ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অত্যধিক পরিশ্রম যেভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১২ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অত্যধিক পরিশ্রম যেভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : জাপানে ৩১ বছর বয়সি এক নারী একমাসে অফিসে ১৫০ ঘণ্টারও বেশি  ওভারটাইম করে কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউরে মারা যান। তার নিয়োগকর্তা এ খবরটি জানান।

মিওয়া স্যাডো নামের এই নারী ছিলেন জাপানের ন্যাশনাল পাবলিক ব্রডকাস্টিং অর্গানাইজেশন এনএইচকে এর সাংবাদিক। তিনি ২০১৩ সালের জুলাইয়ে নিজ বাসায় মারা গেলে নিউজ আউটলেটটির এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। অ্যাসাহি শিম্বান নিউজপেপারের মতে, শ্রম কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তে আসেন যে, স্যাডোর মৃত্যুর কারণ ছিল ওভারওয়ার্ক বা অতিরিক্ত পরিশ্রম। এনএইচকে বলেন, স্যাডো তার মৃত্যুর পূর্বে একমাসে প্রায় ১৫৯ ঘণ্টা ওভারটাইম পরিশ্রম করেন।

উচ্চমাত্রার স্ট্রেস বা মানসিক চাপ হার্টের কার্যকলাপকে হার্টের স্বাভাবিক কার্যকলাপের তুলনায় কঠিনতর করে তুলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। ওভারওয়ার্কের সঙ্গে মৃত্যুর সম্পর্ক নিয়ে নিচে আলোকপাত করা হল।

স্ট্রেস হার্টে যা করে
স্ট্রেস সবাইকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। স্ট্যানফোর্ড কার্ডিওভাসকুলার হেলথের মেডিক্যাল পরিচালক অ্যালান ইয়াংয়ের মতে, দুই প্রকার ইমোশনাল স্ট্রেস বা মানসিক চাপ হার্টকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সাধারণত হঠাৎ আঘাতমূলক ঘটনার, যেমন- গাড়ি দুর্ঘটনা কিংবা ভূমিকম্প, পর তীব্র স্ট্রেস শুরু হয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেসে রূপ নেয়। ইয়াং বলেন, অত্যধিক ঘণ্টা কাজ করলে স্বাস্থ্যহানিকর চালচলনে, যেমন- নিম্নমানের খাবার খাওয়া কিংবা ব্যায়াম না করা, দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস হতে পারে এবং তা রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে পারে। যখন কোনো ব্যক্তি যেকোনো প্রকার স্ট্রেসে উচ্চমাত্রায় ভুগবে, তার হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।

ইয়াং বলেন, উভয় প্রকার স্ট্রেসের আধিক্য হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে সেসব মানুষদের মধ্যে যাদের হার্টের সমস্যা বা হৃদরোগ রয়েছে।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, হার্ট পাম্প করতে না পারলে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত শরীরের কোষে সরবরাহ না হলে হার্ট ফেইলিউর হয়।৬০ লাখেরও বেশি আমেরিকান অধিবাসীর হার্ট ফেইলিউর আছে (শ্বাসকষ্ট, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব এবং ক্ষুধা বুঝতে অসমর্থ্য বা ক্ষুধার অভাব হচ্ছে হার্ট ফেইলিউরের লক্ষণ) এবং প্রতিবছর ৯০০,০০০ নতুন রোগীর মধ্যে তা ধরা পড়ছে। যে কারো মধ্যে হার্ট ফেইলিউরের বিকাশ হতে পারে, কিন্তু এটি বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশ কমন এবং প্রথমে যাদের অন্য কোনো হার্টের সমস্যা থাকে তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে এটি হতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হার্ট ফেইলিউরের বিকাশ হয়। চিকিৎসা এবং ওষুধের ব্যবহারে এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। চিকিৎসা বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া এটি মারাত্মক পরিস্থিতি বা প্রাণনাশের কারণ হতে পারে।

অত্যধিক পরিশ্রমে মৃত্যুর সম্ভাবনা যতটুকু
অত্যধিক পরিশ্রমে মৃত্যু হওয়া সম্ভব, কিন্তু সম্ভাবনা খুব কম। ইয়াং বলেন যে, স্ট্রেসের কারণে হার্ট ফেউলিউর সম্ভবত মারাত্মক হতে পারে যদি বিভিন্ন বিষয় একসঙ্গে দেখা দেয়, যেমন- দীর্ঘসময় ধরে বিকাশমান স্ট্রেস, হঠাৎ মানসিক চাপপূর্ণ পরিস্থতি এবং হার্টের অন্য কোনো সম্ভাব্য খারাপ অবস্থা। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে মৃত্যু বেশ বিরল ঘটনা। আপনার এমন অবস্থা হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন এবং আশা করা যায় তা প্রশমিত হবে।

যেভাবে স্ট্রেস প্রতিরোধ করা যায়
যেসব লোকের হার্ট দুর্দশার উপসর্গ আছে তাদের জরুরি ভিত্তিতে মেডিক্যাল সেবা গ্রহণ করা উচিত। স্ট্রেস সমস্যায় রূপ নেওয়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণ করতে আপনি অনেক উপায় অবলম্বন করতে পারেন। ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ধূমপান থেকে বিরত থাকা, শান্ত পরিবেশে সময় কাটানো এবং বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সমর্থন বা সহায়তা হচ্ছে কয়েকটি পরিচিত উপায় যা স্ট্রেস কমাতে পারে।

তথ্যসূত্র : টাইম

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ অক্টোবর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়