ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রক্তাক্ত তটরেখা

স্কুলে ক্লাসের ঘণ্টাধ্বনি, কারাগারে গণহত্যা

রফিকুল ইসলাম মন্টু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ৯ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্কুলে ক্লাসের ঘণ্টাধ্বনি, কারাগারে গণহত্যা

রফিকুল ইসলাম মন্টু : পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশ রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। মার্চে মুক্তি সংগ্রামে উত্তাল হয়ে উঠেছিল সারাদেশ। সবার প্রত্যয় ছিল একটাই- দেশকে শত্রুমুক্ত করা। যুবক-তরুণেরা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এই যুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর অবশেষে আসে মুক্তি। সারাদেশের ন্যায় মুক্তি সংগ্রামের সেই ঢেউ পৌঁছে গিয়েছিল উপকূলীয় জনপদের তটরেখা পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধের সেইসব ঐতিহাসিক তথ্যবলী নিয়ে ধারবাহিকের এই পর্বে রয়েছে বরগুনা জেলার কথা।

স্কুলে যখন ক্লাস শুরুর ঘণ্টা, জেলখানায় তখন গণহত্যা। স্কুলের ঘণ্টা বাজার শব্দ মিলিয়ে যায় গুলির বিকট আওয়াজে। কেবল দিনের প্রথম প্রহর। পড়ুয়ারা স্কুলমুখী। মানুষজন কেউ কাজে বেরিয়েছে, কেউ বা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কোথাও আত্মগোপনের চেষ্টা করছে। অনেকে আবার আত্মবিশ্বাসী- কিছু হবে না। এপ্রিলের শেষ দিকে বরগুনা জেলায় পাক বাহিনীর আগমনের পর থেকেই আতঙ্ক ছিল চারদিকে। মে মাসের মাঝামাঝি পাথরঘাটা থেকে বেশ কয়েকজনকে ধরে এনে বিষখালী নদীর তীরে নির্মমভাবে হত্যার পর সে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। মে মাসের শেষদিকে নির্মম হত্যাকাণ্ডে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে বরগুনা। প্রহসনমূলক বিচারের নামে চলে হত্যাকাণ্ড। নারী-পুরুষদের বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় জেলখানায়। সেখান থেকে নারীদের রাতে নিয়ে যাওয়া হয় পাকবাহিনীর আস্তানায়। স্বাধীনতার এত বছর পরেও সেদিনের কথা মনে এলে আঁৎকে ওঠেন জেলার বয়সী ব্যক্তিরা।

বরগুনা জেলখানা ছিল পাক বাহিনীর নির্যাতন, নিপীড়ণ আর গণহত্যার প্রধান কেন্দ্র। দু’দিনে পাঁচবার গুলি করার পরও অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ফারুকুল ইসলাম। তার বর্ণনা থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ২৯ মে বরগুনা জেলখানায় গণহত্যা শুরু হয়। প্রথমদিন ৫৫জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অনেকে সেদিন গুলিতে আধমরা আবস্থায় পড়েছিল। কিন্তু আধমরাদের ওপরও চলেছে আঘাতের পর আঘাত। পরদিন ৩০ মে আবারও ১৭জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহত সকলকে একটি গর্তে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। ফারুকুল ইসলাম নিজে আলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও তার দুই ভাই নাসির ও সানু শহীদ হন। আরও নির্মম, হৃদয় বিদারক সব ঘটনার জন্ম দেয় সেদিনের হত্যাকাণ্ড। সকলের কাছে ‘কেষ্ট দাস’ নামে পরিচিত কৃষ্ণ দাস গুলিবিদ্ধ হয়েও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচেছিলেন। বাঁচার আকুতি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাস্তা পার হচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দেখে ফেলে হায়েনারা। তাকে কোদালের বাঁট দিয়ে মাথা গুঁড়িয়ে সেখানেই হত্যা করা হয়। পাথরঘাটার লক্ষণ দাস ও তার ছেলে অরুণ দাসকেও এভাবে হত্যা করা হয়। অনেককে আবার পটুয়াখালী নিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের অনেকের নাম আজও জানা সম্ভব হয়নি।

পাক হানাদারদের আস্তানা বরগুনা সিএন্ডবি’র ডাকবাংলোয় নিয়ে বহু নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। পাকসেনারা বিভিন্ন স্থান থেকে নারী, পুরুষদের ধরে এনে জেলখানায় আটকে রাখলেও নারীদের রাতে জেলখানা থেকে নিয়ে আসা হতো ডাকবাংলোয়। সারারাত গণধর্ষণের পর তাদের ছেড়ে দেয়া হতো ভোরে। ডাকবাংলো থেকে জেলখানায় তাদের যাওয়ার পথ রক্তে লাল হয়ে যেতো। সে এক বিভীষিকাময় দৃশ্য। পঞ্চাশোর্ধ্ব এক বীরাঙ্গনা বলেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। পাক সেনারা সেদিন তাকেও নির্যাতন করেছিল। তিনি দেখেছেন, তার মত ১৪-১৫জন নারী সেখানে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ দেশে আছেন, কেউ আবার ভারত চলে গেছেন।

পাক হানাদার বাহিনী তৎকালীন বরগুনা মহকুমা দখলে নেয় ২৬ এপ্রিল। সে সময় মুক্তিযোদ্ধারা বরগুনা শহর ছেড়ে লোকালয়ে যাওয়ায় মুসলিম লীগ, জামায়াত ও অন্যান্য পাকিস্তানপন্থিরা বরগুনা শহরে আধিপত্য বিস্তার করে। পাক বাহিনীর সদস্যদের বরগুনায় নিয়ে আসে সাবেক মুসলিম লীগ নেতা এমএনএ আবদুল আজিজ মাষ্টার ও পাথরঘাটার তাহেরউদ্দিন হাওলাদার। এসডিও’র জেটিতে পাক বাহিনী অবস্থান নিয়ে আদালত ভবন এলাকায় কিছু লোক জড়ো করে ভাষণ দেয়। বরগুনা অভিযানে নেতৃত্ব দেয় পটুয়াখালী জেলা সামরিক আইন প্রশাসক মেজর নাদের পারভেজ। পাক বাহিনী আসার পর থেকে মানুষের মাঝে আতঙ্ক বাড়তে থাকে। ১৫ মে পাথরঘাটা থানার বেশ কয়েকজনকে ধরে এনে বিষখালী নদীর তীরে হত্যা করা হয়। বরগুনা সদর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান পনুকে পটুয়াখালী নিয়ে হত্যা করা হয়। আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের আবদুর রশিদ মাজেদ ও মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহেরকে খাদকোণ নদীর তীরে তৎকালীন এসডিও ঘাটে গুলি করে হত্যা করা হয়। আর পাথরঘাটার কাকচিড়ার মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমানকে হত্যা করা হয় বরগুনার পুরাতন খেয়াঘাটে। বিষখালী নদীর তীরে হত্যাকাণ্ডের সময় পাথরঘাটার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লক্ষণ দাস ও তার ছেলে কেষ্ট দাস, অরুণ দাস ও স্বপন দাসকে বরগুনা কারাগারে এনে আটক করা হয়। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থানের কারণে সাবেক সিও আতিকুল্লাহ, এসআই আবদুল মজিদ, সিপাহী আড়ি মিয়া ও আবদুল জব্বারকে পটুয়াখালী নিয়ে হত্যা করা হয়। বরগুনা শহর তখন লোকশূন্য হতে থাকে। এক সময় পাক বাহিনীর লোকজন ঘোষণা দেয়, বর্ণ হিন্দুদের ওপর তারা আক্রমণ করবে না। এই ঘোষণা দিয়ে পাক বাহিনী বরগুনা ছেড়ে পটুয়াখালী চলে যায়। মানুষ আশ্বস্ত হয়। ঘোষণা পেয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থক ব্যক্তিবর্গ বরগুনা ফিরে আসে। ২৬ মে পাক বাহিনীর ক্যাপ্টেন শাফায়াত চারজন সহযোগী নিয়ে গোপনে বরগুনা আসে। পরদিন সকালে ২-৩জন করে লোক ধরা শুরু হয়। তখন লোকজন আবার পালাতে শুরু করে। পাক সেনারা দোনকার ইমাম হোসেনসহ অন্যান্যদের সহযোগিতা নিয়ে নাথপাড়া, পশ্চিম বরগুনা ও শহর এলাকা ঘেরাও করে। এইসব এলাকা থেকে তারা শতাধিক নারী-পুরুষকে বেঁধে কারাগারে ঢোকায়। পাকিস্তানি বাহিনী জেলখানার নিকটে সিএন্ডবি ডাকবাংলোয় তাদের ঘাঁটি স্থাপন করে। সেখান থেকেই পরিচালিত হয় সকল কর্মকাণ্ড।

একাত্তরের ১০ অক্টোবর বরগুনাবাসীর জন্য একটি শোকের দিন। এ দিন পাথরঘাটা উপজেলার নাচনাপাড়া ইউনিয়নের সিংড়াবুনিয়া গ্রামে স্বজনদের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ৭ মুক্তিযোদ্ধাকে। সহোদর, ভাইবোন এবং অতি আদরের শিশু সন্তানের সামনে তাদের হত্যা করা হয়। এ দিন হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে বলেশ্বর নদী হয়ে হরের খালের ভেতর দিয়ে গানবোট যোগে সিংড়াবুনিয়া গ্রামে চলে আসে। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করার অপরাধে গ্রামের অনেক নিরীহ মানুষও সেদিন হত্যার শিকার হন। ওই এলাকার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মকবুল হোসেনের নির্দেশে নারী ও শিশুসহ নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায় পাক বাহিনী। সেদিন দুপুরে শহীদ হন ক্ষিরোদচন্দ্র বেপারী (৩৩) ও তার শ্বশুর লক্ষ্মীকান্ত গয়ালী (৫৫), অশ্বিনী কুমার বালা (৬০), মনোরঞ্জন বেপারী (৪৫), চন্দ্রকান্ত হাজরা (৬৫), নিত্যানন্দ বেপারী (৪৫) এবং অনন্ত কুমার হাওলাদার (১৫)সহ আরও অনেকে। এদেরকে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে প্রকাশে গুলি করা হয়। এরপর লাশগুলো ঝোঁপের আড়ালে মাটির গর্তে পুতে রাখা হয়। সূত্র মতে, পাক বাহিনী ২৩ নভেম্বর সুবেদার জামানের নেতৃত্বে বেতাগী যায়। সেখানে তারা বদনীখালী বন্দর লুট করে এবং আগুন দিয়ে বাজার পুড়ে ফেলে। লুটের পর লঞ্চে পাকবাহিনী বরগুনায় ফিরছিল। এসময় পথিমধ্যে মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ করে। মীর্জাগঞ্জ হতে কমান্ডার আলতাফ হায়দার ও মোতালেব তাদের দল নিয়ে পাক বাহিনীর লঞ্চ আক্রমণ করে। কিন্তু এলএমজির সামনে মুক্তিবাহিনী টিকতে পারেনি। তারা পিছু হটে। এক বাক্স কার্তুজসহ মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝি ধরা পড়ে। পাকবাহিনীও এই খণ্ড যুদ্ধে আহত হয়। তারা বরগুনা পৌঁছে দেখে সেখানেও থাকা নিরাপদ নয়। সে কারণে রাতের অন্ধকারে পাকসেনারা সদলবলে বরগুনা ত্যাগ করে। ফলে মুক্তিবাহিনীর আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। চলতে থাতে তাদের প্রস্তুতি। ২৪ নভেম্বর বুকাবুনিয়ার মুক্তিবাহিনী বামনা থানা আক্রমণ করে। সারাদিন সংঘর্ষ চলে। দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলে। বিকেলে রাজাকারেরা আত্মসমর্পণ করে। বামনা থানায় নিহত হয় ২৪ জন রাজাকার। একই দিনে আক্রমণ হয় বেতাগী থানা। মুক্তিবাহিনী থানা দখল করে। ২৫ নভেম্বর আক্রমণ করা হয় পাথরঘাটা থানা। কয়েক ঘণ্টা যুদ্ধের পর পুলিশ ও রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। যুদ্ধ চলাকালেই পালিয়ে যাচ্ছিল শান্তি কমিটির সদস্যরা। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের গুলি করে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা আমতলী থানা আক্রমণ করে ১২ ডিসেম্বর। ২৭ নভেম্বর সকালে মুক্তিবাহিনী বরগুনা মহকুমা শহর দখল করে। ২৭ নভেম্বর বরগুনা মহকুমা স্বাধীনতা লাভ করে। বরগুনা মহকুমা দখলের পর মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেন। ৩ ডিসেম্বর বরগুনা পুরোপুরি মুক্ত হয় এবং ৪ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে বরগুনায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে।

