খুন-গুমে কালোটাকা
নাগ || রাইজিংবিডি.কম
ফাইল ফটো
শ্যামল কান্তি নাগ : খুন-গুম, অপহরণে কালোটাকা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সরল পথে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হওয়ার পর বাজেটে আর এই অর্থকে সাদা করার সুযোগ দিচ্ছে না সরকার। গতি হারানো এই আর্থিক খাতটি ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ আচরণ করতে পারে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের।
অতি সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন এবং ফেনীর ফুলগাজি উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যাকাণ্ডে ৯ কোটি কালোটাকা ব্যয় হয়। সাত খুনে ৬ কোটি টাকা এবং একরামুল হক হত্যাকাণ্ডে ৩ কোটি টাকা ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ধারণা মতে, দেশে কালোটাকা রয়েছে কমপক্ষে ২ লাখ কোটি। এই অর্থের বেশিরভাগই রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, খুন, হত্যা, গুম এবং কালোবাজারিতে ব্যবহৃত হয়।
নানা আলোচনা সমালোচনার মধ্যে গত কয়েকটি অর্থবছরে বাজেটে ঠিকই স্থান করে নিয়েছে কালোটাকা। সরকারি ভাষায় যাকে বলা হয়েছে অপ্রদর্শিত অর্থ। এই আয়ের উৎস অন্ধকারে নিমজ্জিত এবং কখনোই মালিক প্রকাশ করে না।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই বিশাল অঙ্কের অর্থকে আর্থিক প্রবাহের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে বারবার বাজেটে সুযোগ দিয়েছেন। উৎপাদনমুখী বিনিয়োগ ধারায় ফেরাতে কালোটাকার মালিকদের ফৌজদারী দণ্ডবিধির আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। সাদা করতে রাজস্ব জরিমানার হারও কমিয়ে রেখেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তাতে সামান্যই লাভ মিলেছে বোর্ডের।
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যৌথবাহিনীর তীব্র অভিযানের মুখে বেশ কিছু কালোটাকা উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব মতে ওই সময় ১২ হাজার কোটি কালো টাকা উদ্ধার হয়েছিল । তার পরের বছর ৮ হাজার কোটি কালোটাকা সাদা হয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে। এরপর কালোটাকার হিসেব অন্ধকারেই থেকে গেছে।
রাজস্ব বোর্ড, কালোটাকা বিনিয়োগে ফেরাতে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ জরিমানার বিধান করেছিল। তবে বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স সেল কালোটাকার হদিস পেলে সে ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করতে পারতো। এর পরও বিনিয়োগে ফেরেনি এই অর্থ।
রপ্তানি মুখি জাহাজ শিল্প, আবাসন খাত এবং নতুন নতুন শিল্প খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কালোটাকা । বাস্তবে এসব খাতে একটি কানাকড়িও বিনিয়োগ হয়নি বলে জানিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা।
অধিকাংশ কালো টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিদেশে পাটানো হয়েছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মতামত দিয়েছে রাজস্ব বোর্ডকে।
দেশে যে সব কালোটাকা রয়েছে তার বেশির ভাগ ব্যবহৃত হচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে। সভা সমাবেশ, মিছিল মিটিং ছাড়াও রাজনৈতিক খুনে ব্যবহৃত হচ্ছে এই কালোটাকা। এমন তথ্য রয়েছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে।
যে কারণে সরকার কালোটাকা আর সাদা করার সুযোগ রাখছে না। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কালোটাকা খুঁজে খুঁজে বের করে তার থেকে রাজস্ব আদায় করা হবে। এমনকি যথাযথ আয়ের উৎস না থাকলে বাজেয়াপ্ত করা হবে পুরো অর্থ।
দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই-এর পরিচালক হেলাল উদ্দিন বলেছেন, ‘এর আগে ব্যবসায়ীরা কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করলেও এবার তা করা হবে না। কারণ কালোটাকা শুধু ব্যবসা বাণিজ্য নয় সামাজিক ক্ষেত্রেও বৈষম্য তৈরি করে দিচ্ছে। ভবিষ্যতে এই অর্থ আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। যে কারণে এই অর্থ রোধ বা নিয়ন্ত্রণ জরুরি।’
রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূইয়া বলেছেন, ‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না থাকলে বরং এই অর্থ চাপের মধ্যে থাকবে। সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় অপব্যবহারের হয়েছিল। কালোটাকায় জীবন যাত্রার ব্যয়ে চরম অসমতা তৈরি করেছে। বাড়ছে এর অপব্যবহার। কালোটাকা রাজনৈতিক হাত ঘুরে সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাওয়ায় ভয়াবহ হয়ে উঠেছে সামাজিক পরিবেশ। এ জন্যই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না থাকা ভালো।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘কালোটাকা বিশ্বের সব উন্নত দেশেও আছে। তবে আমাদের দেশে এর অপব্যবহার বেশি। রাজনীতি বা কালোবাজারি ব্যবসায় এর বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করে উৎপাদনমুখী বিনিয়োগে ফিরিয়ে আনা দরকার। বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ হলে তা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
রাইজিংবিডি /ঢাকা/২৯ মে ২০১৪/নাগ/শামসুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন