পাস তারকার খ্যাতি। প্রথম দিকে বন্ধুরা মতিন নামে ডাকলে, এখন সবার কাছে ‘বাঁশি মতিন’ নামেই পরিচিত। বাঁশি মতিনের পরিচিতি শুধু জাবি ক্যাম্পাসে সীমিত থাকেনি, তিনি ডাক পেয়েছেন অনেক জাতীয় প্রোগ্রামেও। ২০১৬ সালে হানিফ সংকেতের জনপ্রিয় ‘ইত্যাদি’ ঈদুল ফিতর প্রোগ্রামে ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটিতে তিনি বংশীবাদক ছিলেন। আইডিবি ভবনে স্মার্ট টেকনোলজিসের একটি প্রোগ্রামে এক ঘণ্টা একক বাঁশি বাঁজান, এ সময় দর্শকদের অনুরোধে অনেক গানের সুর তিনি বাজান। ২০১৬ সালে ইতিহাস বিভাগের পুর্নমিলনীতে জাতীয় সংগীত শুরু হয়েছিল মতিনের বাঁশির সুরে। বুয়েট, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবির একাধিক প্রোগ্রামে পরিবেশন করেছেন বাঁশির সুর।



বাঁশি মতিনের প্রিয় গান ‘ভেবে ছিলে এক গাল দাড়ি রেখে, আমি হয়ে যাবো শেষ। অথচ দেখ, তোমায় ভুলে এইতো, এই আছি বেশ।’

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করেন মিজানুর রহমান কিরন। তিনি মাঝে মধ্যেই জাবি ক্যাম্পাসে আসেন। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মতিনের দৃষ্টি শক্তি নেই, তবে বাঁশির সুরে যে প্রাণশক্তি ওর আছে, সেটা অতুলনীয়। আমি জাবি ক্যাম্পাসে আসলে মতিনের বাঁশির সুর কখনো মিস করি না।’

মওলানা ভাসানী হলের মালির কাজ করেন হেদায়েত উল্যাহ। তিনি বলেন, মতিন ভাই ভালো বাঁশির সুর তুলতে পারেন। উনার বাঁশির সুর শুনলে কাজ রেখে বাঁশির সুর শুনি।

তাঁরা বাঁশি, মোহন বাঁশি, ফেন্সি বাঁশি, খানদানি বাঁশি, ক্লাসিক্যাল বাঁশি, বেলুন বাঁশিসহ বাঁশি মতিনের সংগ্রহে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন সাইজের ১৬টি বাঁশি। মতিন জানান, বেশি দাম হওয়ায় কিছু বাঁশি তিনি কিনতে পারছেন না। হারমোনিয়ামও কিনতে পারেননি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ ডিসেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