ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বায়ান্নর আবেগে সজ্জিত শহীদ মিনার

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বায়ান্নর আবেগে সজ্জিত শহীদ মিনার

ছবি : শাহীন ভূঁইয়া

হাসান মাহামুদ : পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য একমাত্র প্রাণ উৎসর্গকারী দেশ বাংলাদেশ। অসংখ বীরের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলা আদায়ের সেই লড়াই আজ বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। বাঙ্গালি জাতির স্বাধীনতাসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রেরণা জোগানো সেই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানোর উপলক্ষ্য আজ দুয়ারে।

পুরো জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে বায়ান্নর বীরদের। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস-২০১৯ উদযাপনে প্রস্তুত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। বায়ান্নর আবেগে সজ্জিত হয়েছে পুরো শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।

গত কয়েকদিন শহীদ মিনারের চৌহদ্দি জুড়ে ধোয়ামোছা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রঙয়ের কাজ চলে। সামনের রাস্তায় চলে দেয়াল লিখন।

আজ একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা আন্দোলনে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর সাধারণ মানুষের ঢল নামবে শহীদ মিনারে। শ্রদ্ধার অর্ঘে ঢেকে যাবে শহীদ বেদি।

শহীদ মিনার এলাকায় নিরাপত্তা বলয়
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

দুদিন আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণে গিয়েছিলেন তিনি। তখন গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি জানান, সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি না থাকলেও সবকিছু মাথায় রেখেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সবাই যাতে নিরাপদে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনার এলাকায় ইউনিফর্ম পরিহিত পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা বাহিনীও নিয়োজিত থাকবে। সিসিটিভির আওতায় থাকবে এ এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি।

বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শহীদ মিনার এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, নির্দিষ্ট প্রবেশপথ দিয়ে সবাইকে প্রবেশ করতে হবে। ভিআইপি ব্যক্তিরা মৎস্য ভবন হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীর চর্চা কেন্দ্রের সামনে গাড়ি রেখে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন।

দিবস পালনে সরকারি কর্মসূচী
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এদিন দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনসমূহে সঠিক নিয়ম ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।

ভাষাশহীদদের রূহের মাগফিরাতের জন্য আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন থাকবে।

দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কদ্বীপ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাজনক স্থানে বাংলাসহ অন্যান্য ভাষার বর্ণমালা সংবলিত ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সব গণমাধ্যমে একুশের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সংলগ্ন এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে।



শহীদ মিনার এলাকায় বায়ান্নর আবহে দেওয়াল লিখন

শহীদ মিনারের বিপরীত পাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের দেওয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভাষা ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। লাল রঙের উপর সাদা রং ব্যবহার করে লেখা হয়েছে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর বিখ্যাত গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’, হাসান হাফিজুরের উক্তি ‘আবুল বরকত, সালাম, রফিকউদ্দিন, জব্বার, কি আশ্চর্য, কি বিষণ্ন নাম! একসার জলন্ত নাম।’ কবি শামসুর রহমানের লেখা স্বাধীনতা তুমি শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উক্তি ‘আমি বাঙালি বাংলা আমার দেশ বাংলা আমার ভাষা’।

এছাড়া কবি জসীম উদ্‌দীন, আবুল ফজল, ধীরেন্দ্র নাথদের ভাষা আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন উক্তি এখানে স্থান পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সৌন্দর্য বাড়াতে ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

অরপদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখার জন্য ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাবির কর্মসূচি
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অফিসার ও কর্মচারীদের একটি প্রভাতফেরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবন প্রাঙ্গণে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হবে। প্রভাতফেরি সহকারে তারা আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।



অমর একুশের এই যৌথ মৌন মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অফিসার ও কর্মচারীদের ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টার আগে কলাভবন প্রাঙ্গণে অপরাজেয় বাংলার সামনে সমবেত হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বাদ জোহর অমর একুশে হলে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত, বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদুল জামিয়া, সব হলের মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত/শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/হাসান/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়