ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আইসিবির ৫১৪ মার্জিন হিসাবের তদন্ত প্রতিবেদন চায় দুদক

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আইসিবির ৫১৪ মার্জিন হিসাবের তদন্ত প্রতিবেদন চায় দুদক

এম এ রহমান মাসুম : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশে (আইসিবি)  প্রায় ২৩৮ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে ৫১৪টি মার্জিন হিসাবে তদন্ত প্রতিবেদন পেতে দ্বিতীয় দফায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আইসিবির চেয়ারম্যান বরাবর পাঠনো এবারের নোটিশে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। যা রোববার দুদক থেকে পাঠানো হয়।

অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের সই করা চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দুদকের জনসংযোগ দপ্তর থেকেও রাইজিংবিডিকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, অতি জরুরি ভিত্তিতে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্রের মূলকটি সংরক্ষণ করে সত্যায়িত ছায়ালিপি সরবরাহের জন্য আবারো অনুরোধ করা হলো। বিষয়টি অতি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ।

চিঠিতে চাহিদা অনুযায়ী রেকর্ডসমূহের বিষয়ে বলা হয়, আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে দেওয়া ২০১৬ সালের ২০ মার্চের তথ্যানুসারে প্রতিষ্ঠানটিতে ৬৮১টি মার্জিন হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে ৫২৯টি মার্জিন হিসাবে সম্পদের ঘাটতি রয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫টি মার্জিন হিসাবের তদন্ত করা হয়েছে। বাকি মার্জিন হিসাবগুলোর বিষয়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত দলের মাধ্যমে দ্রুত তদন্ত শেষ করে উক্ত তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য আবারো অনুরোধ করা গেল।

এর আগে ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর ওই প্রতিবেদন চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। যদিও তা নির্ধারিত তারিখ কিংবা তারিখের পরেও পাঠায়নি আইসিবি কর্তৃপক্ষ। তদন্ত প্রতিবেদন ওই বছরের ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠানোর জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল দুদক। মাঝে বেশ কয়েকবার মৌখিকভাবে তাগিদ দেওয়া হলেও মিলেনি প্রতিবেদন।

এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আইসিবি কর্তৃপক্ষের কাছে ওই তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। দুদক থেকে তাদের সব মার্জিন হিসাবে নথিপত্র যাচাই-বাছাই করা কষ্টসাধ্য এবং অনেক সময়ের প্রয়োজন। তাই আইসিবি কর্তৃপক্ষকে ৫১৪টি মার্জিন হিসাবের বিষয়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। এতে একদিকে সময়ের অপচয় যেমন কম হবে, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদেরও অযথা হয়রানি হতে হবে না। কারণ দুদক চায় হয়রানিমুক্ত অনুসন্ধান। এজন্য তাদের কাছে ওই প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ও এর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডে (আইএসটিসিএল) ২৩৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকার অনিয়ম হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে পিটি হিসাবগুলোতে (পাবলিক ট্রেড হিসাব) নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ সীমার অতিরিক্ত ১২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার মার্জিন ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী ছানাউল হক, উপপ্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিপু সুলতান ফারাজীসহ ছয়জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এ অনিয়মের কারণে সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।

সূত্র আরো জানায়, আইএসটিসিএলের প্রধান কার্যালয়ের ১৯১টি পিটি হিসাবে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২৩৭ কোটি ৮২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মার্জিন ঋণ দেওয়া হয়। এ হিসাবগুলোতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ সীমার অতিরিক্ত ১২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ পিটি হিসাবসমূহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মূলত ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালের প্রথম দিকেই মার্জিন ঋণ সীমার ব্যাপক অনিয়ম ঘটিয়ে সিকিউরিটিজ কেনা হয়।

হিসাব পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১০৩২ নম্বর পিটি হিসাবে ডেবিট স্থিতি থাকা অবস্থায় কাজী ছানাউল হকের মেয়াদকালে ২০০৮ সালের ১৯ অক্টোবরে ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯১ টাকার ক্রেডিট স্থিতির ওপর ১৮ লাখ টাকা এবং ২০ অক্টোবর ৫১ হাজার টাকা ডেবিট স্থিতির ওপর পুনরায় ৭ লাখ টাকা তহবিল উত্তোলন দেওয়া হয়েছে। যা বিধি বহির্ভূত এবং গুরুতর অনিয়ম। ৪৪৮১ নম্বর পিটি হিসাবে প্রায় সাড়ে ৪৪ লাখ টাকা ডেবিট স্থিতি থাকা অবস্থায় ছানাউল এবং উপপ্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিপু সুলতান ফারাজীর মেয়াদে ২০১০ সালের ৪ অক্টোবর সিকিউরিটিজ অন্য প্রতিষ্ঠানের লিংক বিও-তে স্থানান্তর করা হয়েছে, যা শতভাগ নিয়ম লঙ্ঘন। এমন ঘটনায় আইসিবি ব্যাংক ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। আর তদন্তে মিলেছে এর সত্যতা।

আইসিবির প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছানাউল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে আইসিবির বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। কমিশনের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন অনুসন্ধানের তদারকি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/এম এ রহমান/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়