ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

স্মরণ : সুকুমার রায়

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২১, ৩০ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্মরণ : সুকুমার রায়

শাহ মতিন টিপু : সুকুমার রায় শিশু-কিশোর উপযোগী বিচিত্র সাহিত্যকর্ম উপহার দিয়ে আজো অমর হয়ে আছেন। কবিতা, নাটক, গল্প, ছবি সবকিছুতেই ছিল মজার ব্যঙ্গ ও কৌতুকরস সঞ্চারের প্রয়াস।

দেখা যায়, তিনি কথা-কবিতায় হাস্যরসের মধ্য দিয়ে সমাজচেতনার দিকেই পাঠককে নিয়ে গেছেন। বাংলা সাহিত্যের এই প্রতিভাবান মানুষটির ১৩২তম জন্মদিন আজ।

সুকুমার রায়ের জন্ম ১৮৮৭ সালের ৩০ অক্টোবর, কলকাতার এক ব্রাহ্ম পরিবারে। তিনি জন্মেছিলেন বাঙালি নবজাগরণের স্বর্ণযুগে। তার পারিবারিক পরিবেশ ছিল সাহিত্যনুরাগী। পিতা উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন শিশুতোষ গল্প ও জনপ্রিয়-বিজ্ঞান লেখক, চিত্রশিল্পী, সুরকার ও শৌখিন জ্যোতির্বিদ। উপেন্দ্রকিশোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি সুকুমারকে সরাসরি প্রভাবিত করেছিলেন। এ ছাড়াও রায় পরিবারের সাথে জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখের সম্পর্ক ছিল।

সুকুমার রায় একাধিক গুণের অধিকারী ছিলেন। অল্প বয়স থেকেই তিনি পিতার অনুপ্রেরণায় মুখে মুখে ছড়া রচনা ও ছবি আঁকার সঙ্গে ফটোগ্রাফিরও চর্চা করতেন। কলেজ জীবনে তিনি ছোটদের হাসির নাটক রচনা এবং তাতে অভিনয় করতেন।

তার ছড়া পড়া হয়নি, এমন মানুষ বাংলাদেশে নেই। মজা এবং উপমা হিসাবে তার ছড়াগুলোর দু-চার লাইন অনেকেরই আয়ত্বে। শিশুতোষ পাঠ্যে তার কোন না কোন ছড়া আছেই।

বলা হয়, সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময়। শুধু জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিকই নন, বাংলা ভাষায় ননসেন্স এরও প্রবর্তক।

বেঁচেছিলেন মাত্র মাত্র ছত্রিশ বছর। ১৯২৩ সালে ১০ সেপ্টেম্বর তিনি বয়সে একমাত্র পুত্র সত্যজিৎ রায় এবং স্ত্রীকে রেখে প্রয়াত হন। এই স্বল্পায়ু জীবনে তিনি যা রেখে গেছেন তা তাকে বাংলা সাহিত্যে অনন্তকাল বাঁচিয়ে রাখবে। 

সুকুমার রায়ের প্রচুর ছড়া আজো সাহিত্য রস যুগিয়ে যাচ্ছে। আজো মোহিত করছে আমাদের। তার- রামগরুড়ের ছানা  হাসতে তাদের মানা/হাসির কথা শুনলে বলে/হাসব না-না, না-না! কিংবা - মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার/সবাই বলে, মিথ্যে বাজে বকিসনে আর খবরদার!/ অমন ধারা ধমক দিলে কেমন করে শিখব সব?/ বলবে সবাই মুখ্য ছেলে, বলবে আমায় গো গর্দভ!  কিংবা ষোলা আনাই মিছে ছড়ার- খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে/ বাবু দেখেন, নৌকাখানি ডুবলো বুঝি দুলে!/ মাঝিরে কন, একি আপদ! ওরে ও ভাই মাঝি/ ডুবলো নাকি নৌকা এবার? মরব নাকি আজি?/ মাঝি শুধায়, সাঁতার জানো? - মাথা নাড়েন বাবু/ মূর্খ মাঝি বলে, মশাই, এখন কেন কাবু?/ বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে/ তোমার দেখি জীবন খানা ষোল আনাই মিছে। কিংবা- চলে হনহন/ ছোটে পনপন/ ঘোরে বনবন/ কাজে ঠনঠন। তার ননসেন্স ছড়া - মাসী গো মাসী পাচ্ছে হাসি/ নিম গাছেতে হচ্ছে সিম,/ হাতির মাথায় ব্যাঙের বাসা/কাগের বাসায় বগের ডিম। -এমন অনেক অনেক ছড়া আমাদের অনেকেরই জানা।

সুকুমার রায়ের স্বল্পস্থায়ী জীবনে তার প্রতিভার শ্রেষ্ঠ বিকাশ লক্ষ করা যায়। সন্দেশ এর সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে তার লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে মাইলফলক হয়ে আছে। তার বহুমুখী প্রতিভার অনন্য প্রকাশ তার অসাধারণ ননসেন্স ছড়াগুলোতে। তার প্রথম ও একমাত্র ননসেন্স ছড়ার বই আবোল তাবোল বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ অক্টোবর ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়