এক সংগ্রামী পিতার গল্প
দিদার মিয়া
আমিনুর রহমান হৃদয়: ৪৮ বছর বয়সি মোহাম্মদ দিদার মিয়া। বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলাতে হলেও বর্তমানে থাকেন রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায়। পরিবারে আছেন তার স্ত্রীসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে। সংসার ও ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ যোগান দিতে তিনি পরিবার ছেড়ে ঢাকায় বসবাস করছেন। সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় কথা হয় তার সঙ্গে।
কথায় কথায় জানালেন, তার বড় ছেলে নবম শ্রেণী, ছোট ছেলে সপ্তম শ্রেণী ও মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়াশোনা করছেন কিশোরগঞ্জে। দারিদ্রতার কারণে নিজের পড়ালেখা অষ্টম শ্রেণীতে থেমে গেলেও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা যেন বন্ধ না হয়, সেজন্য ঢাকায় এসে ফেরি করে বিক্রি করছেন হাতের আংটি ও কানের দুল। দিদার মিয়া বলেন, ‘১০ বছর থেকে ঢাকার নিউ মার্কেট ও ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় ঘুরে ঘুরে কানের দুল ও আংটি বিক্রি করছি। দৈনিক এক হাজার টাকার মতো আংটি বিক্রি হয়। আর এতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লাভ হয়।’
তিনি জানান, রাজধানীর চকবাজার এলাকা থেকে এইসব হাতের আংটি ও কানের দুল পাইকারি মূল্যে কিনে আনেন। এরপর ফেরি করে বিক্রি করে থাকেন।
ঢাকা এসে প্রথমে জুতার দোকানে কাজ করলেও তাতে মন না বসলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসা করবেন। এরপর থেকেই গত দশ বছর ধরে আংটি ও কানের দুল বিক্রি করে আসছেন বলে জানান দিদার মিয়া। বর্তমানে প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকার মতো আংটি ও কানের দুল বিক্রি হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ব্যবসায় যে টাকা লাভ হয় তা দিয়ে আমার ঢাকায় নিজের থাকা ও খাওয়ার টাকা রেখে বাকি টাকা গ্রামের বাড়িতে সংসার ও ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচের জন্য পাঠিয়ে দিই।’
‘পরিবার ছেড়ে বাইরে থাকতে কষ্ট হলেও দারিদ্রতায় যাতে আমার ছেলেমেয়ের পড়াশোনা বন্ধ না হয়ে যায়, সেই জন্যই বাইরে থেকে কাজ করে টাকা উপার্জন করছি।’
ইচ্ছের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিজের জীবনের একটিই ইচ্ছে। আর সেটা হলো ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। যাতে তারা জীবনে লেখাপড়া করার পর চাকরি অথবা ব্যবসা যেটাই করুক, যেন ভালো কিছু করতে পারে।’
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ এপ্রিল ২০১৮/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন