আউটসোর্সিংয়ে হাজার কোটি টাকার হাতছানি
শফিকুল ইসলাম লেনিন || রাইজিংবিডি.কম
আউটসোর্সিং (ফাইল ফটো)
শফিকুল ইসলাম লেনিন : বিশ্ব আউটসোর্সিংয়ের বাজারে দাপটের সঙ্গে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। দিন দিন বাড়ছে এই কাজের জনপ্রিয়তা। গত বছরও এ খাত থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এ খাতের সাফল্যে বর্তমান সরকার যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে দুই বছর পর আয়ের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকা দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, ক্রমেই বাড়ছে আউটসোর্সিংয়ে কাজের পরিধি। আউটসোর্সিং করা দেশগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা ১৭০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ নম্বর। আর আয়ের দিক দিয়ে ১৩ নম্বরে। বিদেশের কাজ ঘরে বসেই করার এই কাজে যুক্ত ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা বর্তমানে চার লাখের ওপরে। যা দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ১৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগ।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ খাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে আরো ৫৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা হবে। সারা দেশে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সেমিনার ও কর্মশালার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত চলবে এ কাজ। এরপর এ খাত থেকে বছরে হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।
এ প্রসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বর্তমান সরকার এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় হাইটেক পার্ক ও সফটওয়্যার পার্ক তৈরির কাজ করছে। পাশাপাশি কয়েক দফায় ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম কমিয়েছে। ৬৪টি জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার লোককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ ছাড়া, নতুন যে প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে এর মাধ্যমে প্রায় অর্ধলক্ষ ফ্রিল্যান্সারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মনির হাসান বলেন, ‘ওডেস্ক, ইল্যান্স এবং ফ্রিল্যান্স ডটকম মিলিয়ে আউটসোর্সিংয়ে নিবন্ধিতদের সংখ্যা চার লাখের ওপরে। এ খাতে এত কাজের সুযোগ রয়েছে যে, করে শেষ করা যাবে না। তাই প্রয়োজন দক্ষ জনবল। আর এ জন্য ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নাই।’
মনির হাসান বলেন, ‘এ খাতে সফলতার জন্য সরকারকে ইন্টারনেট সড়কে গতি বৃদ্ধি এবং ইন্টারনেট ব্যবহার সহজ করতে মূল্য আরো কমাতে হবে। একই সঙ্গে ইংরেজি জানা দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে।
কয়েকজন ফ্রিল্যান্সারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ খাতে যেমন অবাধ সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি কিছু সমস্যাও রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় ব্রডব্যান্ড না থাকায় তাদেরকে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট দিয়েই কাজ করতে হয়, যা ব্যয়বহুল। এ ছাড়া দেশে অনলাইন মার্চেন্ট পে-পল (পেমেন্ট প্রসেসর) ব্যবহারের সুবিধা না থাকায় মার্কেটপ্লেসের বাইরে যারা কাজ করেন, তাদের অর্থ পেতেও সমস্যা হয়।
তাদের মতে, দেশে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা এ খাতে ভালো কাজ করছেন। তবে পে-পলের সুবিধা না থাকায় তাদের অর্থ পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। এসব বাধা কাটিয়ে উঠতে পারলে এ খাতের আয় আরো বাড়বে।
জানা যায়, বর্তমানে পাঁচটি আন্তর্জাতিক মানের ফ্রিল্যান্স অনলাইন মার্কেটপ্লেস রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ওডেক্স ও ই-ল্যান্সার।
কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশ হাজার কোটি টাকা আয় করবে, এটা আমাদের বহুদিনের স্বপ্ন। আর এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে শুধু প্রশিক্ষণ প্রকল্পে না জোর দিয়ে স্কিল ডেভেলপমেন্টেও জোর দিতে হবে। অন্যথায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। কেননা, যত দিন পর্যন্ত তারা কাজ করার যোগ্যতা না অর্জন করবে, তত দিন পর্যন্ত এ খাতে প্রত্যাশিত সফলতা আসবে না।’
পে-পল সুবিধা না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিগগিরই দেশে পে-পল সুবিধা পাওয়া যাবে না। কেননা, বর্তমানে এ খাত থেকে যে পরিমাণ রেভিনিউ আসছে তাতে তারা (পে-পল) আসবে না। তবে এর মধ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা ইনস্টিটিউট প্রয়োজন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জুন ২০১৪/লেনিন/শাহনেওয়াজ/এএ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন