ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পাহাড়ের মানুষের ঈদ উদযাপন

বিজয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২৯ জুলাই ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাহাড়ের মানুষের ঈদ উদযাপন

রাঙামাটির মানচিত্র

বিজয় ধর, রাঙামাটি : পাহাড়ের মানুষের মধ্যে ঈদ পালনে এক আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে আসলে বোঝায় যায় না এটা কাদের ঈদ। এটা কী মুসলমান সম্প্রদায়ের, সনাতন সম্প্রদায়ের না বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের।
বহু জাতি আর নানান বর্ণিল সংস্কৃতি পার্বত্য অঞ্চলের জনপদকে করেছে সমৃদ্ধ ।

তাই দেশের যেকোন স্থানের চেয়ে এখানকার জীবনাচরন একেবারেই ভিন্ন। এখানে রয়েছে  আলাদা ঐতিহ্য, সংস্কৃতির লালনকারী মানুষেরা।

বাঙালি মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। এ পাহাড়েও ঈদ পালিত হয় সব ধর্মের, বর্ণের আর জাতিগোষ্ঠীর মানুষের অংশগ্রহণে।

এ ঈদ প্রসঙ্গে উন্নয়নকর্মী নুকু চাকমা বিশ্বাস করেন, ঈদ শুধু মুসলমান সম্প্রদায়ের না ঈদ হচ্ছে সকল ধর্মের মানুষের বড় একটি সামাজিক উৎসব।

তিনি বলেন, ‘আমাদের যেমন বিঝু উৎসব হয় আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বন্ধু-বান্ধবের বাসায় গিয়ে ঘুরে বেড়ায় দাওয়াত খাই। তেমনি এ ঈদেও আমি বন্ধুদের বাসায় যাব। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেব।’

রাঙামাটি বেতার শিল্পী ঝুলন দত্ত বলেন  ‘ঈদ হচ্ছে সকল ধর্মের বর্ণের মানুষের প্রাণের উৎসব। এই উৎসবের ছুটিতে  আমি আমার পরিবার-পরিজন নিয়ে বান্দরবানের নিলগিরি ঘুরে আসব।’

তরুণ উন্নয়ন কর্মী ভাস্কর চাকমা বলেন, ‘ঈদ পাহাড়ের সব মানুষ দুঃখ বিভেদ ভুলে গিয়ে একাকার হয়ে যাবে। একে অপরের প্রতি ভাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হবে। আর এ লম্বা ছুটি কাজে লাগিয়ে এবার আমি পিসির বাড়ি খাগড়াছড়ি ঘুরতে যাব।’

রাঙামাটির একটি বেসরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নীতি দেওয়ান বলেন, ‘আমাদের যেমন বৈসাবী উৎসব, মুসলমাস সম্প্রদায়ের পবিত্র ঈদ আর হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজা পাহাড়ের  জন্য এগুলো হচ্ছে সামাজিক উৎসব। ঈদে বিশেষ করে  আমার ছাত্রীরা বাসায় দাওয়াত করে তাদের বাসায় বেড়াতে যায় আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়।’

তরুণ রাজনীতিবিদ এম জিসান বখতেয়ার বলেন, ‘এ পাহাড়ে শুধু ঈদ নয় সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এখানকার মানুষের প্রতি একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধ কাজ করে। আমরা পাহাড়ের মানুষেরা সকল উৎসবকে প্রাণের উৎসব হিসেবে মনে করি এবং পালন করেও থাকি। তাই ঈদের দিনে বন্ধু কিংবা পরিচিতজনদের বাসায় ঘুরতে যাই।’

রাঙামাটির তরুণ ক্রীড়া সংগঠক নাসির উদ্দিন সোহেল এর মতে, ‘ঈদ এক মহামিলনের এবং মহাউৎসবের। এ পবিত্র ঈদুল-ফিতরের উৎসবে আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব রাঙামাটির বাহির থেকে বেড়াতে আসবে মুলত তাদের নিয়ে এবার সময় কেটে যাবে। বর পাশাপাশি পরিবার-পরিজন নিয়ে বন্ধুদের বাসায় ঈদ উদযাপন করতে যাবো।’
রাঙামাটির প্রবীণ সাংবাদিক প্রেস ক্লাব সভাপতি সুনীল কান্তি দে বলেন, ‘এই অঞ্চলের শান্তি ঐতিহ্যের সঙ্গে স¤পৃক্ত এ ঈদ। পাহাড়ে এটা কার অনুষ্ঠান উদযাপন হচ্ছে এটা বোঝা যায় না। এটা ঐক্যের মিলন মেলা, এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে পরস্পরের প্রতি সদভাব হয় একে অপরের প্রতি ভুলবোঝাবুঝির অবসান হয়।’

তিন পার্বত্য জেলার সকল জনগোষ্ঠীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই। এ সম্পর্কে বিশিষ্ট সমাজকর্মীও উদীচী রাঙামাটি জেলা সভাপতি অমলেন্দু হাওলাদার বলেন, ‘এই ঈদ যেন সকল ধর্ম, বর্ণ সকলের মধ্যে সম্প্রীতির উন্নয়ন ঘটায় এই কামনা করছি। আমিও এ ঈদে বিভিন্ন জায়গায় এবং বন্ধু-বান্ধবের বাসায় দাওয়াত খেতে যাব এবং সকলের প্রতি কুশল বিনিময় করব।’

 


রাইজিংবিডি/রাঙামাটি/২৯ জুলাই ২০১৪/বিজয়/রণজিৎ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়