ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যে ১০ সাধারণ কারণে চাকরি যেতে পারে

মাহমুদা মিতুল ইভা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ২৮ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে ১০ সাধারণ কারণে চাকরি যেতে পারে

প্রতীকী ছবি

মাহমুদা মিতুল ইভা : সাধারণত কোনো ব্যক্তির কর্মদক্ষতা এবং কাজের প্রতি মনোযোগ তার চাকরি জীবনকে দীর্ঘায়িত করে। কিন্তু এমন কিছু আপাত দৃষ্টিতে ‘সাধারণ’ কারণ আছে, যার ফলে কর্মদক্ষ হওয়া সত্ত্বেও চাকরি চলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। সেরকম ১০টি কারণ নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন।

* অফিসে বেশি রোমান্টিক হয়ে যাওয়া

এটা অবশ্য সাধারণ কারণ নয়। অনেকেই আছেন যারা সহকর্মীর সঙ্গে অতিরিক্ত রোমান্টিক হয়ে যান। এভলিন ম্যাগিওরোস স্নো নামে একজন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক বলেন, ‘আমি সাধারণত কাজে অদক্ষতার জন্য কর্মীদের বরখাস্ত হতে দেখেছি কিন্তু একবার দুইজন কর্মীকে ভিন্ন এক কারণে আমি চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হই। তারা অফিস চলাকালীন সময়ে অতিরিক্ত রোমান্টিকতায় লিপ্ত হোন এবং তা একরকম প্রকাশ্যেই ছিল। তারা দুজনই বিবাহিত ছিল কিন্তু একে অপরের সঙ্গে নয়।’ অনেক কোম্পানি আছে যেখানে কর্মী, ক্লায়েন্ট এবং বোর্ড মেম্বারদের মধ্যে এ ধরনের ঘনিষ্ঠতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরও যারা নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না তাদের জন্য চাকরির ছাড়পত্র ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো রাস্তা নেই।

* ভেন্ডর বা ক্লায়েন্টের কাছ থেকে উপহার নেওয়া

উপহার আদান-প্রদান একটি সুন্দর সম্পর্ক রচনা করে। বেশকিছু কোম্পানিতে এই উপহার আদান-প্রদানের কাজ খুবই গর্হিত হিসেবে দেখা হয় এবং এর ফলে আপনার চাকরি চলে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছুই নয়। আপনি যদি কোনো রাজনৈতিক সংস্থা বা সরকারি সংস্থার হয়ে কাজ করেন তাহলে এই উপহার নেওয়ার কারণে আপনি চাকরি চলে যেতে পারে। কিছু কোম্পানিতে এই ব্যাপারগুলো অলিখিত আইন হিসেবে চলে।

* অতিরিক্ত সুবিধাবাদী হওয়া

বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মীদের জন্য নানারকম সুবিধা দেওয়া থাকে। তার মানে এই নয় যে, আপনি সবসময় সুযোগ খুঁজবেন বা সুবিধার অপব্যবহার করবেন। এর ফলে আপনার চাকরি চলে যেতেই পারে। কারো চাকরি যাওয়ার কারণ যদি কাজে ব্যর্থতা না হয়, তাহলে তা অবশ্যই ন্যায়পরায়ণতার লঙ্ঘনের কারণে হয়ে থাকবে। বড় বড় কোম্পানিগুলোতে কর্মীদের সুবিধার জন্য অফিসের কাজের জন্য খরচ, গাড়ির ব্যবস্থা এবং খাবার-দাবারের ব্যবস্থা থাকে। অনেকেই আছেন যারা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এ সকল সুবিধা ব্যবহার করে থাকেন, যা কোম্পানির নিয়মবিরুদ্ধ একটা কাজ। অফিসিয়াল কাজে বরাদ্দকৃত অর্থ নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের কার্যকলাপের জন্য কোম্পানি কোনো কর্মী বা কর্মকর্তাকে ছাড় দেয় না। তাদের সরাসরি বরখাস্ত করা হয়।

* পোশাক সচেতন না হওয়া

আপনি চাকরির চেয়েও বেশি আপনার ঘাড়ের ওপর মাকড়শার ট্যাটু চান? তাহলে চাকরি খোয়াতে পারেন। আপনার পোশাক পরিধানের রীতি অবশ্যই অফিসের নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে। আপনি কোনো ফ্যাশন সংস্থায় কাজ করলে নিত্য নতুন স্টাইল গ্রহণ করতেই পারেন। কিন্তু অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে হলে, আপনি যে অবস্থানে চাকরি করেন সে অনুযায়ী পোশাক পরিধান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া পোশাক বিষয়ে সচেতনতা আপনাকে কাজের মধ্যে মিশে যেতে সাহায্য করে এবং চাকরিজীবনে এনে দেয় সফলতা। আপনার সহকর্মীদের থেকে একেবারে আলাদা ধরনের পোশাক পরে অফিসে আসলে আপনার চাকরি চলে যেতে বাধ্য।

* লুক পরিবর্তন

হয়তো আপনার ওজন কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে কিংবা মাথার চুল কমেছে অথবা আপনি চুল কিংবা গোঁফ অনেক বড় করেছেন। কোম্পানি যদি মনে করে যে, অফিসে আপনার অবস্থান অনুযায়ী লুক ধরে রাখতে আপনি ব্যর্থ হয়েছেন, তাহলে আপনার চাকরি হারাতে হতে পারে। আপনি বুঝতেই পারবেন না কি কারণে আপনার চাকরি গেল। অনেক কোম্পানিই এমন কিছু নিয়ম অনুসরণ করে যা প্রকৃতপক্ষে আইনসম্মত নয়। তাছাড়া বেশিরভাগ কোম্পানি তাদের এ সকল ব্যাপারগুলো গোপনীয় রাখে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে অসচেতন থাকলেও চাকরি যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনার চাকরি নিরাপদ রাখতে আপনার পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা এবং সাজগোজ ঠিক রাখুন। পারলে সবসময় হাসিমুখে থাকার চেষ্টা করুন।

* বয়স্ক হয়ে গেলে

অনেক কোম্পানিই আছে যেখানে পুরাতন কর্মীদের ছাটাই করে দেওয়া হয়। কেননা পুরাতন কর্মীদের বেশি বেতন দেওয়ার চেয়ে কম বেতনে নতুন কর্মী নিয়োগ করা সুবিধাজনক মনে করে কোম্পানিগুলো। বয়স নিয়ে বৈষম্য করা বেআইনি এবং অনেক কর্মীই এই বৈষম্যের বিরোধিতা করেন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক তথ্য অনুযায়ী, বয়সের কারণে চাকরি থেকে ছাটাইয়ের ব্যাপারটা সাম্প্রতিককালে বেশ বেড়ে গেছে। আপনার যোগ্যতা এবং কাজের দক্ষতা দিয়ে এরকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করুন। আপনার বয়স বাড়ার পাশাপাশি চাকরি অব্যাহত রাখার পূর্ণ অধিকার আপনার আছে।

* কর্পোরেট সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই না হলে

প্রতিটি কোম্পানিরই কিছু অলিখিত আইন-কানুন থাকে। অনেকসময় দেখা যায় রাজনৈতিক, স্থানীয় বিভিন্ন ব্যাপার এবং ব্যক্তিগত বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে কোম্পানি কাজ করে থাকে। সুজান ফ্রিডম্যান নামে একজন বলেন, তার একজন সহকর্মী অফিসের সবাইকে বড়দিনের কার্ড দেওয়ার জন্য চাকরি হারান। তারা একটি পশু অধিকার সংস্থার হয়ে কাজ করতেন। সুজানের সহকর্মী একজন নিরামিষভোজী ছিলেন অফিসের বাকি সবার মতো। কিন্তু তার স্বামী একজন শিকারী ছিলেন এবং তার সন্তানরাও। এই ব্যাপারটি সুজানের সহকর্মী গোপন করেন। একবার বড়দিনে তিনি অফিসের সবাইকে কার্ড দেন যাতে সেসহ তার পরিবারের ছবি ছিল। ছবিতে তারা একটি ফায়ারপ্লেসের সামনে বসে ছিল এবং চারপাশের দেয়ালে বিভিন্ন পশুর মাথা দিয়ে তৈরি ট্রফি লাগানো ছিল। সুজানের সহকর্মী খেয়াল না করে সবাইকে কার্ড দিয়ে ফেলেন। প্রথমে তাকে ছাটাই করা হয়নি তবে তার সঙ্গে সবার স্বাভাবিক আচরণ করা বন্ধ হয়ে যায়। তার বেতনবৃদ্ধি এবং পদোন্নতি আটকে যায়। তিনি জানতেন যে তিনি চাকরি হারাতে চলেছেন এবং কিছুদিন পর তাকে বরখাস্ত করা হয়।

