ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ক্ষমতার প্রয়োগ, বিএনপিতে শীতল যুদ্ধ

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ২০ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্ষমতার প্রয়োগ, বিএনপিতে শীতল যুদ্ধ

এসকে রেজা পারভেজ : বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির কয়েকটি শূন্য পদ নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে শীতল যুদ্ধ চলছে। পাঁচটি শূন্য পদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ক্ষমতার একক প্রয়োগে এরই মধ্যে দুইজনকে পদায়ন করেছেন।

ওই দুই পদে যাদের পদায়ন করা হয়েছে, তা নিয়ে দলের একটি অংশ ক্ষুদ্ধ। বাকি তিনটি পদ নিয়ে নেতাদের মধ্যে চলছে ঠাণ্ডা লড়াই। সেখানে প্রভাবশালী অনেকে রয়েছেন, যারা পদ না পেলে দলে নিস্ক্রিয় হয়ে যেতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ১৯টি পদের মধ্যে ১৭টি পদ পূরণ করে দলটি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান) তারেক রহমান, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ- এই ১৭ জন স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। বাকি ছিলো দুটি পদ। এর মধ্যে এম কে আনোয়ার, আ স ম হান্নান শাহ ও তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে আরো তিনটি পদ শূন্য হয়। দীর্ঘদিন পাঁচটি পদ শূন্যই ছিলো। বিভিন্ন কারণে  পদগুলোতে নতুন মুখ আসেনি।

দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর স্থায়ী কমিটির বৈঠকগুলোতে গড়ে পাঁচ/ছয়জনের মতো উপস্থিত থাকেন। ১৭ জন নেতার মধ্যে তিনজন মৃত্যুবরণ করায় সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১৪ জনে। এর মধ্যে খালেদা জিয়া জেলে, তারেক রহমান লন্ডনে, মাহবুবুর রহমান স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তেমন একটা আসেন না, শারীরিক অসুস্থতার কারণে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বৈঠকগুলোতে একদম অনুপস্থিত, নজরুল ইসলাম খান প্রায়ই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকেন, কমিটির সর্বকনিষ্ঠ নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ ভারতে অবস্থান করছেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তাই সংখ্যা নেমে এসেছে পাঁচ থেকে ছয়ে। বিষয়টি নিয়ে তারেক রহমান চাচ্ছিলেন শূন্য পদগুলো পূরণ করতে। এর অংশ হিসেবেই স্থায়ী কমিটির বহরে দুজনকে যুক্ত করেন তিনি। একজন ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, অন্যজন আরেক ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

সূত্র বলছে, স্থায়ী কমিটির পাঁচটি শূন্য পদের জন্য বেশ কয়েকজন পদপ্রত্যাশী ছিলেন যারা ওই দুটি পদে পদায়ন পাওয়া নেতাদের দেখে বেশ অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তারা মনে করেন স্থায়ী কমিটিতে আসার জন্য এর চেয়েও যোগ্য নেতা ছিলেন। বাকি তিনটি পদের মধ্যে স্থায়ী কমিটিতে জায়গা না পেলে তাদের অনেকে দল ছাড়ার ঘোষণাও দিতে পারেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমন দুজন নেতা রাইজিংবিডিকে বলেছেন, স্থায়ী কমিটিতে যে দুজন নেতাকে পদায়ন করা হয়েছে, তার চেয়ে দলে আরো যোগ্য নেতা ছিলেন। এক্ষেত্রে তারা তারেক রহমানের দিকে আঙুল তুলছেন। তারেক রহমান প্রভাবিত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে মনে করেন তারা। যদিও গঠনতন্ত্রের ৮ এর ৬ ধারায় তারেক রহমানকে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণে একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এদিকে অনেকে এই প্রশ্নও তুলছেন, সেলিমা রহমানকে দিয়ে দলের নীতি নির্ধারণী ফোরামের স্পর্শকাতর বিষয়গুলো গোপন থাকবে কি না? কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সেলিমা রহমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বোন। অন্যদিকে ইকবাল হাসান মাহামুদ একটা সময় ছাত্রলীগে ছিলেন। জাতীয় পার্টির মন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে বিএনপিতে যুক্ত হয়ে স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পেলেন। এই বিষয়টিকেও বাঁকা চোঁখে দেখছেন কেউ কেউ।

স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পাওয়ার পর করণীয় নিয়ে জানতে চাইলে সেলিমা রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দলের এই দুঃসময়ে আমার কাজ হবে দলকে সময়োপযোগী পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা। তবে সর্বপ্রথম আমাদের উচিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও দুঃসময়ের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। এ জন্য পরিকল্পিত কর্মসূচি দেওয়া।’

এদিকে বিএনপির বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে, বর্তমানে শূন্য থাকা তিনটি পদের সঙ্গে আরো দুটি পদ শূন্য হতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মাহবুবুর রহমান এবং রফিকুল ইসলাম মিয়া বয়ষ্ক ও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সরে যেতে পারেন। যদিও এ সম্পর্কে মাহবুবুর রহমান স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি নিজেকে প্রস্তুত রেখেছেন বলে রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন।

‘আমি এখন বয়ষ্ক এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ। আগের মতো সবকিছু আর চলছে না। স্থায়ী কমিটিতে নতুনদের সুযোগ দেওয়া উচিত। তবে এখনই কোনো কিছু স্পষ্ট করে বলতে চাই না। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেক কিছুই হতে পারে। তবে এই বিষয়গুলো নিয়ে এখনই আলোচনা করতে চাইছি না।’

এদিকে স্থায়ী কমিটির শূন্য তিন পদের জন্য প্রত্যাশায় রয়েছেন একডজন নেতা। এর মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকতউল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, ব্যারিস্টার শাহাজাহান ওমর, খন্দকার মাহাবুব হোসেন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রমুখ।

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার মুল্যায়ন, স্থায়ী কমিটির বাকি তিনটি পদ পূরণে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে রাখতে হবে সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার ছাপ। তা না হলে এই কমিটিতে পদ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে দল। এর আগে স্থায়ী কমিটিতে পদ না পেয়ে দলে এক প্রকার নিস্ক্রিয় হয়েই থাকতে চেয়েছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান। যদিও পরে ফিরে এসেছিলেন দলীয় কর্মকাণ্ডে। একইভাবে স্থায়ী কমিটিতে পদ না পেলে ক্ষুব্ধ হতে পারেন অনেক নেতা। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিষয়টিকে কিভাবে ব্যালেন্স করেন তারেক রহমান সেটিই এখন দলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন তারা।



রাইজিবিডি/ঢাকা/২০ জুন ২০১৯/রেজা/সাইফ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়