ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

আসামিপক্ষের যুক্তিখণ্ডন শুরু

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আসামিপক্ষের যুক্তিখণ্ডন শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক : একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিস্ফোরক ও দণ্ডবিধি আইনের দুই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ল-পয়েন্টে যুক্তি উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষের যুক্তিখণ্ডন শুরু হয়েছে।

সোমবার ঢাকার এক নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে এ মামলার অস্থায়ী আদালতে আসামিপক্ষে যুক্তিখণ্ডন অব্যাহত অবস্থায় বুধবার পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন মুলতবি করেছেন।

এর আগে এদিন বেলা সোয়া ১২টায় এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। তিনি শুরুতে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড পরিকল্পনার ১০টি ঘটনাস্থল হাওয়া ভবন, তৎকালীন উপমন্ত্রী পিন্টুর বাসা, মিরপুরের মসজিদে আকবর, মোহাম্মাদপুরে আসামি সুমনদের বাড়ি, সাতগম্বুজ মসজিদ, মেরুল বাড্ডার আসামি কাজলের বাসা, বাড্ডার আনন্দনগরের মুফতি হান্নানের বাসা, কর্নেল (অব.) গোলাম রাব্বানীর মেরুল বাড্ডার বাসা, প্রকৌশলী মাজহারুল ইসলামের বাড়ি এবং মোহাম্মাদপুরে   হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামের অফিস রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পেরেছে বলে জানান। সাক্ষী গ্রহণ করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের একটি সিদ্ধান্তও দাখিল করেন তিনি।

এরপর তিনি বলেন, এই ঘটনায় ১৫টি গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়। ৯টি স্থানে গ্রেনেডগুলো বিস্ফোরণ ঘটনানো হয়। যা খসড়া মানচিত্রে চিহ্নিত করা আছে। অবিষ্ফোরিত থাকে ৪টি গ্রেনেড। যার ৩টি ঘটনা স্থলে পাওয়া যায়। যার মধ্যে ২টি ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে ও একটি ওসমানী উদ্যানে আদালতের অনুমতি ছাড়া ধ্বংস করা হয়। অপর গ্রেনেডটি জেলখানার ভেতরে পাওয়া যায়। যা আমরা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করেছি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বলেছেন, পত্রিকায় দেখেছি, পড়েছি। আমরা আজ এ সংক্রান্তে ২৫টি দৈনিক পত্রিকা বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করলাম।

সর্বশেষ তিনি ২২৫ জন সাক্ষী এবং দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন উল্লেখ করে সকল আসামির সর্বোচ্চ শান্তি কামনা করেন। একই সঙ্গে মামলায় জামিনে থাকা ৮ আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণেরও আবেদন করেন।

বেলা ১টা ১৫মিনিটে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান প্রসিকিউটরের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর আসামি আবুল কালাম আজাদ, শেখ আব্দুস সালাম, মাওলানা ইয়াহিয়া, আব্দুল হান্নান সাব্বির ও শেখ ফরিদের পক্ষে যুক্তিখণ্ডন শুরু করেন আইনজীবী মাঈনুদ্দিন মিয়া। তিনি মামলাটিতে দাখিলকৃত সম্পূরক তদন্ত প্রতিবেদন দায়রা আদালত এখতিয়ার বর্হিভূতভাবে গ্রহণ করেছেন উল্লেখ করে এ সংক্রান্তে উচ্চ আদালতের একটি সিদ্ধান্ত দাখিল করেন। এছাড়া জজ মিয়া, আবুল হাসান রানাসহ ৩ জনের স্বীকারোক্তি বিবেচনার বিষয়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়েও অবহিত করেন। তিনি বিচারকালীন সময়ে সব আসামিকে নির্দোষ ভাবতে হবে মর্মে উচ্চ আদালতের একটি সিদ্ধান্তও আদালতে দাখিল করেন।

