ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দ্রুত ঘুমানোর ৭ পরামর্শ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ২৯ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দ্রুত ঘুমানোর ৭ পরামর্শ

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : কিছু লোক বালিশে মাথা রাখামাত্রই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়। কিন্তু অনেকেরই দ্রুত ঘুম আসে না, তারা বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করেন, তাদের ঘুমাতে সমস্যা হয়।

আপনি এই সতর্কতা শুনে থাকবেন যে, প্রতিদিন দীর্ঘ রাত জেগে থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। গবেষণায় পাওয়া গেছে, সার্কাডিয়ান রিদম সঠিকভাবে কাজ না করলে ওজন বৃদ্ধি, বিষণ্নতা ও ডায়াবেটিস হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকে।

ম্যান’স হেলথ ডটকমের নিদ্রা পরামর্শক এবং ‘দ্য স্লিপ সল্যুশন: হোয়াই ইউর স্লিপ ইজ ব্রোকেন অ্যান্ড হাউ টু ফিক্স ইট’র লেখক উইলিয়াম হান্টার বলেন, ‘অপর্যাপ্ত ঘুম এবং নিম্ন মানের ঘুম প্রত্যেকটি অর্গান সিস্টেমে বিরূপ প্রভাব ফেলে।’ তিনি যোগ করেন, ‘নিম্ন ঘুম আমাদেরকে অধিক ও নিম্নমানের খাবার খাওয়ার দিকে পরিচালিত করে। এটি হজম, কার্ডিয়াক কার্যক্রম, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ও ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে।’

দ্রুত ঘুমানো ও নিদ্রা সমস্যা কাটানোর পরামর্শের জন্য ঘুম বিশেষজ্ঞ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট রেডিটের ‘আস্ক রেডিট’ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ম্যান’স হেলথ। দ্রুত ঘুমানোর জন্য এই প্রতিবেদনের পরামর্শসমূহ মেনে চলার চেষ্টা করুন।

* দুধ পান করুন
ডা. উইন্টার বলেন, ‘দুধে প্রোটিন এ-ল্যাক্টালবুমিন থাকে। এই প্রোটিনে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রাইপ্টোফ্যান থাকে, যা মেলাটোনিন উৎপাদন করে- এই হরমোনটি ঘুমের প্ররোচনা যোগায়। গবেষণায় পাওয়া যায়, ট্রাইপ্টোফ্যান সমৃদ্ধ ডায়েট (যেমন- ডিমের কুসুম ও মিষ্টি কুমড়ার বীজ) ঘুমের বিকাশে সাহায্য করে। এছাড়া দুধের ক্যালসিয়াম মস্তিষ্কে ট্রাইপ্টোফ্যান শোষণে সাহায্য করে।

* স্লিপ ট্র্যাকার ব্যবহার বন্ধ করুন
অনেকেই নিয়মিত ফিটনেস বা স্লিপ ট্র্যাকার পরিধান করেন, যা তাদেরকে ঘুমের সময় ঠিক কি ঘটছে তা জানতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এটি কি আপনার ঘুমের জন্য ভালো? না, ঠিক তা নয়। জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল স্লিপ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, যারা পর্যাপ্ত ঘুম হবে কিনা এই দুশ্চিন্তা নিয়ে বিছানায় গিয়ে তাদের ঘুম ট্র্যাক করেছেন তাদের উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে তাদের ‘ঘুম না আসা’ সমস্যা আরো খারাপ দিকে অগ্রসর হতে পারে। গবেষকরা এই ডিসঅর্ডারকে ‘অর্থোসমনিয়া’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। ঘুম ট্র্যাকের প্রতি আসক্তিকে অর্থোসমনিয়া বলে।

* মেডিটেশন চর্চা করুন
ঘুম না আসার কারণে কি মানসিক চাপে আছেন? প্রমাণিত হয়েছে যে, মেডিটেশন করটিসলের মাত্রা হ্রাস করে। ফলে আপনি কম উদ্বেগ ও বেশি রিলাক্স অনুভব করবেন এবং এভাবে আপনার ঘুম আসার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। জেএএমএতে প্রকাশিত ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন বয়স্ক লোকদের দুশ্চিন্তা, খিটখিটে মেজাজ ও রুমিনেশন (অতীতের কোনো ঘটনার ভাবনায় এমনভাবে ডুবে থাকা যা বর্তমানকে বিপর্যয়ে ফেলে) হ্রাস করে স্লিপ কোয়ালিটি বিকাশে সাহায্য করেছে। মেডিটেশন শুরু করতে কোনো অ্যাপ বা মেডিটেশন প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ডা. উইন্টার ‘মিউজ’ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন, যা দ্রুত ঘুম আনয়নের জন্য মেডিটেশন চর্চায় সাহায্য করবে। রেডিটর ব্রিজি৩৫৯৪ বলেন, ‘আমি প্রতিরাতে ইউটিউবে গাইডেড মেডিটেশন সেশন শুনি। কখনো কখনো তাদের ইন্ট্রোডাকশন শেষ হওয়ার পূর্বেই আমি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ি।’

