ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সঙ্গীতা অপরাজিতার কাছে খোলা প্রশ্ন

আজাদ আল মামুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১২, ২১ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সঙ্গীতা অপরাজিতার কাছে খোলা প্রশ্ন

আজাদ আল মামুন

আজাদ আল মামুন : কিছুদিন হলো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। চুপ করে ছিলাম। কিন্তু এখন বিষয়টি যেদিকে যাচ্ছে দেখেশুনে মনে হলো এ প্রসঙ্গে কথা না বললে অন্যায় হবে। আলোচনার বিষয় গাজী রাকায়েত ও একটি স্ক্রিন শট। গভীরে যাওয়ার আগে মূল ঘটনার দিকে আলোকপাত করি।

কিছুদিন আগে এক নারী ফেইসবুকে একটি গ্রুপে স্ক্রিন শট দিয়ে অভিযোগ করেন গাজী রাকায়েত তাকে মধ্য রাতে মেসেঞ্জারে কুরুচিপূর্ণ কথার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এরপর উদ্দেশ্যমূলক ভাবে সেটিকে ভাইরাল করার জন্য যা যা করার দরকার তাই করলেন কয়েকজন। এর মধ্যে মূল হলেন সঙ্গীতা অপরাজিতা। যিনি দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে গিয়ে নিজেই চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিলেন।

সঙ্গীতা অপরাজিতার কাছে আমার কয়েকটি খোলা প্রশ্ন ছিলো। এক, আপনি একটি স্ক্রিন শট পেলেন আর সাথে সাথে ফেইসবুকে পোস্ট করলেন- এটা কতটা যৌক্তিক? আপনি কি পারতেন না বিষয়টা নিয়ে কোনোভাবে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে গাজী রাকায়েত অথবা অন্য কারো সাথে যোগাযোগ করে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে? দুই, কোনো কিছু যাচাই না করে একজন মানুষের নামে যা খুশি তা লেখা কতটা যৌক্তিক? আপনি এভাবে কী প্রমাণ করতে চাচ্ছেন? আপনি কি শুধুমাত্র পুরুষ-বিদ্বেষী হয়ে এমন করলেন নাকি খুব ইচ্ছে জেগেছে জনপ্রিয় হতে- তাই এটা করলেন?

যখন গাজী রাকায়েতের এই বিষয়টি নিয়ে সঙ্গীতা অপরাজিতা ফেইসবুকে বিপ্লব করে আলোচনার শীর্ষে তখন গাজী রাকায়েত ব্যস্ত ছিলেন চাড়ুনীড়ম কাহিনীচিত্র উৎসব নিয়ে। মার্চের ৫ তারিখ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসব শেষ হয় মার্চের ১১ তারিখ। মিডিয়ার সবাই জানে এই উৎসব আয়োজনের শুরু থেকে শেষ করা পর্যন্ত গাজী রাকায়েত কি পরিমাণ ব্যস্ত ছিলেন। উৎসব শেষ করে তিনি বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষ থাকতে সমাধানের দায়িত্ব দিলেন আমাদের নাটকের সাথে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে। এবং পরে সবাই মিলে ভুক্তভোগীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে যাচাই করে বিষয়টি খুব স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, এই ঘটনার সাথে কোনোভাবে গাজী রাকায়েত জড়িত ছিলেন না। তাঁর আইডি হ্যাক হওয়ার সকল তথ্য প্রমাণ নিয়ে তিনি হ্যাকারদের শনাক্ত করতে আইনের আশ্রয় নেন। এই ঘটনার পর ভুক্তভোগী নিজে স্বীকার করেন বিষয়টা এভাবে যাচাই না করে ফেইসবুকে দেয়া ঠিক হয়নি এবং তিনি নিজে চিন্তা করেননি এটা নিয়ে এত কিছু হবে।

