ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

মুখের ক্যানসারের ১২ নীরব উপসর্গ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুখের ক্যানসারের ১২ নীরব উপসর্গ

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : নারী-পুরুষ উভয়ই মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন। ঠোঁট, গালের ভেতরের পর্দা, দাঁতের মাড়ি, জিহ্বা ও জিহ্বাসংলগ্ন মুখের অংশ, মুখের তালু, মুখ ও মুখগহ্বরের প্রতিটি অঙ্গই ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। মুখের ক্যানসারের যেকোনো উপসর্গ ধরতে পারলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। এখানে এ ক্যানসারের ১২টি উপসর্গ আলোচনা করা হলো।

* মুখে ক্ষত
অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুখের ক্ষত ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট ক্যানকার ক্ষত বা ফোঁড়ার মতো বিনাইন বা অনপকারী হয়ে থাকে। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের হেড অ্যান্ড নেক অনকোলজি স্পেশালিস্ট ব্রেইন বার্কি বলেন, ‘এসব সাধারণত দশ দিনের মধ্যে সেরে ওঠে, কিন্তু কোনো ক্ষত দুই সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় লেগে থাকলে তা দুশ্চিন্তা করার মতো লক্ষণ হতে পারে।’ ক্ষতের গঠনবিন্যাসও আপনাকে ক্লু দিতে পারে যে এটি ওরাল ক্যানসার বা মুখের ক্যানসার। ডা. বার্কি বলেন, ‘অধিকাংশ ফোঁড়ার ক্ষত বা আলসার পাতলা ও নরম, যেখানে টিউমার পুরু ও শক্ত।’ এছাড়া আলসার ও ক্যানকার ক্ষতে বিরলক্ষেত্রে রক্তপাত হয়, কিন্তু টিউমারে প্রায়ক্ষেত্রে রক্তপাত হয়।’

* দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস
এনওয়াইইউ ল্যানগোন’স পার্লমুটার ক্যানসার সেন্টারের হেড অ্যান্ড নেক টিউমার ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট মার্ক পার্সকি বলেন, ‘মুখের ক্যানসারের টিউমারে রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি পায় এবং এটি আলসারে রূপ নেয়, যেখানে ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে।’ এসব ব্যাকটেরিয়া দুর্গন্ধ তৈরি করে যা সকালের সাধারণ শ্বাসের মতো নয় এবং আপনি ব্রাশ করলেও তা দূর হবে না। এছাড়া মুখে ব্যথার কারণে কোনোকিছু খাওয়া কঠিন হয়। ডা. পার্সকি বলেন, ‘আপনার মুখে ব্যাকটেরিয়া জমা হয় যা সাধারণত খাবারের সময় ফ্লাশ আউট হয়। এসব ব্যাকটেরিয়া গ্যাস উৎপাদন করে যা দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস সৃষ্টি করে।’ এছাড়া টনসিলাইটিস বা অন্য কোনো কারণে শ্বাস দুর্গন্ধযুক্ত হলে এবং তা আড়াই সপ্তাহের বেশি সময় থাকলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

* লাল বা সাদা প্যাচ
ডা. পার্সকি বলেন, ‘আপনার মাড়ি, জিহ্বা বা মুখের ভেতর অন্যকোনো স্থানে লাল বা সাদা প্যাচ বা দাগ ইঙ্গিত দিতে পারে যে, আপনার এখনো পর্যন্ত ক্যানসার নেই, কিন্তু টিউমার ডেভেলপ হতে পারে।’ ডা. বার্কি বলেন, ‘মেডিক্যাল সেবা অনুসন্ধান করুন যদি এটি দুই সপ্তাহের বেশি থাকে, বিশেষ করে যদি এর আশপাশে কোনো শক্ত বা পুরু ক্ষত লক্ষ্য করে থাকেন।’

* কান ব্যথা
কান ব্যথা শুধুমাত্র মাথার এক পাশকে প্রভাবিত করলে তা ক্যানসারের সংকেত হতে পারে। যেসব স্নায়ু আপনার জিহ্বা, মুখের পেছন এবং ভয়েস বক্স বা বাগযন্ত্রে অনুভূতি প্রদান করে, তাদের সঙ্গে আপনার কানেরও সম্পর্ক আছে। ডা. বার্কি বলেন, ‘আপনি কানে ব্যথা পাচ্ছেন, কারণ ব্যথা পিছনে (মুখের ভেতর) হচ্ছে।’ বয়স্কদের ক্ষেত্রে কানের ইনফেকশন আনকমন এবং এটি মাথার উভয় পাশে প্রভাব ফেলতে পারে। যদি আপনার কেবলমাত্র একটি কানে অনবরত ব্যথা হয়, তাহলে ডাক্তার দেখান। এমনকি এটি সুইমার’স ইয়ারের মতো নিরীহ ইনফেকশন হলেও আপনার ডাক্তার উপযুক্ত চিকিৎসা করতে পারেন।

* জিহ্বা ব্যথা
আপনার জিহ্বার ক্ষত বা স্ফীতির ব্যথা স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ডা. বার্কি বলেন, ‘জিহ্বা অতিমাত্রায় সেনসিটিভ বা সংবেদনশীল। সেনসিটিভিটির ক্ষেত্রে এটি ফিঙ্গারটিপের মতোই।’

* অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস
মুখে ক্যানসার জনিত জিহ্বা ব্যথা বা মুখের অন্যান্য ব্যথার কারণে চর্বণ করা ও গ্রাস করা যন্ত্রণাদায়ক হয়। ডা. পার্সকি বলেন, ‘আপনি ব্যথা এড়াতে কম খেতে পারেন, যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার ওজন হ্রাস পাবে।’ যকৃত বা অন্যান্য স্থানে টিউমার ছড়িয়ে পড়ার কারণেও অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমে যেতে পারে। ডা. বার্কি বলেন, ‘ক্যানসার অগ্রসর হয় এবং অধিক ক্যালরি ব্যয় হয়, যে কারণে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন না আনলেও আপনি দেখবেন যে আপনার ওজন কমে যাচ্ছে।’

* মুখে অসাড়তা
ডা. বার্কি বলেন, ‘যদি মুখ ক্যানসারের টিউমার আপনার মুখের স্নায়ুকে আঘাত করার মতো যথেষ্ট বড় হয়, আপনি মুখের কোনো স্থানে অসাড়তা লক্ষ্য করতে পারেন।’ যদিও এ অসাড়তা অন্য কোথাও প্রসারিত হবে না। ডা. বার্কি বলেন, ‘টিউমার ঐ জায়গায় ছড়ানোর পূর্বে আপনি সম্ভবত মাসের পর মাস টিউমার থেকে ব্যথা অনুভব করে থাকবেন।’

* আলগা দাঁত
মাড়ির টিউমার সে স্থানের ক্ষতি করতে পারে যেখানে দাঁত অ্যানকর করা আছে, এর ফলে নিকটবর্তী একটি বা দুইটি দাঁত আলগা হয়ে যেতে পারে। ডা. বার্কি বলেন, ‘অধিকাংশ দাঁতের সমস্যা দাঁতের দশার কারণে হয়ে থাকে, ক্যানসারের কারণে নয়।’ যদি ডেন্টিস্ট আলগা দাঁত তুলে ফেলার পর টিস্যু থেকে যায়, তাহলে এটি ম্যালিগন্যান্ট বা ক্ষতিকর কিনা নিশ্চিত হতে তিনি বায়োপসি করতে পারেন।

* কর্কশতা
হ্যাঁ, স্মোকারদের মধ্যে মুখে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, যাদের কণ্ঠস্বর বছরের পর বছর ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়। যদি আপনার কণ্ঠস্বর হঠাৎ করে কর্কশ হয়ে যায় এবং এ কর্কশতা দুই সপ্তাহ বা তারও অধিক সময় ধরে থাকে, এটি মুখ ক্যানসারের একটি লক্ষণ হতে পারে যা আপনার কণ্ঠস্বরকে প্রভাবিত করছে।

* স্পষ্টভাবে শব্দ উচ্চারণে সমস্যা
মুখের ক্যানসার জিহ্বার ক্ষতি করে, যে কারণে কথা বলা কষ্টকর হতে পারে অথবা জিহ্বা নাড়ানো কঠিন হতে পারে। এ প্রসঙ্গে ডা. পার্সকি বলেন, ‘এসবের যেকোনো একটি ঘটলে আপনি লক্ষ্য করতে পারেন যে স্পষ্টভাবে শব্দ উচ্চারণে আপনার সমস্যা হচ্ছে যা পূর্বে হতো না।’

* চোয়াল ব্যথা
মুখে ক্যানসার হলে আপনার মুখ খোলার সময় চোয়াল ব্যথাদায়ক হতে পারে। আপনার চোয়ালের মাংসপেশি সংকুচিত হয়ে যেতে পারে, যে কারণে দাঁতের সঙ্গে দাঁত লেগে যাবে এবং মুখ খোলা কঠিন হবে। যখন আপনি মুখ খুলবেন ব্যথা আরো বেড়ে যাবে।

* গলায় পিণ্ড
ডা. বার্কি বলেন, ‘চল্লিশোর্ধ্ব কারো গলায় পিণ্ড দেখে ধরে নেওয়া যায় যে এটি ক্যানসার, যতক্ষণ না পর্যন্ত এটি অন্য কোনো রোগের লক্ষণ হিসেবে প্রমাণ না হয়।’ তিনি যোগ করেন, ‘যখন মুখে ক্যানসার ছড়ায়, তখন সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার জন্য লসিকাগ্রন্থি হচ্ছে পরবর্তী স্থান। আপনি গলার পিণ্ডের পূর্বে আপনার মুখে উপসর্গ লক্ষ্য করতে পারেন।’ দুই সপ্তাহ পরও পিণ্ড চলে না গেলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

* মুখের ক্যানসারের সর্বাধিক কমন কারণ
মুখ ক্যানসারের সর্বাধিক কমন কারণ হচ্ছে, তামাক ব্যবহার করা। সিগারেট ও চুয়িং টোবাকো উভয় আপনার মুখে ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। এনওয়াইইউ ওরাল ক্যানসার সেন্টার অনুসারে, ‘মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত ৮০ শতাংশ লোক তামাক ব্যবহার করে এবং ধূমপায়ীদের মুখে ক্যানসারের ঝুঁকি অধূমপায়ীদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি।’ আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির মতে, ‘সিগারেট, সিগার ও পাইপ মুখের যেকোনো স্থানে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে, যেখানে চুয়িং টোবাকো ও স্নাফের সঙ্গে গাল ক্যানসার, মাড়ি ক্যানসার ও ঠোঁট ক্যানসারের সম্পর্ক রয়েছে।’ তামাকের পাশাপাশি মাদক সেবনে ঝুঁকি আরো বেশি বেড়ে যায়।
 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়