ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভিনদেশি বন্ধু

জর্জ হ্যারিসন : কনসার্ট ফর বাংলাদেশ

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০০, ৯ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জর্জ হ্যারিসন : কনসার্ট ফর বাংলাদেশ

ইয়াসিন হাসান : ১৯৭১ সাল। দেশ স্বাধীন করতে আমাদের দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করতে হয়েছে। পাকিস্তানিদের বর্বরোচিত হামলা, নিপীড়ন, দুর্দশা কাটিয়ে লাল-সবুজের জয় হয়েছিল। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান ৯৩ হাজার সৈন্যসহ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের। বাংলাদেশি না হয়েও এদেশের নিপীড়িত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন যারা, মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্নভাবে রেখেছেন অবদান, এমনকি অস্ত্র হাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রণাঙ্গণে লড়াই করেছেন, সেইসব ভিনদেশি বন্ধুদের নিয়ে বিজয়ের এই মাসে রাইজিংবিডি’র বিশেষ আয়োজন।

There never was a time when you or I did not exist. Nor will there be any future when we shall cease to be.  ধর্মগ্রন্থ গীতার এ উক্তিটি ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় গায়ক এবং গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসন ব্যবহার করেছিলেন তার শেষ অ্যালবাম ব্রেইনওয়াশড-এ। চিরস্থায়ী বলতে কিছু নেই। সব কিছুই একটা সময় হারিয়ে যাবে। কিন্তু ভালো কীর্তি থেকে যাবে আজীবন। জর্জ সেই কাজটাই করেছিলেন ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়। বাংলাদেশে যখন স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছিল, তখন জর্জ হ্যারিসন বাংলাদেশের কথা বিশ্ববাসীকে জানাতে কনসার্টের আয়োজন করেন। সেখানে তিনি ‘বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি গান গেয়ে শোনান। কনসার্টের নাম ছিল- কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। এ জন্যই জর্জ হ্যারিসন এত বেশি প্রিয় আমাদের কাছে।

 



নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে দুটি কনসার্টের আয়োজন করেন হ্যারিসন। শুধু তিনিই নন, তার সঙ্গে ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু রবি শংকর। এছাড়া বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিটল রিঙ্গো স্টারও গান পরিবেশন করেন সেখানে। মূলত রবি শংকরের পরামর্শেই কনসার্টের আয়োজন করেন হ্যারিসন। প্রথম কনসার্টের সব টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর তাৎক্ষণিক দ্বিতীয় কনসার্টের চিন্তা করেন তিনি এবং একই দিনে দুটো কনসার্টে গান গেয়ে শোনান। 

১৯৭১ সালের ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত সেই কনসার্ট ৪০ হাজার দর্শক উপভোগ করেন। কনসার্ট থেকে মোট ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৮ মার্কিন ডলার অর্থ পান আয়োজকরা। পরবর্তী সময়ে পুরো অর্থ ইউনিসেফের মাধ্যমে বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যে ব্যয় করা হয়। রাতের অনুষ্ঠানের শেষ দিকে জর্জ হ্যারিসন গেয়ে শোনান ‘বাংলাদেশ’ গানটি।  কনসার্টের মূল পরিকল্পনা জর্জ হ্যারিসনকে দিয়েছিলেন রবি শংকর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ রবি শংকর হ্যারিসনকে দেখান। সেগুলো পড়ে মানবতার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশের জন্য কনসার্ট করার সিদ্ধান্ত নেন। জর্জ হ্যারিসনের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ আই মি মাইন-এ বাংলাদেশ এবং কনসার্ট ফর বাংলাদেশ নিয়ে আলাদা করে সে কথা লিখেছেন তিনি।  

বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যে এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে এ ধরনের বড় একটি অনুষ্ঠান বিশ্বে প্রথমবারের মতো হয়েছিল। তাও আবার নিউইয়র্কের মতো জায়গায়। এরপর বিভিন্ন দেশে মানবতার কল্যাণে এর চেয়েও বড় বড় কানসার্ট আয়োজন করা হয়েছে কিন্তু ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ সেসবের আদর্শ। খুব অল্প বয়সেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয় হ্যারিসনকে। ২০০১ সালের ২৯ নভেম্বর নন-স্মল সেল লাং ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাংলাদেশের এই অকৃত্রিম বন্ধু।



রাইজিংবিডি/৯ ডিসেম্বর ২০১৭/ইয়াসিন/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়