ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

প্রতিকূল অবস্থাতেও ঈর্ষান্বিত উন্নয়ন

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ৯ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রতিকূল অবস্থাতেও ঈর্ষান্বিত উন্নয়ন

কেএমএ হাসনাত : গত আট বছর দেশে ঈর্ষান্বিত উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে টানাপোড়েন, দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান, অভ্যন্তরীণ নেতিবাচক রাজনীতি, দাতা সংস্থাগুলোর অসহযোগিতাসহ নানা কারণে দেশ যেখানে পিছিয়ে পড়ার কথা ছিল সেখানে এই উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবি করছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুব শিগগির সরকারের গত আট অর্থবছরের(২০০৮-২০০৯ থেকে ২০১৬-২০১৭) আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন অগ্রগতি তুলে ধরা হবে।  ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনের খসড়াও প্রস্তুত করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংকটের মাঝেও বাংলাদেশে বিগত আট বছরে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটি ধারা সূচিত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, খাদ্যশস্য উৎপাদন, মূল্যস্ফীতি, আমদানি, রপ্তানিসহ বিভিন্ন সূচকে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল দেশের জনগণের মধ্যে সুষমভাবে বণ্টন হওয়ায় দারিদ্র্য দ্রুত হ্রাস পেয়েছে।’

অর্থ বিভাগ উন্নয়নের এ চিত্র খুব শিগগিরই প্রকাশ করবে বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ২০০১-২০০২ থেকে ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে দেশে গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। সেখানে ২০০৯-২০১০ হতে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।

মাথাপিছু আয় : ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার, যা ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার।

রপ্তানি আয় : ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ১০ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।

রেমিট্যান্স : ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স ছিল ৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক  ৭৭ বিলিয়ন ডলার।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ : ২০০৫-২০০৬ অর্থবছর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছর শেষে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

খাদ্যশস্য উৎপাদন : ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল ২ কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৮৭ লাখ টনে।

বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা : ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াট। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৫ হাজার ২৪৫ মেগাওয়াট।

জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান : ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪২ শতাংশ।

বাজেটের আকার : ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৩ লাখ ১৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটের আকার বেড়ে হয় ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা।

মোট বিনিয়োগ : ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল জিডিপির ২৬ দশমিক ১ শতাংশ। যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ।

সরকারি বিনিয়োগ : একই সময়ে সরকারি বিনিয়োগ জিডিপির অংশ হিসেবে ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশে।

মুদ্রাস্ফীতি : ২০০৯-২০১৭ পর্যন্ত সময়ে মুদ্রাস্ফীতি এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে। গড় মূল্যস্ফীতির হার ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরের ৯ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে।

সামাজিক খাতে অগ্রগতির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালে প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল ছিল ৬৬ দশমিক ৫ বছর। ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৭১ দশমিক ৬ বছর।

উল্লেখ্য, গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি ইতিবাচক সূচক।

দরিদ্র সংখ্যা : দরিদ্র জনসংখ্যার হার ২০০৫ সালে ছিল ৩৪ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এ ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এছাড়া অতিদারিদ্রের হার, স্বাক্ষরতার হার, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, নারীর ক্ষমতায়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ বিভিন্ন খাতের সূচকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন হয়েছে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ জানুয়ারি ২০১৮/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়