ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

যেসব স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে আপনি ক্লান্ত হন

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেসব স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে আপনি ক্লান্ত হন

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : আপনার মনে হতে পারে যে, দিনের কার্য সময় বাড়ানো কিংবা অস্বাভাবিক ব্যস্ত কর্মসূচির কারণে আপনি ক্লান্তি অনুভব করছেন। আসলে কি তাই? আপনি সবসময় ক্লান্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ নিচের যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।

১. আপনি রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন
ডা. অ্যামি শাহ বলেন, আপনি ডাক্তারের কাছে ক্লান্তি অনুভব করার কথা বললে, তারা প্রায়সময় যে বিষয়টি প্রথমে নির্ণয়ের চেষ্টা করবেন তা হল অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা কিংবা থাইরয়েড ডিসঅর্ডার, কারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে তা ধরা পড়তে পারে। তিনি বলেন, ‘যখন কেউ বলে আমি ক্লান্তি অনুভব করি, তাহলে এটি একটি প্রশস্ত ধারণা এবং তা অনেক কিছুর ইঙ্গিত বহন করতে পারে। কিন্তু কেউ যদি বলে আমি ক্লান্তি অনুভব করি এবং দ্রুত ঘনঘন শ্বাস ফেলি অথবা যদি বলে আমার ব্যায়াম করতে কষ্ট হচ্ছে, তাহলে তা অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা নির্দেশ করতে পারে।’ রক্ত শরীরের বিভিন্ন অংশে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে না পারলে রক্তস্বল্পতা হয় এবং রক্তস্বল্পতার প্রধান কারণ হচ্ছে, আয়রন ঘাটতি। রক্তস্বল্পতায় ভোগা লোকদের ক্লান্তি ছাড়াও ঠান্ডা লাগতে পারে, মাথা ঝিমঝিম করতে পারে, মেজাজ খিটখিটে হতে পারে এবং মাথাব্যথা করতে পারে।

২. আপনার থাইরয়েড সমস্যা রয়েছে
ডা. অ্যামি শাহ বলেন, ‘আপনার যদি থাইরয়েড সমস্যা (যেমন-আন্ডারঅ্যাকটিভ থাইরয়েড বা হাইপোথাইরয়েডিজম) থাকে, আপনি ক্লান্তি অনুভব ছাড়াও ত্বকের শুষ্কতা, অত্যধিক কোষ্ঠকাঠিন্যতা এবং শক্তির অভাবে ভুগতে পারেন।’ থাইরয়েড গ্রন্থি যথেষ্ট পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ হরমোন উৎপাদন না করলে হাইপোথাইরয়েডিজম হয়ে থাকে। নারীদের হাইপোথাইরয়েডিজম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। থাইরয়েড ফাংশন টেস্টের মাধ্যেম সহজেই হাইপোথাইরয়েডিজম নির্ণয় করা যায়। যদি আপনার এ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকে, আপনার ডাক্তার আপনাকে সিন্থেটিক বা কৃত্রিম থাইরয়েড হরমোন সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।

৩. আপনার প্রিডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিস রয়েছে
রেজিস্টার্ড নার্স ও ব্লগার ডেভিড স্পেরো ডায়াবেটিস সেলফ ম্যানেজমেন্ট ডটকমে লিখেন, আপনার উচ্চ রক্ত শর্করা থাকলে আপনার রক্তসংবহন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, ফলে কোষসমূহ প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং পরিপোষক পদার্থ বা পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয় এবং এ কারণে ক্লান্তি আসে। তিনি ব্লগে আরো লিখেন, নিম্ন রক্ত শর্করার কারণেও ক্লান্তি অনুভব হতে পারে, কারণ কোষসমূহ ভালোভাবে কার্যসম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান পায় না। গবেষণায় দেখা যায়, উচ্চ রক্ত শর্করা রক্তনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই প্রদাহ আপনাকে ক্লান্তি অনুভব করাবে।

