ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চিকিৎসায় বিস্ময়কর অগ্রগতি (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 চিকিৎসায় বিস্ময়কর অগ্রগতি (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল : দিনকে দিন বিজ্ঞান সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছরের ন্যায় ২০১৮ সালেও চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হয়েছে। এ বছর ক্যানসার, স্ট্রোক, মাইগ্রেন ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় যুগান্তকারী সাফল্য পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালের ১৩ বিস্ময়কর মেডিক্যাল আবিষ্কার নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* পারকিনসন’স রোগের নতুন ওষুধ
১৯৯০ দশকে অবৈধ সাইকিডেলিক পার্টি ড্রাগ হিসেবে কেটামাইন বেশ পরিচিত ছিল। বর্তমানে এই ড্রাগটি পারকিনসন’স রোগীদের আশার আলো দেখাতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার গবেষকরা এই গ্রীষ্মে ১০ জন রোগীর ওপর ফেজ ১ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছেন- তারা লেভোডোপার (পারকিনসন’সের সর্বোত্তম ওষুধ) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে কেটামাইন ব্যবহার করছেন। ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা হেলথ সায়েন্সেসের তথ্যানুসারে জানা যায়, লেভোডোপা এই রোগের উপসর্গ কার্যকরভাবে উপশম করতে সক্ষম হলেও ৪০ শতাংশ রোগী কঠিন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হন, যেমন- অনিয়ন্ত্রণযোগ্য শারীরিক মুভমেন্ট। গবেষণায় দেখা গেছে যে, কেটামাইন এসব অনিয়ন্ত্রণযোগ্য মুভমেন্ট হ্রাস করতে পারে। গবেষকরা আশাবাদী যে, তারা সঠিক তত্ত্বাবধান ও সঠিক ডোজের মাধ্যমে কেটামাইনের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

* ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণের ডিভাইস
টাইপ ১ ডায়াবেটিস নির্ণীত হয়েছে এমন শিশুদের ভুবন সুস্থ শিশুদের জগৎ থেকে ভিন্ন- তাদের রক্ত শর্করা বা গ্লুকোজ নিয়মিত মনিটর করতে হয়, কারণ বর্ধিত রক্ত শর্করার মাত্রা জীবনাশংকার কারণ হতে পারে। মিনিমেড ৬৭০জি হাইব্রিড ক্লোজড-লুপ সিস্টেম নামক গ্লুকোজ মনিটরিং ডিভাইসটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইনসুলিন অ্যাডজাস্ট করে এবং রক্ত শর্করার বিপজ্জনক মাত্রা (নিম্ন ও উচ্চ) প্রতিরোধ করে। ৭ থেকে ১৩ বছরের ছেলেমেয়েদের ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনাকে আরো সহজ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এই গ্রীষ্মে এই ইনসুলিন পাম্পটিকে অনুমোদন দিয়েছে।

* জিকার টিকা
এ বছরের শুরুর দিকে ৬৭ জন স্বেচ্ছাকর্মীর ওপর চালানো ফেজ ১ প্ল্যাসেবো-কন্ট্রোলড, ডাবল-ব্লাইন্ড ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত হয়- প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সম্ভাব্য জিকা ভ্যাকসিনটি ছিল সহনশীল ও কার্যকর। প্রকৃতপক্ষে, এই ট্রায়ালে এই ভ্যাকসিন নেওয়া ৯২ শতাংশ রোগীর এই ভাইরাসের প্রতি ইমিউন রেসপন্স ছিল। এই ভাইরাসটি প্রধানত সংক্রমিত মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায় এবং তা গর্ভবতী নারী থেকে ভ্রুণে ছড়িয়ে পড়তে পারে- এর ফলে মাইক্রোসেফালি (মস্তিষ্কের বিকাশসাধন ব্যাহত হওয়া) নামক বার্থ ডিফেক্ট বা জন্মত্রুটি সৃষ্টি হতে পারে। সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটির চিকিৎসক ও এই গবেষণার প্রধান তদন্তকারী সারাহ জর্জ বলেন, ‘আমি খুশি যে আমাদের কাজ জিকার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।’

