ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘ঋণ খেলাপিরা প্রণোদনা পায়, কৃষকরা পায় না’

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৬, ১৫ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ঋণ খেলাপিরা প্রণোদনা পায়, কৃষকরা পায় না’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, কালো টাকার মালিক ঋণখেলাপিরা প্রণোদনা পায়, কিন্তু কৃষকরা পায় না। পোষাক কারখানা মালিক প্রণোদনা পায় অথচ কৃষক তার শস্য বিক্রিতে কেন প্রণোদনা পাবে না।

শনিবার রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে কৃষক-খেতমজুর কনভেনশনে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন ছিলেন প্রধান বক্তা।

সাবেক মন্ত্রী মেনন বলেন, ‘আজ ধান উৎপাদনে  বেশি খরচের পেছনে খেত মজুরদের মজুরিকে অজুহাত হিসেবে তুলে ধরে কৃষক ও খেতমজুরকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ খেতমজুররা দৈনিক ৭০০-৯০০ টাকা পায় মাত্র তিন মাসের কাজের সময়ে। যদিও তাদের পুরো বছরের সংসার চালানো ও খোড়াক যোগাতে হয়। অথচ উল্টোদিকে এই কামলার অভাবকে পুঁজি করে এবারের বোরো মৌসুমী সরকারি কর্তা ব্যক্তিরা বিভিন্ন সংগঠন যেভাবে জিন্স-টিশার্ট, নতুন লুঙ্গি-গামছা পরে ফটোশেসনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিল তা রীতিমতো খেতমজুরদের উপহাস করা হয়েছে।’

‘প্রয়োজন এখন ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সংগঠিত হবার। সেই সংগঠিত শক্তিই পারবে এই কৃষক-খেতমজুর কনভেনশনের ঘোষণাকে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত করতে’, বলেন মেনন।

কনভেনশনে সরকারের কাছে ১২ দফা দাবি দেওয়া হয়, তার মধ্যে (১) ধানসহ কৃষি পণ্যের মূল্য সহায়তা প্রদানের জন্য সরকার কর্তৃক মৌসুমের পূর্বেই ক্রয়মূল্য ও ক্রয় লক্ষ্য ঘোষণা করা, (২) খোদ কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় ও তা গুদামজাত ও বিপণন করতে প্রতি থানায় প্যাডিসাইলো নির্মাণ করা এবং তার পরিচালনা সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রোয়ারকো-অপারেটিভের (উৎপাদক সমবায়) ওপর ন্যাস্ত করা; (৩)৮৭-এর ভূমি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বর্গাচাষীদের বর্গাস্বত্ব প্রদান করা এবং তাদের সমিতিতে সংগঠিত করে কৃষিঋণ প্রদান করা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি মডেল চালু ছিল, যা এখন বন্ধ হয়ে গেছে তা পুনঃচালু করা; (৪) কৃষি ব্যাংক কর্তৃক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি ও ৫% সরল সুদে ঋণ প্রদান করা। এক্ষেত্রে প্রান্তিক চাষী ও বর্গাচাষীদের অগ্রাধিকার প্রদান করা ও স্বল্পমেয়াদী ঋণ প্রদান করা; (৫) অকৃষি কর্মকাণ্ড যা কৃষিকে সহায়তা করে তাকে ঋণ দেওয়া; (৬) উৎপাদক কৃষকদের সমবায় করে তাদের সাশ্রয়ী সুদে ঋণ দেওয়া, যাতে ধান ওঠার সময় নিজেদের উদ্বৃত্ত নিজেরাই কিনে সরকারি গুদাম ও মিলে নামমাত্র ভাড়ায় গুদামজাত করবে এবং অবস্থা বুঝে তা বিক্রি করে মূল্য স্থিতিশীল রাখতে পারবে; (৭) উৎপাদনের উপকরণ যেমন সার, বীজ, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি আরো বাড়ানো এবং এসব ও সমবায় বা সমিতির মাধ্যমে দেওয়া; (৮)  সমবায় আইনের সংশোধন করে তাকে আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করা, (৯)  হাওর-বাওর-চরাঞ্চলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা যেমন বাঁধ নির্মাণ, রাস্তাঘাট, জমির অধিকার, ধান কাটা মৌসুমে লাঠিয়ালদের আক্রমণ প্রতিরোধ প্রভৃতির ব্যবস্থা করা, (১০) ব্রিটিশ আমেরিকান কোম্পানিসহ টোবাকো কোম্পানিসমূহের উর্বর কৃষিজমিকে দাদন দিয়ে তামাক চাষের জমিতে রূপান্তর বন্ধ করা; (১১)  পার্বত্যভূমি কমিশন কার্যকর করা ও সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন করা; (১২) কৃষিতে বহুজাতিক কোম্পানির বীজ ও ধান চালুর প্রচেষ্টা রোধ করা।

কনভেনশনে খেতমজুরদের জন্য আরো ১২ দফা দাবি দেওয়া হয়;

(১) সারা দেশে খেতমজুরদের নিবন্ধন করা ও ৪০ দিনের কাজ বাড়িয়ে ঐ খেতমজুরদের জন্য ১৫০ দিনের কাজের গ্যারান্টি প্রদান করা ও কাজ না থাকলে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা;
(২)  গ্রাম ও শহরের ৬০ বছর ঊর্ধ্বে  খেতমজুর, ভূমিহীন শ্রমজীবী মানুষের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কীমে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা;
(৩)  জাতীয়ভাবে খেতমজুরসহ গ্রামীণ শ্রমজীবীদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিবেচনায় তা ক্রম বৃদ্ধি করা; (৪) সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনি ও উপকারভোগীর সংখ্যা ও প্রাপ্তভাতা বৃদ্ধি করা ও মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে তা সরাসরি তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া; (৫)  খেতমজুরদের নিবন্ধিত সমিতির কাছে কৃষি যন্ত্রপাতি দেওয়া ও তার ব্যবহারের মূল্য নির্ধারণ করা; (৬) বছরে পাঁচ মাস ১০ টাকা মূল্যে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল প্রদানের কর্মসূচি বছরব্যাপী বিস্তৃত করে খেতমজুরদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থায় তাকে সমন্বিত করে চালু করা; (৭)  খেতমজুর ও গ্রামীণ শ্রমজীবীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও সন্তানদের শিক্ষা ভাতা প্রদান করা; (৮)   খাসজমিভূমিহীন মাঝে বণ্টন, দলিল ও দখল প্রদান করা; (৯) খেতমজুরসহ বাসহীন ও নদী ভাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া; (১০)  নারী ও পুরুষ কৃষিশ্রমিকের মজুরি বৈষম্য দূর করা ও সমমজুরি প্রদান; (১১)  গ্রাম ও শহরের মধ্যে সৃষ্ট বৈষম্য দূর করা; (১২) কৃষিসহ সামগ্রিক দুর্নীতি বন্ধ করা

কনভেনশনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি নুরুল হাসান, কার্যকরি সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম গোলাপ, সহ সভাপতি মনোজ সাহা, আব্দুল মজিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জুন ২০১৯/নঈমুদ্দীন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়