৪. আপনি বিষণ্নতায় ভুগছেন
আপনি যদি সবসময় ক্লান্তি অনুভব করেন এবং সকালে বিছানা ছাড়তে না চান বা ঘুমের সমস্যায় ভুগেন, তাহলে আপনি সম্ভবত ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতায় ভুগছেন। এক্ষেত্রে আপনার ডিপ্রেশন স্ক্রিনিং প্রয়োজন হতে পারে। ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার কিংবা লাইফ স্ট্রেসার বা অ্যালকোহল মানসিক অবস্থায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে কিনা তা নির্ধারণ করার জন্য আপনার ডাক্তার স্ক্রিনিং টুল ব্যবহার করতে পারেন। ড. অ্যামি শাহ বলেন, বিষণ্নতা, অ্যালকোহলের অপব্যবহার এবং ক্লান্তি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। তিনি বলেন, কখনো কখনো লোকজন অ্যালকোহল সেবনে বিষণ্নতা দূর করতে চাবে এবং তারপর ক্লান্ত হবে।

৫. আপনার লিকি গাট বা খাদ্য সংবেদনশীলতা আছে
গাটকে মনে করা হয় কোষের টাইট টিউব যার ভেতরের জিনিস বাইরে আসে না এবং এ গাট হচ্ছে সরু নালী যেখানে শরীরের অন্যান্য জিনিসের প্রবেশ ছাড়া শরীরের জন্য যা প্রয়োজন শরীর তা শোষণ করে। ড. অ্যামি শাহ বলেন, ‘আপনি যদি নিম্নমানের খাবার (বিশেষ করে প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাবার) খান তাহলে গাটের কোষসমূহ ঢিলা বা শিথিল হয়ে যেতে পারে, টাইট গঠনের পরিবর্তে জালের মতো গঠন হতে পারে এবং যেসব প্রোটিন ব্লাডস্ট্রিম বা রক্তস্রোতের জন্য অপ্রয়োজনীয় তা ব্লাডস্ট্রিমে চলে আসতে পারে যা প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। প্রদাহমূলক প্রতিক্রিয়ার ফলে পেট ফাঁপা, ক্লান্তি, মনমরাভাব, মাথাব্যথা এবং ওজন বেড়ে যেতে পারে। আপনার যদি ফুড সেনসিটিভিটি বা খাদ্য সংবেদনশীলতা থাকে, তাহলে আপনার ক্লান্তি লাগতে পারে, ফুসকুড়ি ওঠতে পারে, পেট ফাঁপা হতে পারে এবং ব্রেইন ফগ বা মস্তিষ্ক কুয়াশাচ্ছন্ন হতে পারে। ড. অ্যামি শাহ বলেন, ‘ফুড সেনসিটিভিটির জন্য উত্তম কোনো পরীক্ষা নেই।’ সম্ভাব্য ফুড কালপ্রিট বা যেসব খাবার খেলে ফুড সেনসিটিভিটি হয় তা নিজে নিজে পরীক্ষা করুন, যেমন- আপনি খাবার থেকে যদি সকল প্রকার গম বাদ দেন এবং ভালো অনুভব করেন, তাহলে অন্যসময় খাবার তালিকায় গম রাখুন এবং এ খাবার গ্রহণের পর অলসতাবোধ করলে বুঝা যাবে গমের প্রতি আপনার ফুড সেনসিটিভিটি আছে।