সর্বশেষ সব আসামির পক্ষে আইনজীবী এসএম শাহজাহান যুক্তিখণ্ডন শুরু করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর যুক্তি উপস্থাপনকালে বলেছেন, আসামিপক্ষ কর্তৃক দাখিলকৃত উচ্চ আদালতের কোনো সিদ্ধান্তই এ মামলার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এটা আমরাও বলব মিলবে না। কারণ এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী মামলা।

আওয়ামী লীগ নেতা কিবরিয়া হত্যা মামলায় অধিকতর তদন্ত নামঞ্জুরের বিষয়ে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে এ আইনজীবী বলেন, ওই মামলায় মাজিস্ট্রেট কোর্ট, দায়রা আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষে অধিকতর তদন্তের আবেদন নামঞ্জুর করেছিল। কারণ একটাই অধিকতর তদন্তে যাওয়ার মতো নতুন কোনো কারণ ছিল না। এ মামলায়ও অধিকতর তদন্তে যাওয়ার মতো কারণ ছিল না। রাষ্ট্রপক্ষ গ্রেনেডের উৎস খুঁজতে যে কারণ দেখিয়েছিল তা প্রথম তদন্তে সুষ্পষ্ট উল্লেখ ছিল।

তিনি বলেন, এ মামলায় মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তি দিয়ে অপর আসামিদের বিচার করা হচ্ছে। কিন্তু হান্নানের স্বীকারোক্তি অন্য কোন সাক্ষী দ্বারা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমান করতে পারেনি। তাই আমি বলব, এখানে বাঘা বাঘা আইনজীবী রয়েছে। আর দুর্বল দিক, মামলার তদন্ত। মামলাটি যাচ্ছে তাই ভাবে তদন্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষে আসামির বিরুদ্ধে তার স্ত্রীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা যাবে মর্মে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী মামলার যে রেফারেন্স দিয়েছেন, সেখানে দেখবেন ঘটনার ৩ মাসের মধ্যে সাক্ষী দিয়েছিল। আর এ মামলায় আসামি মাজেদ ভাটের স্ত্রী ঘটনার ৬ বছর পর সাক্ষী দিয়েছে। আর তিনি প্রথম চার্জশিট হওয়ার আগে সাক্ষ্য দেননি।

আসামি বাবরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সাক্ষীদের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে এ আইনজীবী বলেন, প্রথম চার্জশিট হওয়ার আগে এসব সাক্ষীর কোনো খোঁজ ছিল না। কাহার আকন্দ অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই সকল সাক্ষীদের ঘটনার ৭/৮ বছর পর খোঁজ পাওয়া গেল। তাই তাদের সাক্ষ্যগত কোনো মূল্য নেই।

সোমবারের কার্যক্রম শেষে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউর সৈয়দ রেজাউর রহমান ও মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আমরা যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছি। আসামিপক্ষ যুক্তিখণ্ডন শুরু করেছে। মঙ্গলবার প্রথম দিকেই তাদের শেষ হবে আশা করছি।

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের জামিন বাতিল চাওয়া ৮ আসামি হলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, প্রথম রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটিতে ২৫ কার্যদিবস পদ্ধতিগত বিষয়ের উপর যুক্তি উপস্থাপন করেন। যা চলতি বছর ১ জানুয়ারি শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ১১ সরকারি কর্মকর্তার ৭ বছর কারাদণ্ড দাবি করেন। এরপর আসামিপক্ষ একই বিষয়ের ওপর ৮৭ কার্যদিবস যুক্তি উপস্থাপন করেন। যা গত ২৯ আগষ্ট শেষ হয়। এরপর ২ কার্যদিবস ল-পয়েন্টে আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল ল-পয়েন্টে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে ৩ কার্যদিবসে শেষ করেন। এরপর গত ১২ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষে আরো ২ জন যুক্তি উপস্থাপনের পর প্রসিকিউটর রেজাউর রহমান শুরু করেছিলেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮/মামুন খান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়