ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ইসরায়েলি নৃশংসতায় বিশ্ব স্তম্ভিত

টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ২২ জুলাই ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইসরায়েলি নৃশংসতায় বিশ্ব স্তম্ভিত

হামলা থেকে বাঁচতে সন্তানদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন বাবা-মা

শাহ মতিন টিপু : গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতায় বিশ্ব স্তম্ভিত। সাধারণ মানুষের ওপর যেভাবে অত্যাধুনিক ভারী অস্ত্রের নির্বিচার  প্রয়োগ চলছে, তা বর্বরতার মানদ-কেও ছাড়িয়ে গেছে। ১৪ দিনে বেসামরিক লোকজন নিহতের সংখ্যা ৫৬০। এদের মধ্যে শিশু ও নারীই অধিকাংশ। আহতের সংখ্যা তারও কয়েকগুণ বেশি। চিকিৎসা প্রদানও হয়ে উঠেছে দুরূহ। হাসপাতালেও হামলা চালানো হচ্ছে। মানবতার নামে বিশ্ব দাপিয়ে বেড়ানো মোড়লরা এখন কোথায়?
গাজায় নিহতের ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। একইসঙ্গে ইসরায়েলের শান্তিচুক্তিতে সাড়া না দেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনি নেতাদের তীব্র সমালোচনা করেন। কিন্তু যারা বর্বরতা চালাচ্ছে তাদের বলেননি কিছুই। এই হচ্ছে কেরির শান্তি উদ্যোগ।

এর আগে ঠিক একই ধাচে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার গাজায় হামলায় নিন্দা জানিয়েছেন। তবে বান কি মুন এটুকু বলেছেন, ‘ ইসরাইলের সংযত হওয়া উচিত’। ওবামা বলেন, `ইসরায়েলের নিজেকে রক্ষার অধিকার আছে`। একই ধরনের ভাষা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনেরও।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিবিসিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খোদ জল্লাদ বেনজামিন নেতানিয়াহু গাজায় বেসামরিক লোকজন নিহতের ঘটনায় বান কি মুন- ওবামাদের মতই দুঃখপ্রকাশ করেছেন। একেই বলে পরিহাস!
গাজায় চালানো বর্বরতায় মন কেঁদে উঠেছে ছয় নোবেলজয়ীর। এরা ৬জনই শান্তির জন্য নোবেল পেয়েছিলেন।  হামলা বন্ধে ইসরায়েলের ওপর সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন নোবেলজয়ীরা। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে তারা এ আহ্বান জানান। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের খ্যাতনামা শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী মিলিয়ে ৯৯ জন।

ইসরায়েলের ওপর সামরিক নিষেধাজ্ঞার আহবান জানানো নোবেলজয়ীরা হলেন, শান্তিতে নোবেলজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকার আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, আর্জেন্টিনার মানবাধিকারকর্মী অ্যাডলফো পেরেজ এসকুইভেল, স্থলমাইন নিষিদ্ধ করার আন্দোলনে যুক্ত মার্কিন রাজনৈতিক কর্মী জুডি উইলিয়ামস, উত্তর আয়ারল্যান্ডের শান্তিকর্মী মাইরিড ম্যাগুয়ের, বেটি উইলিয়ামস এবং গুয়েতেমালার আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত রিগোবেরতা মেনচু।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে মার্কিন দার্শনিক নোয়াম চমস্কি, পিংক ফ্লয়েডের রজার ওয়াটার্স, ব্রিটেনের নাট্যকার ক্যারিল চার্চিল, যুক্তরাষ্ট্রের র‌্যাপ সঙ্গীতশিল্পী বুটস রাইলি, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের সভাপতি হুয়াও আন্তোনিও ফেলিসও, কনফেডারেশন অফ সাউথ আফ্রিকান ট্রেড ইউনিয়নের মহাসচিব জুয়েলিনজিমা ভাভিও রয়েছেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই চিঠির পরেও যদি ইসরায়েলের বর্বরতা না থামানো যায়, ফিলিস্তিনের শিশু-নারীদের না বাঁচানো যায়, তবে শান্তির জন্য নোবেল বিলির মূল্য কোথায়?

১৯ জুলাই গার্ডিয়ানে প্রকাশিত ওই চিঠিতে গাজা অঞ্চলে সামরিক আগ্রাসন নৃশংস ও অবৈধ দাবি করে নোবেলজয়ীরা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পাওয়া সামরিক সহযোগিতা নিয়ে ইসরায়েল নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর এই হামলা চালাচ্ছে’।

বর্ণবাদী কর্মকাণ্ডের সময় দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর যেমনটা করা হয়েছিল, একইভাবে ইসরায়েলের ওপর কার্যকর ও বৈধ সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানান নোবেলজয়ীরা। ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করারও আহ্বান জানান তারা।

একদিকে গাজায় লাগাতার মানুষ মারছে ইসরায়েল, অন্যদিকে গাজা সিটির শিফা হাসপাতালে চলছে প্রাণ বাঁচানোর লড়াই। হাসপাতালের চিকিৎসকরা এখন দিনরাত পরিশ্রম করছেন মারাত্মকভাবে আহত শত শত ফিলিস্তিনিকে জরুরি চিকিৎসা সেবা দিতে। হাসপাতালে আহতদের স্রোত লেগে গেছে। হাসপাতালের পরিবেশ আহতদের চিৎকার আর স্বজনদের কান্নাকাটিতে ভারাক্রান্ত। করুণ গোঙানিতে অসহ্য হাসপাতালের পরিবেশ।

ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না হাসপাতালও। গাজার আল আকসা হাসপাতালে ট্যাঙ্ক থেকে গোলাবর্ষণ করে পাঁচজনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। আহত হয়েছে আরও ৭২ জন। আহতদের অধিকাংশই চিকিৎসক।

টানা দুই সপ্তাহ পেরিয়েও ইসরায়েলের বর্বরতম অভিযান বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। অভিযানের একেকটি দিন যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে গাজায় কাফনে মোড়া শিশু-নারী-বৃদ্ধের লাশের সারি। বাড়ছে স্বজনহারা মানুষের আর্তনাদ। বাড়ছে মানবিক সংকট। এ অবস্থায় নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতির আহ্বান সেও যেন উপহাসতুল্য।
এসবে যেন কিছুই আসে যায় না ইসরায়েলের! বরং আরও বেপরোয়া ইসরায়েল। তারা গাজার মানুষের ওপর ব্যবহার করছে ‘নিষিদ্ধ’ ভয়ংকর একধরনের গোলা। তাদের শিকার থেকে বাদ পড়েনি হাসপাতালের রোগীরাও। গাজা উপত্যকা এখন মৃত্যুপুরী। সোমবার দেখা গেছে, গাজার পূর্বাঞ্চলের শাজাইয়া শহরের পথেঘাটে পড়ে আছে নারী-শিশুর লাশ। পুড়ে যাওয়া লাশ থেকে গন্ধ ছড়াচ্ছে। হত্যার এই ভয়ঙ্কর খেলার শেষ কোথায়?

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জুলাই ২০১৪/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়