ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ঈদে পকেটমারের শিকার হওয়ার পূর্ব লক্ষণ (শেষ পর্ব)

মাহমুদুল হাসান আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৩ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈদে পকেটমারের শিকার হওয়ার পূর্ব লক্ষণ (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

মাহমুদুল হাসান আসিফ : ঈদের এই ছুটিতে আপনি নিশ্চয় কোনো স্থানে বেড়াতে গিয়েছেন বা যাবেন। যে স্থানেই যান না কেন, আপনার আশেপাশে কোনো পকেটমার আছে কিনা সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। পকেটমারের খপ্পরে পড়তে পারেন এমন কিছু কারণ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* রাস্তাঘাটে অযথা কোনো ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি হওয়া
পকেটমাররা এটা খুব ভালো করে জানে যে, মানুষজন রাস্তাঘাটে কোনো ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি দেখলে সেটার দিকে একবার ঢুঁ মারবেই। সুতরাং তারা নিজে থেকেই রাস্তাঘাটে একটি নাটক সাজিয়ে নেবে যাতে সেখানে ভিড় জমে যায়। এই সুযোগে তাদেরই একজন পকেটমারি শুরু করে দেবে। আইডেন্টিটি থেফট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিষ্ট এবং পিকপকেট ডটকমের লেখক জেন টার্নার বলেন, ‘পকেটমাররা সুযোগে থাকে কখন আপনি আপনার মানিব্যাগ এবং কাছে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেবেন।’ তাছাড়া পকেটমাররা মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য অসুস্থ হওয়া, মাটিতে পরে যাওয়ার অভিনয় করে এবং এই সুযোগে আপনার মূল্যবান জিনিস অথবা টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়।

* আপনার সঙ্গে থাকা ব্যাগ চেয়ারে ঝুলিয়ে রাখা
আপনার পরিচিত কোনো স্থানে কাঁধের ব্যাগ, কোট বা জ্যাকেট আপনি চেয়ারে ঝুলিয়ে রাখতেই পারেন। কিন্তু অচেনা এবং ভিড়ময় কোনো জায়গায় অবশ্যই আপনি এই কাজটি করতে চাইবেন না। দক্ষ চোরেরা চলমান অবস্থায়ই আপনার ব্যাগ আপনার অজান্তেই উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সুতরাং আপনার সঙ্গে থাকা ব্যাগ এমন কোনো জায়গায় রাখুন যেন আপনি সেটা সবসময় চোখে চোখে রাখতে পারেন, যেমন: কোলের উপর বা পায়ের সামনে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি আপনার ব্যাগ চেয়ারের সঙ্গে ভালোমতো আটকে রাখুন যাতে সহজে সেটা কেউ হাতিয়ে নিতে না পারে।

* রাস্তাঘাটে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা
মনোযোগ নষ্ট করার অন্যতম একটা মাধ্যম হচ্ছে প্রযুক্তি। আপনি যখন রাস্তাঘাটে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছেন, তখন সাধারণত আপনি আপনার চারপাশে খেয়াল রাখতে ভুলে যান। ফলে পকেটমার অথবা চোরেরা সহজেই আপনাকে আক্রমণ করার সুযোগ পেয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে চোরদের পক্ষে হেডফোনটি খুলে মোবাইল নিয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপারই না। আপনি হয়তো মনে করবেন হেডফোনে কোনো সমস্যা হয়েছে অথবা মোবাইলের চার্জ শেষ। ব্যাপারটি ধরে ফেলার আগেই সেই চোর আপনার চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে যাবে।