* চোখের রোবটিক সার্জারি
২০১৮ সালের জুনে নেচার বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে রোবট কর্তৃক সম্পাদিত মানুষের চোখের সার্জারি সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। গবেষকরা রেটিনাল সার্জারি প্রয়োজন ছিল এমন ১২ জন রোগীকে তাদের গবেষণার জন্য নিযুক্ত করেন। একটি গ্রুপকে রোবট-অ্যাসিস্টেড সার্জারি করা হয়, অন্যদিকে অন্য গ্রুপটিকে প্রচলিত ম্যানুয়াল সার্জারি করা হয়। ফলাফল? উভয় প্রকার সার্জারিই সমানভাবে কার্যকর ছিল, যদিও রোবটিক সার্জারি সম্পন্ন হতে অত্যধিক সময় লেগেছিল। ভবিষ্যতে এই রোবটিক সার্জারি সেসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে যেখানে মানুষের হাতের সার্জারির চেয়েও অধিক নিখুঁত বা নির্ভুল সার্জারি প্রয়োজন হবে।

* রক্ত শর্করা মনিটরের কন্টাক্ট লেন্স
স্বাস্থ্য বজায় রাখা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু টেস্টিংয়ের প্রচলিত ফিঙ্গার প্রিকিং মেথড অসুবিধাজনক। সুখবর হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়ার উলসান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকরা একটি স্মার্ট কন্টাক্ট লেন্স ডেভেলপ করেছেন- এই কন্টাক্ট লেন্সটি চোখের পানির মাধ্যমে রক্ত শর্করার মাত্রা নির্ণয় করতে পারে। এই গবেষণার প্রথম লেখক জিহুন পার্ক বলেন, ‘এখন আমরা সিনেমার (যেমন- মাইনরিটি রিপোর্ট এবং মিশন ইমপসিবল) কাল্পনিক স্মার্ট কন্টাক্ট লেন্সকে বাস্তবে রূপদানের খুব কাছাকাছি।’

* শিশুকে শান্ত করার রোবটিক ব্যাসিনেট
এসএনওও (স্নু) হচ্ছে একটি রোবটিক ব্যাসিনেট বা দোলনা- এই দোলনাটি দোল দিয়ে ও সান্তনাকারী শব্দ শুনিয়ে শিশুদের কান্না থামাতে ভূমিকা রাখতে পারে, এটি অতিরিক্ত কেয়ারগিভারের ভূমিকা পালন করে। ঘুম বিশেষজ্ঞ হার্ভি কার্প এই দোলনাটি ডেভেলপ করেছেন- বর্তমানে স্নু নিয়ে গবেষণা চলছে যেন এটি শিশুর মায়ের ঘুম উন্নত করে প্রসব-পরবর্তী বিষণ্নতা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা করতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব কেনটাকি চিলড্রেন’স হসপিটাল এবং সাউথ শোর হসপিটালের গবেষকরা এই দোলনাকে শিশুকে মাই ছাড়ানো এবং ওপিওইড-আসক্ত মায়েদের শিশুদের শান্ত করার উপযোগী করার জন্য গবেষণা চালাচ্ছেন। ইউনিভার্সিটি অব কেনটাকি হসপিটালের এনআইসিইউ নার্স ব্রিটানি ভ্যান্ডিকার বলেন, ‘স্নু বেডের মতো নন-ফার্মাকোলজিক টুলসের ব্যবহার নিওন্যাটাল অ্যাবস্টিনেন্স সিন্ড্রোমের শিশুদের শান্ত করতে বড় অবদান রাখতে পারে, যেখানে তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন নাও হতে পারে।’

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ ডিসেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়