ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

৯ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকুল কেমন আছেন?

মহিউদ্দিন অপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৯ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকুল কেমন আছেন?

মহিউদ্দিন অপু : জীবন বাজি রেখেই ১৯৭১ এর সেদিন মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিলাম। পাকসেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। দেশ স্বাধীন করেছি। এই গ্রামে প্রথম জাতীয় পতাকা আমিই উড়িয়েছিলাম।’ কথাগুলো বলছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম তালুকদার মুকুল।

শহিদুল ইসলাম তালুকদার মুকুলের গেজেট নম্বর: ৯৯৬। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার বয়স ১৮ ছুঁইছুঁই। বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলাধীন রায়হানপুর ইউনিয়নের লেমুয়া গ্রামের মরহুম হাজী নুরুল ইসলাম তালুকদারের ছেলে তিনি।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনেই তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ হোন। জুনের মাঝামাঝি সময়ে যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে তিনিসহ ৮০ জন প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে যান। উন্নত প্রশিক্ষণ শেষে পূর্ণ ১৮ বছর বয়সে সুন্দরবন অঞ্চলের ৯ নম্বর সেক্টরে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর, দীর্ঘ কয়েকমাস যুদ্ধ শেষে ফিরে আসেন নিজ এলাকায়। ওইদিনই তিনি তার নিজ গ্রামে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন।

 



স্বাধীনতার অনেক বছর অতিবাহিত হয়েছে। দেশের উন্নয়ন হয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম তালুকদার মুকুলের ভাগ্যান্নয়ন আজও হয়নি। নিভৃত পল্লীতে অতি কষ্টকর দিন কাটছে এখন তার।

‘মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র নবম সেক্টর মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১’ নামে নিভৃত পল্লীর নিজ ঘরেই তৈরি করেছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র। যেখানে সংগৃহীত রয়েছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত বিভিন্ন প্রকার বই। এছাড়াও তিনি নিজেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লিখেছেন বেশকিছু পাণ্ডুলিপি। নিজের জীবনের ইতিহাস নিয়েও লিখছেন পাণ্ডুলিপি।

মুক্তিযোদ্ধা মুকুল দীর্ঘ ৩৫ বছর স্থানীয় রায়হানপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ২৮ বছর ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বীরত্বের সঙ্গে ১৯৭১ সালে পাক হায়েনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয়ী হলেও শেষ বয়সে এসে জীবনের কাছে হেরে গেলেন তিনি।

 



মুক্তিযোদ্ধা মুকুল জানান, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি তারিখে বরগুনা জেলার বামনা উপজেলাধীন ভাইজোরা এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। প্রায় দেড় বছরের চিকিৎসা শেষে জীবন ফিরে পেলেও এখন আর আগের মতো হাঁটতে পারেন না তিনি। চলাচলে একমাত্র ভরসা এখন ক্র্যাচ।

তিনি বলেন, প্রায় দু’বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছি। কারো কোনো সহযোগিতা পাইনি। সবার ভাগ্য পরিবর্তন হয়, আমার ভাগ্য আরো দুর্বিষহ হয়েছে। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার জীবন। অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ালেও আজও ওদের ভাগ্যে একটি চাকরিও জুটেনি। সন্তানদের ভাগ্যের পরিবর্তন চাই আমি। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ছয় লাখ টাকা শেষ করে আজ নিঃস্ব। অর্থের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছি এখন। শেষ জীবনে নিজের ভাগ্যের চিন্তা বাদ দিয়েছি। এখন একটাই ইচ্ছা, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবো। ’

পাথরঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ডেপুটি কমান্ডার ও বরগুনা জেলা পরিষদ সদস্য আলহাজ্ব এম এ খালেক বলেন, ‘মুকুল আমাদের জেলার একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার পর সে যে আর আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন তা ভাবতে পারিনি। আল্লাহর রহমতে আমাদের মাঝে তিনি ফিরে এলেও এখন খুবই অসহায় অবস্থায় আছেন।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ডিসেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়