ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জামিন বাতিল, কারাগারে সাফাত

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জামিন বাতিল, কারাগারে সাফাত

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের মামলায় আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

একই সাথে সাফাত আহমেদের বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিমের জামিন না মঞ্জুর করা হয়েছে।

বুধবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মো. খাদেম উল কায়েস এ আদেশ দেন।

এদিন মামলাটিতে ধর্ষণের শিকার এক তরুণীকে জেরার দিন ধার্য ছিল। এজন্য ভিকটিম আদালতে হাজির হন। আর মামলার ৫ আসামি ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন। নাঈম আশরাফের পক্ষে তার আইনজীবী মাসুদ রানা মোহাম্মদ হাফিজ তাকে জেরা করেন। কিন্তু এদিন জেরা শেষ না হওয়ায় আদালত আগামী ৬ মার্চ অবশিষ্ট জেরার তারিখ ধার্য করেন।

এরপর সাফাতের জামিন বাতিলের শুনানি হয়। সাফাতের পক্ষে আইনজীবী এবিএম খায়রুল ইসলাম লিটনসহ কয়েকজন আইনজীবী সাফাতের জামিন স্থায়ী করার আবেদন করেন। শুনানিতে তারা বলেন, সাফাতের কিডনিতে পাথর জমেছে। ডান পাশেরটা অপারেশন করা হয়েছে। বাম পাশেরটা অপারেশন করতে হবে। আসামি জামিনের অপব্যবহার করেননি, নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। কোনো শর্ত ভঙ্গ করেননি। আর পলাতক হওয়ার সুযোগ নেই। আর হুমকির বিষয় ভিত্তিহীন। আমরা তার জামিন স্থায়ী করার আবেদন করছি।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদসহ কয়েক জামিন বাতিলের বিষয়ে শুনানি করেন। তারা বলেন, তাকে মেডিক্যাল গ্রাউন্ডে জামিন দেওয়া হয়। বর্তমানে সে সুস্থ। তাকে দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে না। তার জামিন বাতিল করা হোক। তিনি জামিন পাওয়ার হকদার না। আর কারাবিধি অনুযায়ী তার চিকিৎসা করা হোক।

এরপর নাঈম আশরাফের পক্ষে তার আইনজীবী জামিন শুনানি করেন। তিনি বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে নাঈম আশরাফ জেলে আছেন। অপর আসামিরা জামিন পেলেও তিনি জামিন পাননি। এটা একটা দুর্ঘটনা, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ভিকটিম মামলা করার সময় এড়িয়ে গেছেন। ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার ভিত্তিতে তিনি সবই করেছেন। আর ভিকটিম একেক সময় একেক কথা বলছেন। এটা আইনের দৃষ্টিতে সাংঘর্ষিক।

তিনি বলেন, একটা মেয়ে আক্রান্ত হলে শত্রুকে প্রতিহত করবে। তিনি তা করেননি। আর করলে তো তিনি রক্তাক্ত হতেন। তাকে নির্যাতন করা হলে ডাক্তারের কাছে যেতেন। চিকিৎসা না নিয়ে তিনি থাকতে পারতেন না। মামলাটি মিথ্যা বানোয়াট ঘটনার ওপর ভিত্তি করে দায়ের করা হয়েছে। আর আমার মক্কেল বিনা বিচারে দুই বছর ধরে জেল হাজতে আছেন। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমি তার জামিনের প্রার্থনা করছি।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করে বলা হয়, আসামি নিজে এবং ভিকটিম ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। আর লোকলজ্জার ভয়ে ভিকটিম পরে মেডিক্যাল করিয়েছেন। আসামি জামিনে গেলে সাক্ষী আনতে পারব না। আর হুমকি তো দিবেই। এমতাবস্থায় আমরা তার জামিন নামঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।

এদিন ভিকটিম আদালতকে বলেন, কষ্ট করে আমাকে এখানে আসতে হয়। হুমকি-ধামকির অভাব নেই। আমি সাফাতের জামিন বাতিল আর নাঈম আশরাফের জামিন নামঞ্জুর করা হোক।

সাক্ষীর বিষয়ে তিনি বলেন, আমি একটা জব করি। বার বার ছুটি নিয়ে আসতে পারি না। আর এ বিষয়টি বলে ছুটি নেওয়া যায় না। তারা কি আমার সিকিউরিটি দিবে। তারা তো জামিন নিয়ে হসপিটালে থাকে আবার বাইরেও থাকে।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত সাফাতের জামিন বাতিল ও নাঈম আশরাফের জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেন। এরপর তাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। শুনানিকালে জামিনে থাকা অপর আসামি সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে কারাগারে থাকা আসামি নাঈম আশরাফকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ২৯ নভেম্বর সাফাত আহমেদের জামিন মঞ্জুর করে একই বিচারক। এর আগে বিভিন্ন সময় ধর্ষণের সহযোগী অপর আসামিরা জামিন পেয়েছেন। গত ১৫ জানুয়ারি সাফাতের জামিন বাতিলের আর নাঈম আশরাফের জামিনের আবেদন করা হয়।

২০১৭ সালে ২৮ মার্চ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে অস্ত্রের মুখে ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। এ  অভিযোগে ৬ মে বনানী থানায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই বছর ৭ জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটে আসামি সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়। অপর আসামি সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসনের বিরুদ্ধে ওই আইনের ৩০ ধারায় ধর্ষণের সহযোগিতার অভিযোগ করা হয়। ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই ট্রাইব্যুনাল আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে চার্জ গঠন করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/মামুন খান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়