এবার আসি মূল কথায়। তদন্ত চলাকালে সঙ্গীতা অপরাজিতা তার টাইমলাইন থেকে এই বিষয়টি নিয়ে দেয়া লেখাটি হাইড করে ফেলেন। কিন্তু যখন বিষয়টি প্রমাণিত হলো যে, সত্যিকার অর্থেই এখানে গাজী রাকায়েত জড়িত ছিলেন না, তখন সঙ্গীতা অপরাজিতা একবারের জন্যেও নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাননি। এই থেকে প্রমাণিত হয় তিনি বিষয়টি হয় উদ্দেশ্যমূলক ভাবে, না হয় পুরুষ-বিদ্বেষী মনোভাব থেকে করেছেন। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন তিনি গাজী রাকায়েতের মত একজন মানুষকে কতটুকু অপদস্থ করেছেন। আমার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থাকলেই সেখানে আমি একটা বিষয় নিয়ে অন্য একজনকে জড়িয়ে নিজের মতো লিখতে পারি না। গাজী রাকায়েত ভীনগ্রহের প্রাণী নন যে তিনি ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাহলে কেন আপনি একজন সম্মানিত মানুষের সম্পর্কে আপনার মন গড়া কথা লিখবেন? এটা কতটুকু যৌক্তিক?

এবার আসি বর্তমান অবস্থা নিয়ে। যখন বিষয়টি প্রমাণিত হলো তখন গাজী রাকায়েত তার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি অর্থাৎ জিডি করলেন। সেখানে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু উল্লেখ করলেন। সঙ্গীতা অপরাজিতা যেমন গাজী রাকায়েতকে না চেনার বা ধরা ছোয়ার বাইরে ধরে নিয়ে ফেইসবুকে যা খুশি তাই লিখলেন, ঠিক তেমনই গাজী রাকায়েত ব্যক্তি সঙ্গীতাকে জানতে না চেয়ে সেই জিডিতে সঙ্গীতার বিষয়টি উল্লেখ করেন। যেটা স্বাভাবিক। আমি আবারও বলছি, তিনি সাধারণ ডায়েরি করেছেন শুধুমাত্র। যা আমি আপনি যে কেউ হলে করতাম। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে থানা থেকে এটি মামলায় পরিণত হয় প্রচলিত আইনে। যেখানে গাজী রাকায়েতের কোনো হাত নেই।

গাজী রাকায়েতকে নিয়ে যখন আগের বিষয়টি ভিত্তিহীন হয়ে গেল, এবার তারা  উঠে পড়ে লাগল গাজী রাকায়েত কেন সঙ্গীতা অপরাজিতার নামে ৫৭ ধারায় মামলা করলো- এ নিয়ে। এটা এখন তাদের বড় অস্ত্র। যারা সম্পূর্ণ বিষয় না জেনে ফেইসবুকীয় বিপ্লব করছেন তারা গাজী রাকায়েতকে নিয়ে কথা বলার যোগ্যতা রাখেন না। এবার একটি কথা দিয়ে শেষ করব, যারা উদ্দেশ্যমূলক ভাবে প্রথম থেকে বিষয়টাকে একেক বার একেক দিকে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের বলছি ,গাজী রাকায়েত শিল্প সংস্কৃতিতে আমাদের বটগাছ। এতদিনে গড়ে তোলা অর্জন শেষ করে দেয়া এত সহজ নয়। বিষয়টাকে সাংঘর্ষিক করে তুলবেন না। এর ফল ভালো হবে না। গাজী রাকায়েত ৫৭ ধারায় মামলা করেননি। তিনি শুধুমাত্র সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। যারা মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন সময় এসেছে তাদের সঠিক জবাব দেয়ার। প্রত্যেকটি শিল্প সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট মানুষের উচিত এর প্রতিবাদ করা। আমি মিডিয়ার প্রত্যেকটি মানুষকে বলব আগে যাচাই করুন, গাজী রাকায়েত যদি দোষ করেন তাহলে তাঁর শাস্তি হবে। আর যদি তিনি নির্দোষ হন তাহলে তাঁর পিছনে লাগা গুটিকয়েক এর মাথা বের করে শাস্তির আওতায় আনা আমার আপনার প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব। তাই আজ থেকে শুরু হোক প্রতিবাদ।

লেখক : নাট্য নির্মাতা



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মার্চ ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়