ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নিজের আঙিনায় এবারের বিজয় উৎসব

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৯, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নিজের আঙিনায় এবারের বিজয় উৎসব

হাসান মাহামুদ : চলছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বিজয়ের গান-কবিতা ও নাটকে রঙিন এখন রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন। বিজয়ের মাসে প্রতিটি আয়োজনে ওঠে আসে বাঙালির বীরত্বগাথার আনন্দ ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় চেতনার আহ্বান। সেই ধারাবাহিকতায় এবারো হতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সপ্তাহব্যাপী বিজয় উৎসব।

বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থাপিত নতুন ভবনে ‌‘মানবাধিকার দিবস থেকে বিজয় দিবস’ শিরোনামে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এছাড়া মিরপুরে অবস্থিত জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠেও থাকছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তিনদিনের আয়োজন।

এবারই প্রথমবারের মতো রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নিজস্ব ভবনে ‘মানবাধিকার দিবস থেকে বিজয় দিবস’ শীর্ষক এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

গত বছর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আঙিনায় অনুষ্ঠিত হয় বিজয় উৎসব। এবার আগারগাঁওয়ে স্থায়ী মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উৎসবটি। গত ২২ মার্চ এই ভবনে স্থানান্তরিত হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ তারিখেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

আজ ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসেই সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন হবে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে হবে সমাপনী পর্ব। বিজয় দিবস পর্যন্ত প্রতিদিন জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন, উন্মুক্ত মঞ্চ, সবুজ চত্ত্বর ও ভাস্কর্য অঙ্গনে প্রতিদিন বিকেল ৩টায় বসবে এ আয়োজন।

প্রতিদিন বিকাল ৩টায় শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান অনুষ্ঠানে প্রতিদিন শোনা যাবে গানের সুর, কবিতার ছন্দ, নৃত্যের নান্দনিকতা ও পথনাটকের পরিবেশনা। সেই সঙ্গে প্রতিদিনের আনুষ্ঠানিকতায় যুক্ত হয়েছে তরুণ প্রজন্মের ভাবনায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোচনা।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও আলোচনায় সাজানো উৎসবের প্রথম দিনের আয়োজন শুরু হবে আজ বিকাল থেকে। স্পন্দনের নৃত্যশিল্পীদের উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ আয়োজন। এরপর মানবাধিকার বিষয়ক একক বক্তৃতা দেবেন এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।

এবারের বিজয় উৎসবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব জেনোসাইড অ্যান্ড জাস্টিসের তরুণ গবেষক দল কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সংগৃহীত সাক্ষ্য-বিবরণী সংবলিত তাদের প্রতিবেদন পেশ করবেন। আলোচনা করবেন গণহত্যা অধ্যায়নে আন্তর্জাতিকভাবে আর্জেন্টিনার খ্যাতিমান বিশেষজ্ঞ ইরিনা মাসিমিনো। সবশেষে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত বর্বরতাসহ দেশে দেশে গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ-চেতনামূলক সংগীত পরিবেশন করবেন ব্যান্ড সংগীতদল অবসকিওর।

সপ্তাহব্যাপী আয়োজনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নৃত্য, সংগীত, আবৃত্তি, পথনাটক, সারিগান, বাউল গান, সঙযাত্রা, লোকগীতি, নৃত্য-নাট্য, রাসযাত্রা, উল্টাগীত, কবিগান ও যাত্রাপালা পরিবেশন করবে। অনুষ্ঠানে ২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও ছয়টি নৃত্যদল, সাতটি সংগীত সংগঠন, আটটি নাটকের দল, ছয়টি আবৃত্তি সংগঠন, পাঁচটি শিশুকিশোর সংগঠন অংশ নেবে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাক্তার সারওয়ার আলী বলেন, আমরা ৭দিন ধরেই তরুণদের মুখে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ের তাদের ভাবনার কথা শুনবো। বিজয় উৎসবের মাধ্যমে আমাদের চেতনাকে জাগানোর আহ্বান জানানো। একই সঙ্গে একাত্তরে পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা এদেশে যে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, দেশ স্বাধীনের ৪৫ বছর বর্তমানে সেই মানবাধিকারের অবস্থানটিও জানতে পারব তাদের মাধ্যমে।

১৬ ডিসেম্বর সকালে শিশু-কিশোরদের জন্য থাকবে আনন্দ অনুষ্ঠান। এছাড়া ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসেও থাকবে বিশেষ আয়োজন। প্রসঙ্গত, গত বছরের বিজয় দিবস আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মুক্তিযুদ্ধ : তারুণ্যের ভাবনা’।

মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠে তিন দিনব্যাপী আয়োজনে ২৭টি সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নেবে।

১৯৯৬ সালে সেগুনবাগিচায় ভাড়াবাড়িতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যাত্রা শুরু। গত কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় আগারগাঁওয়ে প্রায় এক একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের দৃষ্টিনন্দন কমপ্লেক্স। গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুতল বিশিষ্ট এই জাদুঘরের উদ্বোধন করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ ডিসেম্বর ২০১৭/হাসান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়