ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘নারীকে নারী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে দেখতে হবে’

এম আর লিটন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪০, ৮ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘নারীকে নারী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে দেখতে হবে’

এম আর লিটন : নারীরাও পারে পুরুষের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে জাতিকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম থেকে শুরু করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলনে নারী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাইজিংবিডিকে কথাগুলো বলছিলেন অধ্যাপিকা ঊর্মিলা রায় (৬৪)। তিনি মানিকগঞ্জ শহরের গঙ্গাধরপট্টি এলাকায় বাস করেন। স্বামী মনোরঞ্জন রায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। ঊর্মিলা রায় ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি ভাইদের সঙ্গে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। ফুটবল, ক্রিকেট, সাঁতারসহ হাই জাম্প এবং লং জাম্প খেলতেন। পরিবার থেকে তার খেলাধুলায় বাধা ছিল না। কিন্তু তখন সমাজব্যবস্থা এতো সহজ ছিল না। ফলে তার খেলাধুলা সমাজের অনেকেই সহজভাবে নেয়নি। তিনি সেগুলো এড়িয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে অর্জন করেছেন পুরস্কার। এছাড়া সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তার পদচারণা ছিল। নাটক, আবৃত্তি, গীতাপাঠ, বিতর্ক ও অনর্গল গল্প বলায় অংশ নিয়ে সুনাম অর্জন করেন।

মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র করেজ থেকে ঊর্মিলা রায় ১৯৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (অনার্স) শেষে মাস্টার্স উত্তীর্ণ হন। তখন নারীদের অল্প বয়সে বিয়ে হতো। কারণ অনেকে মনে করতেন, মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে কিছু হবে না। ফলে এসএসসি পাশের পর ঊর্মিলা রায়ের বিয়ে হয়। তিনি সংসার জীবনে এসে লেখাপড়া বাদ দেননি। এ জন্য পরিশ্রম করতে হয়েছে। স্বামীর চাকরির অল্প আয়ের টাকায় কোনোরকম সংসার চলতো। বই কিনতে না পেরে, তিনি অন্যের কাছ থেকে বই এনে রাত জেগে নোট করে লেখাপড়া করেছেন। মাস্টার্স পড়ার সময় মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ক্লাস করতেন। এরপরও তিনি লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন।

এর মধ্যে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ঊর্মিলার স্বামী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনিও নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে খাবার তৈরি করে দেয়া, লিফলেট বিতরণ করা, আহতদের সেবা করাই ছিল তার কাজ। দেশ স্বাধীন হলো। ১৯৭৭ সালে মানিকগঞ্জ সরকারি কলেজে তিনি বাংলা বিভাগে প্রভাষিকা পদে যোগ দেন।  পরবর্তী সময়ে প্রফেসর হন এবং ২০১১ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে অবসর জীবন গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত।

সমাজের আলোকিত নারী হিসেবে এতদূর এগিয়ে যাওয়ার পথটি সহজ ছিল না। নানা বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে তাকে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। তারা শিক্ষা থেকে শুরু করে অফিস-আদালত এবং রাজনৈতিক মাঠে পুরুষের পাশাপাশি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কিছু নষ্ট মানসিকতার কারণে এখনো নারীরা বিভিন্ন জায়গায় অবহেলিত ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখি এবং প্রত্যাশা করি দেশের মেরুদণ্ড শক্তিশালী করতে হলে নারীদের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নারীকে শুধু একজন নারী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। নারীদের জন্য আর্থিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও বাসস্থান ইত্যাদি বিষয়গুলো যদি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়, দেশপ্রেম ও মানবপ্রেম যদি সবার মধ্যে জাগ্রত করা যায়, তাহলে আমরা অবশ্যই সুদিনের সূর্য আবারও দেখবো।’

সবশেষে ঊর্মিলা রায় বলেন, ‘জীবনের কোনো বাধাকে বাধা মনে করিনি। কারণ সংগ্রামই জীবনের শ্রেষ্ঠ চালিকা শক্তি। হতাশা বলে কিছু নেই। সব কিছু মোকাবেলা করে নিজের কাজটি ঠিকমতো করার মধ্যেই প্রকৃত স্বার্থকতা।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়