মনে রাখতে পারছেন না কিছুই!
প্রতীকী ছবি
ঝুমকি বসু : সকাল আটটা। অফিস যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। অথচ এই তাড়াহুড়ার সময়ে বাসায় খোঁজ খোঁজ রব। খুঁজে পাচ্ছেন না আপনার চশমা। খাবার টেবিল থেকে শুরু করে রান্নাঘর, বাথরুম তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় রেখেছেন কিছুতেই মনে করতে পারছেন না। শেষমেশ পাওয়া গেল আলমারির মাথার উপর থেকে।
আজ চশমা তো কাল মোবাইল, পরশু ছেলের পানির বোতল- প্রতিদিনই কোনও না কোনও জিনিস খুঁজে পাচ্ছেন না। তাহলে কি আপনার স্মৃতিশক্তিতে একটুআধটু মরচে পড়তে শুরু করেছে? এটাও ঠিক যে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা মেমোরি নষ্ট হয়েই থাকে। এটা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। কিন্তু জানেন কি অল্প বয়সেও অনেকের এমনটা হতে পারে? অনেক কাজ একসঙ্গে করা, মানসিক জটিলতা, স্ট্রেস, খাওয়াদাওয়ার হেরফেরের কারণেও কমে যেতে পারে আপনার স্মৃতিশক্তি।
* ঘুমের অভাব : সারাদিনের ক্লান্তির পর বিছানায় শুলে এমনিতেই চোখের পাতা জুড়ে আসে। তারপর লম্বা একটা গভীর ঘুম। সকালে উঠেই একেবারে ঝরঝরে। কিন্তু সবসময় তো এরকম নিয়ম মেনে ঘুম আসে না। আর ভালো ঘুম না হলে সকালে উঠেই কেমন যেন লাগে। আধঘুম চোখে সবই অস্পষ্ট। কোন কাজটা জরুরি, কোনটা পরে করলেও চলবে- সব গুলিয়ে যায়। এরকম ঘুমের ব্যাঘাত প্রায়ই ঘটলে, তা থেকে হতে পারে মেমোরি লস। ঘুম কম হলে ব্রেনে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় স্মৃতিশক্তিতে তার প্রভাব পড়ে। মরচে ধরতে শুরু করে মনে রাখার ক্ষমতায়।
শুধু যে পর্যাপ্ত সময় ঘুমালেই মনে রাখার ক্ষমতা ঠিক থাকবে তা নয়। চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর। কয়েকদিন কষ্ট করে অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে, এরপর শরীর নিজ থেকেই এই সাইকেল ফলো করতে শুরু করবে। তখন চিন্তাধারা অনেক স্বচ্ছ মনে হবে, সহজেই প্রয়োজনীয় জিনিস মনে রাখতে পারবেন।
* খাওয়াদাওয়া : অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অভাব, ভিটামিনের ঘাটতি আর অ্যানিমিয়া- স্মৃতিশক্তি দুর্বল করার জন্য এই তিনটিই যথেষ্ট। শরীর গ্লুকোজ ঠিকমতো পাচ্ছে কী না, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ গ্লুকোজ ব্রেনের প্রধান উপকরণ। তাই খাওয়াদাওয়ার ঘাটতি হলে ব্রেনের কার্যক্ষমতাও গোলমেলে হয়ে যায়। প্রতিদিন খেতে পারেন একটি আপেল। কারণ আপেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
* হরমোনের তারতম্য : হাইপোথাইরয়ডিজম মনযোগে বাঁধা সৃষ্টি করে। তাই যাদের এই রোগ রয়েছে, তাদের মন দিয়ে কাজ করতে অসুবিধা হয়। তারা কিছু মনে রাখতে পারেন না। যাদের হাইপোথাইরয়ডিজম আছে তারা বছরে একবার হরমোন লেভেল চেক করে নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খান।
* হার্টের সমস্যা : হার্টের অসুখ যাদের রয়েছে, তারাও স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটলে ব্রেন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই বয়স ত্রিশ পার হলেই সবার নিয়মিত কোলেস্টেরল লেভেল চেক করা উচিৎ।
* জীবনযাত্রা : খাওয়াদাওয়া, ঘুম আর সারাদিন বসে বসে কাজ। রোজকার এই রুটিন হলে কমে যেতে পারে মনে রাখার ক্ষমতা। শারীরিক পরিশ্রম করলে ব্রেন সতেজ থাকে। ব্যায়াম ব্রেনের নিউরোট্রফিক লেভেল বাড়ায় যা স্মৃতিভ্রম ঠেকাতে সাহায্য করে। তাই যত কায়িক শ্রম করবেন ব্রেনও থাকবে তত অ্যাক্টিভ। বাড়বে মনে রাখার ক্ষমতা।
পড়ুন :
* শর্ট টাইম মেমোরি লস রোধ করে যেসব খাবার
* অ্যালঝেইমারস রোগের প্রাথমিক ১০ লক্ষণ
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন