ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

স্বর্ণ চোরাচালানে ক্ষতি হাজার কোটি টাকা, নীতিমালা দাবি

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১২, ২৭ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বর্ণ চোরাচালানে ক্ষতি হাজার কোটি টাকা, নীতিমালা দাবি

এম এ রহমান মাসুম: দেশে বছরে স্বর্ণের চাহিদা ২০ থেকে ৪০ মেট্রিক টন। যার ৯০ শতাংশ আসে অবৈধ পথে। আর অবৈধভাবে স্বর্ণ আসায় বছরে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে প্রায় হাজার কোটি টাকা।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে ‍এসেছে এমন ভয়াবহ চিত্র। আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল‌্যান্ড ইত‌্যাদি দেশ থেকে অবৈধভাবে স্বর্ণ বাংলাদেশ বিমান ও দেশীয় বেসরকারি বিমান সংস্থার মাধ‌্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

ব‌্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি চাই। শুধু যথাযথ নীতিমালার অভাবে আমাদের এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে আমরাও নতুন নীতিমালার পক্ষে। যা আগামি ডিসেম্বরের মধ‌্যে হবে বলে আশা করি।

টিআইবি বলছে, ব‌্যবসায়ীদের হিসাব মতে প্রতিদিন দেশের স্বর্ণবাজারে প্রায় ২৫ কোটি টাকা মূল‌্যের স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কারের লেনদেন হয়। যেখানে বছরে স্বর্ণের চাহিদা ২০ থেকে ৪০ মেট্রিক টন। আর প্রতি বছর নতুন স্বর্ণের অভ‌্যন্তরিণ চাহিদা ১৮ থেকে ৩৬ মেট্রিক টন। এর মধ‌্যে দেশীয় চাহিদার ১০ শতাংশ তেজাবি স্বর্ণ থেকে সংগৃহীত হয়। বাকিটা অবৈধভাবে দেশে আসে। এতে সরকারের প্রতি বছর ৪৮৭-৯৭৪ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে।

টিআইবি জানায়, গত চার বছরে আটক স্বর্ণের পরিমাণ ১ হাজার ৬৭৫ কেজি। যা বছর প্রতি ৪১৮.৭৩ কেজি। স্বর্ণখাতের ওপর সরকারের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে স্বর্ণবাজার কালোবাজার নির্ভর হয়ে পড়েছে। আর এই কালোবাজারির সঙ্গে সিভিল এভিয়েশন ও সরকারি-বেসরকারি বিমান সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে গবেষণায়।

এখন পর্যন্ত আমদানি নীতি না হওয়া ও চোরাচালান বন্ধ না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব, চোরাচালান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের একাংশের প্রভাব এবং রপ্তানি শিল্প হিসেবে স্বর্ণখাত বিকাশে পদক্ষেপের অভাবকে দায়ী করছে টিআইবি।

স্বর্ণ চোরাচালানের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুয়েলারি এসোসিয়েশনের সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা সরকারকে বার বার বলেছি স্বর্ণ বৈধভাবে আমদানির সুযোগ দেন। আমরা বৈধভাবে স্বর্ণ চাই। আমাকে লাইসেন্স দিলেন, ব‌্যবসা করতে দিলেন অথচ স্বর্ণ কোথায় পাবো সেটা ঠিক করে দেন না। এ নিয়ে আমরা একাধিকবার সাংবাদ সম্মেলনেও বলেছি।’

সরকারের রাজস্ব ক্ষতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চোরাচালানের সঙ্গে কোনো জুয়েলারি ব‌্যবসায়ী জড়িত না। আগেও ছিল না, এখনো নেই। আপনারা দেখেন, কোনো জুয়েলারি দোকান থেকে চোরাচালানের স্বর্ণ উদ্ধার হয়েছে কিনা। চোরাচালানের মাধ‌্যমে যা আসে তা বিদেশে পাচার হয়ে যায়।  বাংলাদেশ শুধু স্বর্ণ চোরাচালানের রুট হিসেবে ব‌্যবহৃত হয়। এটা সবসময় বলে এসেছি। আমরা স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা চাই। কিছুদিন আগেও এনবিআরের কাছে সোনা আমদানির নীতিমালার বিষয়ে বলেছি। আমরা কালোবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নই।’

এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'স্বর্ণ চোরাচালান ও কালোবাজারি সংশ্লিষ্ট কিছু আইনি বিধান রয়েছে তবে এ নিয়ে কোনো সমন্বিত আইন নেই। যেটা আছে তারও প্রয়োগের বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে। এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কর্মকর্তাদের একাংশের সঙ্গে চোরাচালানকারী ও ব্যবসায়ীদের একাংশের যোগসাজশ রয়েছে। যার ফলে এই খাতটি বিকাশমান ও সম্ভাবনাময় হলেও টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে না। সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভোক্তা, স্বর্ণশিল্পী ও শ্রমিকদের অধিকার হরণ হচ্ছে। তাই স্বর্ণখাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।’

টিআইবি আরো জানায়, চোরাচালানের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ এ রুজু হয়। এর অধীন চোরাচালানের অপরাধ অজামিনযোগ্য হলেও বাস্তবক্ষেত্রে দুর্বল তদন্ত ও অভিযোগ গঠন, অপর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ ও সাক্ষীর অনুপস্থিতি ইত্যাদি কারণে চোরাচালানের অভিযোগে অভিযুক্তরা উচ্চ আদালত থেকে সহজে জামিন যায় এবং পুনরায় চোরাচালানের কাজে জড়িয়ে পড়ে।

স্বর্ণ চোরাচালন ও রাজস্ব ফাঁকি প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘স্বর্ণ চোরাচালান শুধু  রাজস্ব ফাঁকির দৃষ্টিতে দেখলে হবে না। এর সঙ্গে আরো বড় বিষয় জড়িত। এর সঙ্গে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত। যা অত‌্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। স্বর্ণ ব‌্যবসা আমাদের ঐতিহ‌্যের একটি অংশ। আমরা বলবো না স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে সকল ব‌্যবসায়ী জড়িত।’

তিনি বলেন, ‘স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা কিন্তু রয়েছে। নীতিমালা নেই কে বলেছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে ব‌্যাগেজে ২ পিস সোনা আনা যাবে। এটা অমান‌্য করলে শাস্তিরও বিধান রয়েছে। এছাড়া এতে শুল্ক ও আয়করের বিষয়ে বিধানের কথা উল্লেখ আছে। বলতে পারেন বর্তমান নীতিমালায় সব বিষয় এক জায়গায় নেই। তবে আমরা চাই নীতিমালা আরো সহজ ও স্বচ্ছ হোক। আমরা মনে করি, আগামি ডিসেম্বরের মধ‌্যে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী নীতিমালা হয়ে যাবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ নভেম্বর ২০১৭/এম এ রহমান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়