৬. আপনি অ্যাড্রিনাল ফ্যাটিগে ভুগছেন
ড. অ্যামি শাহ বলেন, ‘অ্যাড্রিনাল ফ্যাটিগ পশ্চিমা ওষুধীয় বিষয় নয়, এটি ফাংশনাল ওষুধীয় বিষয় এবং অনেক পশ্চিমা ডাক্তার একে মেডিক্যাল সমস্যা হিসেবে স্বীকার করে না।’ এটি ল্যাব পরীক্ষায় নির্ণয় করা কঠিন। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজের মতে, খুব সম্ভবত এটি পরীক্ষায় অ্যাড্রিনাল অপর্যাপ্ততা হিসেবে দেখা যায়, অথবা এন্ডোক্রাইন বা হরমোনাল ডিসঅর্ডার হিসেবে ধরা দেয় যা অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড পর্যাপ্ত পরিমাণে হরমোন উৎপাদন না করলে হয়ে থাকে। ড. অ্যামি শাহ বলেন, ‘হরমোন ভারসাম্যহীনতা আপনার জীবনের চাপপূর্ণ অবস্থার কারণে হতে পারে, যেমন- পারিবারিক সমস্যা, কার্যক্ষেত্রে নিত্য চাপ, ঘুমের স্বল্পতা, প্রয়োজনাতিরিক্ত ব্যায়াম, নিম্নমানের খাবার গ্রহণ এবং ড্রাগ বা অ্যালকোহলের অপব্যবহারে হতে পারে।’ এসব আপনার স্ট্রেস হরমোনকে বেশি পরিমাণে নির্গত করবে এবং আপনাকে ক্লান্ত ও ভঙ্গুর করে তুলবে।

৭. আপনার ইনফেকশন হয়েছে
ডাক্তাররা ক্লান্তির কারণ নির্ণয়ে দীর্ঘস্থায়ী ইনফেকশন পরীক্ষা করে দেখবেন, যেমন- এপস্টেইন বার ভাইরাস (মনোনিউক্লেওসিস) অথবা লাইম রোগ। অত্যধিক ক্লান্তির ক্ষেত্রে উভয় মেডিক্যাল সমস্যার (এপস্টেইন বার ভাইরাস এবং লাইম রোগ) উপস্থিতি থাকতে পারে।

৮. আপনার স্লিপ অ্যাপনিয়া হয়
আপনার স্লিপ অ্যাপনিয়া হলে ঘুমের মধ্যে কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটখানের জন্য শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে, এ কারণে আপনি নাক ডাকতে পারেন। পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে এ ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়, কিন্তু আপনার ব্রেইন আপনাকে শ্বাসরোধ জনিত মৃত্যু থেকে রক্ষা করবে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার স্লিপ মেডিসিন সেন্টারের পরিচালক এবং এমডি লিসা শাইভস ওয়েব এমডি ডটকমকে বলেন, ‘ব্রেইন লক্ষ্য করে আপনি কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছেন না এবং এটি আপনাকে বিপজ্জনক অবস্থায় স্বল্প সময়ের জন্য জাগিয়ে তুলে।’ এটি আপনার শ্বাসের জন্য ভালো হলেও শরীরে ক্লান্তির উদ্রেক করে। আপনি জেগে ওঠলেও এই বিনিদ্র মুহূর্ত এমন সংক্ষিপ্তভাবে আসে যে আপনি লক্ষ্যই করতে পারেন না। তাই পরেরদিন কেন ক্লান্তি লাগছে তার কারণ আপনি খুঁজে পান না।

৯. আপনার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ‘আপনার হার্ট ফেইলিউর বা হৃদস্পন্দন বন্ধ হলে, আপনার হার্ট শরীরে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত বহনের কাজ করতে পারে না।’ এক্ষেত্রে শরীর শরীরের টিস্যু থেকে ভাইটাল অর্গান বা অত্যাবশ্যক অঙ্গসমূহে রক্ত সরবরাহ করে। পায়ের মাংসপেশীতে কম রক্তের কারণে প্রতিদিনকার কাজকর্মে আপনি ক্লান্ত হতে পারেন। ফুসফুস থেকে রক্ত ব্যাকআপ হিসেবে শিরায় সরবরাহ হয় এবং পুনরায় ফুসফুসে ফিরে আসে। এর ফলে আপনার শ্বাস হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আপনি ঘুমন্ত থাকলে এ অবস্থা আপনাকে জাগিয়ে দেবে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়