* কোনো কিছু গোপন করলে

সবার জীবনেই গোপন অনেক ঘটনা থাকে। আপনি যদি আপনার অতীতকে চাপা দিয়ে ফেলেন এবং আপনার কর্মস্থল প্রধান সেটা যদি না জানেন তাহলে আপনার চাকরি নিয়ে টানাটানি লেগে যেতে পারে। কাইল নামে একজন কর্পোরেট কর্মকর্তা এমনই একটি ঘটনা বর্ণনা করেন, কাইলের একজন সহকর্মী ১৫ বছর বয়সে সামান্য পরিমাণ গাঁজা নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন যা তার অফিস জানতো না। পরবর্তীতে একটি ব্যবসায়িক সফরে যাওয়ার সময় তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মুখীন হতে হয় এবং তা একজন সহকর্মী দেখে অফিসের বসকে বলে দেয়। ফলে কাইলের সেই সহকর্মীর চাকরি চলে যায়। আপনি হয়তো আপনার অফিসকে আপনার গোপনীয় কোনো কথা নাও বলতে পারেন, কিন্তু তা যদি কোনো সময় সামনে চলে আসে তাহলে সেটা কিভাবে প্রতিহত করবেন আগে থেকেই চিন্তা করে রাখুন। বেশিরভাগ কোম্পানি অতীতের নানান ঘটনা নজরান্দাজ করলেও আপনি কিছু গোপন করলে তারা মেনে নিতে চায় না বরং মনে করে আপনি তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। সুতরাং কোনো চাকরির আবেদনে কখনো মিথ্যা তথ্য দেবেন না। কোনো বিষয় পরে বুঝিয়ে বলার চেয়ে প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া সহজ।

* সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কার্যকলাপ

আপনি হয়তো মনে করতে পারেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার নানা কার্যকলাপ আপনার অফিসের সীমার বাইরে। কিন্তু বাস্তবিকভাবে তা নয়। আপনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কি করছেন তা আপনার অফিস প্রতিনিয়ত খোঁজ রাখে। কোনো কর্মীর ফেসবুক পোস্ট যদি তার অফিস পরিপন্থী হয় তাহলে তার চাকরি হারানোর সম্ভাবনা থাকে। ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর ছবি, নেতিবাচক লেখালেখি কোনো কর্পোরেট অফিসই বরদাস্ত করবে না। নেতিবাচক লেখালেখি অর্থাৎ স্পর্শকাতর বা রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে উল্টাপাল্টা লেখা বা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা থেকে বিরত রাখুন। সামান্য ভুলচুকের ফলে আপনার চাকরি চলে যেতে পারে।

* যৌন আবেদন জাগানো পোশাক পরিধান

পোশাকের কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যদিও কোনোভাবেই ঠিক নয় কিন্তু যেকোনো কোম্পানি চাইলে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী কর্মী ছাটাইয়ের কাজ করতে পারে। তবে আপনি পুরুষ হন বা নারী, আপনার পোশাকের মাধ্যমে যদি যৌন আবেদন প্রকাশ পায় তাহলে আপনার চাকরি ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। যেকোনো কোম্পানিই শালীনতার ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। যেকোনো প্রকারের পোশাক পরার অধিকার আপনার থাকলেও শালীনতা ভঙ্গের অধিকার আপনার নেই। অতিরিক্ত খোলামেলা পোশাক অফিসের কাজের পরিবেশ নষ্ট করে। সুতরাং অফিসের নিয়ম অনুযায়ী মার্জিত পোশাক পরে অফিসে আসুন। আপনি কখনোই চাইবেন না যে পোশাককে কেন্দ্র করা আপনার চরিত্র নিয়ে কেউ কথা বলুক। তাছাড়া অশালীন পোশাকে অফিসে আসার কারণে আপনার চাকরি চলে যেতে পারে খুব সহজেই।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ এপ্রিল ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়