বামনার বুকাবুনিয়া যুদ্ধ সম্পর্কে একাধিক মুক্তিযোদ্ধা বলছিলেন, ’৭১-এর ২৩ নভেম্বর  সকাল ৯টায় বুকাবুনিয়া থেকে পূর্বদিকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান। বামনা অঞ্চলের উপ-অধিনায়ক আলমগীর হোসেন সতর্ক হুইসেল বাজানোর পর একজন মুক্তিযোদ্ধা একটি বড় গাছের উপর উঠে দেখতে পান পাকিস্তানি হানাদাররা আল-আকরাম লঞ্চযোগে বামনার বিষখালী নদীর ওপারে বদনীখালী বাজারে এসে দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন উপ-অধিনায়ক বামনা বাজারে আক্রমণ হতে পারে ভেবে ৫২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে বুকাবুনিয়া থেকে বামনা রওয়ানা হন। তখনও চলছিল গোলাগুলির শব্দ। বামনা বাজরের ভীতসন্ত্রস্ত মানুষেরা এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছিল। মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেন বামনা আমুয়ার খাল রাস্তার পশ্চিম ঢালে। কিছু মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেন আমজাদ খান সাহেবের বাড়ির পিছনের বাগানে। সেখান থেকে বামনা থানার দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, বামনা থানার অভ্যন্তরে ১৩৫ জন পুলিশ ও রাজাকার অবস্থান করছিল। ১০জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল বামনা বাজারের দক্ষিণ খাল পার হয়ে অবস্থান নেন। এদিকে বিষখালী নদী তীরবর্তী বদনীখালী বাজার জ্বালিয়ে সৈন্য বহনকারী  লঞ্চ ‘আল আকরাম’ বামনা বন্দরের দিকে আসতে শুরু করে। বামনা লঞ্চঘাট সংলগ্ন পুরাতন বামনা বাজারের কাছাকাছি আসতেই লঞ্চের গতি কমিয়ে দেয়। এসময় মুক্তিযোদ্ধারা নদীর তীরে অবস্থান নিয়ে ফায়ার শুরু করেন। পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষ থেকেও পাল্টা গোলাগুলি শুরু হয়। এভাবে প্রায় দুই ঘণ্টা বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ চলতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের দুইটি মেশিনগান বিকল হয়ে যায়। পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতিয়ার ও গোলাবারুদের পরিমাণ মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। মুক্তিযোদ্ধা এম আজিজ মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে একটি ছোট রকেট লাঞ্চার দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ অবস্থার মধ্যে হানাদার বাহিনী টিকতে না পারায় লঞ্চ ঘুরিয়ে বেতাগীর দিকে পিছু হটে। পরের দিন ভোর রাতে মুক্তিকামী যোদ্ধারা পাকিস্তানিদের হাত থেকে বামনাকে মুক্ত করার জন্য থানা আক্রমণ করে। থানার ভেতরে পুলিশ ও রাজাকার বাহিনী প্রতিহত করার চেষ্টা চালায় মুক্তিযোদ্ধাদের। কিন্তু অদম্য মুক্তিযোদ্ধারা থানার উত্তর দিকে আ. রব আকনের বাড়ির বাগান ও দক্ষিণ দিকে সারওয়ারজান হাইস্কুলসহ পশ্চিমে মো. লাল মিয়ার বাড়ির আশপাশে একটি বেষ্টনি বলয় গড়ে থানা লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকেন। ফলে প্রতিহত হয় পাক বাহিনী।

অন্যান্য স্থানের মতো বরগুনায়ও আলোড়ন তোলে একাত্তরের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ। এই বাণী মুক্তিকামী মানুষের মনে যুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেরণা যোগায়। বিচ্ছিন্নতার কারণে এ জেলার বহু মানুষ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি শুনতে পারেননি। পরের দিন ৮ মার্চ বেতারের মাধ্যমে তারা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনেছেন। মাইকের মাধ্যমে সকলের মাঝে ভাষণের বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়। এরপর থেকেই বরগুনার শান্তিকামী মানুষ সংগঠিত হতে শুরু করে। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতি আ. লতিফ মাষ্টার ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম শিকদারকে যথাক্রমে সংগ্রাম পরিষদেরর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর কবির, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রশিদ মিয়া, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মনোয়ার, দুলাল মাতুববরসহ আরও অনেকে ছিলেন পরিষদের সদস্য। এম.এন.এ আসমত আলী শিকদার, এম.পি.এ রোসমত আলী খান, ছাত্রনেতা সিদ্দিকুর রহমান, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা ছিলেন। বরগুনার ইতিহাসে ৩ ডিসেম্বর একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদারমুক্ত হয় বরগুনা। দীর্ঘ কয়েক মাস যুদ্ধের পর বরগুনার আকাশে উদিত হয় একটি নতুন সূর্য।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ মার্চ ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়