* অপরিচিত কারো যেচে গল্প জমানো
বেশ ভিড়ময় কোনো জায়গায় অপরিচিত কারো সঙ্গে আমরা অনেকসময় ভালোরকম গল্প জমিয়ে ফেলি এবং পকেটমাররা সাধারণত এটারই সুযোগ নিয়ে থাকে। পকেটমারদের অন্যতম একটি পুরোনো পদ্ধতি হচ্ছে, ভিড়ের মধ্যে কেউ আপনাকে ইচ্ছা করে ধাক্কা দেবে এবং এই সুযোগে অন্য আরেকজন আপনার মানিব্যাগ বা অন্যান্য মূল্যবান জিনিস হাতিয়ে নেবে। বাসে বা ট্রেনে যাতায়াতের সময় ভিড়ের মধ্যে আপনার কাছে অবস্থান নেওয়া লোকগুলোর ওপর নজর রাখুন। আপনি হয়তো সহজাতপ্রবৃত্তিবশত তাদের দিকে পেছন দিয়ে দাঁড়াবেন এবং এই সুযোগেই পকেটমার অথবা চোরেরা তাদের কাজ সেরে ফেলবে। কারো দিকে পেছন না দিয়ে বরং আপনি অন্য কোথাও অবস্থান নিন। কাউকে সন্দেহ হলে তাকে চোখে চোখে রাখুন। কেননা কোনো চোর বা পকেটমার নিজের পরিচয় প্রকাশ করে চুরি করতে চাইবে না।

* ম্যাপ দেখা বা অন্য কোনো কাজে সাহায্য করতে চাওয়া
অনেকসময় পকেটমাররা পর্যটক সেজে কাউকে ম্যাপ দেখা বা কোনো জায়গা খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করে। অনেকসময় তারা আপনার মুখের সামনে ম্যাপটি মেলে ধরে পকেটমারি অথবা চুরির চেষ্টা করতে পারে, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। অনেকসময় সত্যিকার অর্থেই কারো সাহায্যের দরকার হতে পারে। সেজন্য কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করে সহজ ভাষায় না করে দিন। আপনি যদি নিতান্তভাবেই কাউকে সাহায্য করতে চান, সতর্ক থাকুন; কেননা এমন হতে পারে যে আপনার ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে আরেকজন চুরি করে ফেললো। ভালো হয় যদি আপনি বিশ্বাসযোগ্য পরিচিত কারো সঙ্গে ঘুরতে বের হোন এবং আপনার মূল্যবান বস্তুগুলোর ওপর সবসময় কড়া নজর রাখুন।

* আপনার সামনে কোন জিনিস ফেলে দেওয়া
আপনাকে হতবুদ্ধি করে কোনো জিনিস হাতিয়ে নেওয়ার এটা অন্যতম একটা পদ্ধতি। ভিড়গ্যাঞ্জামের অজুহাতে চোর এবং পকেটমারেরা অনেকসময় আপনার কাছাকাছি কফি, আইসস্ক্রিম বা অন্য কিছু ফেলে দিতে পারে। এমনকি তারা যাদের টার্গেট করে সরাসরি তাদের গায়ের উপরেও এগুলো ফেলে দেয়। এভাবে তারা সেই ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্য বাধ্য করে বা কোনো না কোনোভাবে হতবুদ্ধি করে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। সাধারণত এটিএম বুথের আশেপাশে এগুলো বেশি হয়। কেননা সেখান থেকে কেউ টাকা বের করে চলে যাওয়ার সময় পকেটমারেরা তাদের কার্যসিদ্ধির উদ্দেশ্যে ঘোরাঘুরি করে। কেউ আপনার গায়ে কিছু ফেলে দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করলে সতর্ক থাকুন। কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা সাহায্য নয়, আপনার কাছ থেকে কিছু চুরি অথবা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আসে।

* আপনার টের পাওয়ার ধারণা
কেউ সাধারণত পকেটমারির সময় টের পান না যে তার সঙ্গে এমন কিছু ঘটে গেছে। কেননা বেশিরভাগ পকেটমাররাই বেশ দক্ষ হয়ে থাকে। এ বিষয়ে টার্নার বলেন, ‘আমি সবসময়ই বলি একজন দক্ষ পকেটমার আমার কাছ থেকে সবকিছু হাতিয়ে নেবে এবং আমি টেরও পাব না।’ আপনি যদি মনে করেন যে, কেউ আপনার পকেট মারলে আপনি অবশ্যই তা টের পাবেন তাহলে আপনি বোকার রাজ্যে বসবাস করছেন। টার্নার এ বিষয়ে আরো বলেন, ‘পকেটমাররা খুব ভালো করে জানে যে তারা কিছু চুরি করলে আপনি সেটা ধরতেই পারবেন না এবং তারা বেশিরভাগক্ষেত্রে এটারই সুযোগ নিয়ে থাকে।’

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ আগস্ট ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়