* বিছানাকে ঘুমোপযোগী করুন
যদি বিছানার পরিবেশ ঘুম না আসার কারণ হয়, তাহলে আপনি কন্ডিশনড অ্যারাউজালে আছেন, যার মানে হচ্ছে আপনি বিছানায় এমন কিছু করেন যা আপনার মস্তিষ্ককে ঘুমানোর পরিবর্তে জেগে থাকার প্রশিক্ষণ দেয়, যেমন- ফোনে ই-মেইল চেক করা। ডা. উইন্টার বলেন, ‘এটি বিস্ময়কর যে অনেক লোক আমাকে বলে যে তারা ৯টার দিকে বিছানায় যায় এবং ঘুম আসতে দুই ঘণ্টা লেগে যায়। তাই আপনার বিছানাকে কেবলমাত্র স্লিপিং জোন বানান। রেডিটর ফিবরিজো বলেন, ‘ফোন বা বইয়ের পেছনে সময় নষ্ট না করে মস্তিষ্ককে দ্রুত ঘুমানোর প্রশিক্ষণ দিন।’ রেডিটর জেআইএমসিডিওএন২ বলেন, ‘বিছানায় যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘণ্টা পূর্বে সকল স্ক্রিন ও লাইট বন্ধ করুন। বিছানায় শোয়ার পর শরীরকে সম্পূর্ণরূপে রিলাক্সে রাখুন।’

* কিভাবে বিশ্রাম নিতে হয় জানুন
ঘুম না আসলে উদ্বিগ্ন হবেন না- আপনি যত বেশি রিলাক্সে থাকবেন, আপনার ঘুমের মতো উপকারিতা পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেড়ে যাবে। ডা. উইন্টার বলেন, ‘বিশ্রাম ঘুমের মতো উপকার করে এবং কিছু ক্ষেত্রে উভয়ের উপকারকে প্রভেদ করা যায় না।’ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের দ্বারা পরিচালিত ২০০৮ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, যখন বিশ্রাম নেবেন তখন ঘুমে কি ঘটে তা অনুকরণ করতে আপনার মস্তিষ্কের কিছু নিউরন থেমে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের মতে, বিশ্রাম স্ট্রেস হ্রাস করে, মেজাজ উন্নত করে এবং সতর্কতা, মানসিক স্বচ্ছতা, সৃজনশীলতা ও প্রেরণা বৃদ্ধি করে। বিশ্রাম আপনাকে প্রকৃত ঘুমের সকল উপকারিতা দিতে পারবে না, যেমন- জ্ঞানীয় পুনরুদ্ধার, বর্ধিত স্মৃতিশক্তি ও হরমোন নিয়ন্ত্রণ। মন ও শরীরের প্রকৃত পুনরুদ্ধারের সর্বোত্তম অপশন হচ্ছে ঘুম; কিন্তু যদি ঘুম যাওয়া কঠিন হয়, আপনি আপনার উদ্বিগ্ন মনকে এই বলে শান্ত করতে পারেন যে, বিশ্রাম আপনার মস্তিষ্ককে একটি ব্রেক দিচ্ছে। রেডিটর জ্যামোওয়াসুর মতে, আপনি বিশ্রামের সময় হাস্যকর বা মজার কিছু ভাবতে পারেন।

* এসি চালু করুন
গবেষণায় পাওয়া গেছে, ঘুমানোর জন্য শীতল পরিবেশ সর্বোত্তম। সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে আপনার থার্মোস্ট্যাটকে ৬০ থেকে ৬৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে রাখুন। এটি আপনার শরীরের মূল তাপমাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে, ঘুমের প্ররোচনা যোগায় এমন একটি প্রক্রিয়া উদ্দীপিত করে। অন্য একটি অপশন হচ্ছে: বেড-কুলিং প্রোডাক্ট। এ প্রসঙ্গে ডা. উইন্টার বলেন, ‘ঘুমানোর জন্য আপনার বিছানায় চিলিপ্যাডের মতো প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন।’

* ব্লিনকিং ট্রিক চেষ্টা করুন
লোকমুখে শোনা যায় যে, ব্লিনকিং ট্রিক (দ্রুত চোখ বন্ধ করা ও খোলা) ঘুম আনয়নে সাহায্য করে। কিছু রেডিটর এটির ওপর জোর দিচ্ছেন। রেডিটর খালিদের মতে, ‘চোখের পাতা বন্ধ ব্যতীত এক মিনিটের ব্লিনকিং আপনাকে ভারী ঘুম দিতে পারে।’

তথ্যসূত্র : ম্যান’স হেলথ

আরো পড়ুন :










রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জুন ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়