ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মার্কিন আর্থিক নীতির অচলায়তন ভাঙবে ব্রিকস ব্যাংক

নিয়াজ মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৭ জুলাই ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মার্কিন আর্থিক নীতির অচলায়তন ভাঙবে ব্রিকস ব্যাংক

মিজ্র্জা এ বি আজিজুল ইসলাম, আকবর আলি খান ও এম এম আকাশ

নিয়াজ মাহমুদ : উন্নয়নমুখী পাঁচ জাতির সমন্বয়ে ব্রিকস ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হলে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের খবরদারি খর্ব হবে মন্তব্য করে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্রিকস ব্যাংক বিশ্বের উন্নয়ন অর্থায়নে নতুন ধারার সূচনা করবে। তাতে বেশি উপকৃত হবে লাতিন আমেরিকাসহ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো।

বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কঠোর শর্ত জুড়ে দেয়, যা অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে অনেকটাই শ্লথ করে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। ব্রিকস ব্যাংক যদি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসে, তাহলে বাংলাদেশের ওপর থেকে চাপ কমে যাবে। এতে বাংলাদেশ লাভবান হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর টাকায় পরিচালিত মার্কিন নীতির ধারক বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে অতিরিক্ত খবরদারি করে। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন আর্থিক নীতিই অনুসরণ করে। যে কারণে ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর অর্থনীতি থাকে টালমাটাল অবস্থায়। এই অচলায়তন ভাঙতেই ভারত, ব্রাজিল, চীন, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা যৌথ মালিকানায় গঠন করছে ব্রিকস ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খানের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত ব্রিকস ব্যাংক উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি। আর বাংলাদেশ যদি এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে পারে, তা খুবই ইতিবাচক দিক। তবে ব্রিকস ব্যাংক তাদের ঋণ নীতিমালা কী হবে, তা এখনো পরিষ্কার করেনি। সুতরাং এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না বাংলাদেশ কতটুকু উপকৃত হবে।’

‘শুরুতে ব্যাংকটি ভারতের দায়িত্বে রয়েছে,’-এটি ইতিবাচক দিক বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা মিজ্র্জা এ বি আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মনোভাব নিয়ে ব্রিকস ব্যাংক এলে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর থেকে অনেক চাপ কমবে। ঋণের সুবিধা যদি বিশ্বব্যাংক থেকে ব্রিকসে ভালো হয় তাহলে সেই দিকে ঝোঁকাটায় স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের খবরদারি অনেকটাই বন্ধ হবে।’

প্রথম ছয় বছর ব্রিকসের প্রধানের দায়িত্বে থাকবে ভারত। চীনের সাংহাই শহরে থাকবে ব্রিকসের সদর দফতর। তিন প্রধান মালিক ভারত, চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হওয়ায় ব্রিকস থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার থাকছে বলে বিভিন্ন মহলে শোনা যাচ্ছে।

জানা গেছে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় সভাপতির দায়িত্বে থাকবে ব্রাজিল ও রাশিয়া। তবে তাদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর করে। বোর্ড অব গভর্নসের প্রথম প্রধান হবে রাশিয়া। ১০ হাজার কোটি ডলার শেয়ার মূলধনের মধ্যে আপাতত পাঁচটি দেশ সমান মালিকানার ভিত্তিতে হাতে নিচ্ছে মোট পাঁচ হাজার কোটি ডলারের শেয়ার। প্রতিটি দেশের হাতে থাকছে এক হাজার কোটি ডলারের শেয়ার মূলধন।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ব্রিকসের মালিকানায় থাকা পাঁচটি দেশের অর্থনৈতিক ভীত শক্তিশালী করাই মূল উদ্দেশ্য। কোনো রকম আর্থিক ঝুঁকিতে পড়লে এই ব্যাংক থেকে নিজেরা সহায়তা নেবে। সুতরাং বাংলাদেশ সদস্য হতে পারলে তা হবে ইতিবাচক।’

এম এম আকাশ বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হচ্ছে বারবারই কি আমরা আইএমএফের ভুল প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করব? বিশ্ব আর্থিক বাজারে মোড়লি থাকবে মাত্র দুটি সংস্থার? আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক সারা জীবন খবরদারি করে যাবে?। আমাদের আর্থিক অসুখ হলে আমরা কি এই দুই কবিরাজের কাছেই ছুটে যাব? এই চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে গিয়েই পাঁচটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ভ্লাদিমের পুতিন, নরেন্দ্র মোদি, শি জিনপিং, জ্যাকব জুমা ও দিলমা রুসেফ গত ১৫ জুলাই মিলিত হয়েছিলেন ব্রাজিলের ফোর্তালেজা নগরে।’

উল্লেখ্য, আগামী দুই বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের মধ্যেই প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করার কথা রয়েছে প্রস্তাবিত এই নতুন আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাটির।

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুলাই ২০১৪/নিয়াজ/সন্তোষ/এএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়