ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্বাধীনতাস্তম্ভকে যুক্ত করে গ্রন্থমেলা, সময় বাড়ছে ৩০ মিনিট

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বাধীনতাস্তম্ভকে যুক্ত করে গ্রন্থমেলা, সময় বাড়ছে ৩০ মিনিট

ফাইল ফটো

হাসান মাহামুদ :  ঐতিহ্যবাহী অমর একুশে গ্রন্থমেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতাস্তম্ভকে। এবারের আসর প্রতিদিন ৩০মিনিট করে বাড়ানো হচ্ছে। এরই মধ্যে বর্ধিত এই সময়সূচি চূড়ান্ত এবং ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া মেলায় এবার বেশকিছু নতুন বিষয় সংযোজন হচ্ছে।

আগের বছরগুলোতে শুক্র, শনিবার ও ২১ ফেব্রুয়ারি ছাড়া প্রতিদিন মেলা চলতো বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এবার একাডেমি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিদিন দুপুর ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ও সরকারি ছুটির দিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

সময় বৃদ্ধির বিষয়ে একুশে গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, লেখক প্রকাশকদের দাবির মুখে মেলার সময়সূচি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রন্থমেলা বাঙালির সংস্কৃতিরই একটি অংশে পরিণত হয়েছে। শ্বাশত এই মেলার সৌন্দর্য্য ও কলেবর বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে কোনো ভাল প্রস্তাবনা গ্রহণ করতে একাডেমি সবসময়ই প্রস্তুত।

বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এদিন বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এ মেলার উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে তিনি মেলার ওয়াইফাই সংযোগ ও ওয়েবসাইট উদ্বোধন করবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭’ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করবেন। মেলা চলবে মাসের শেষদিন পর্যন্ত।

এবার বইমেলা বসছে দেড় লাখ বর্গফুট এলাকায়। স্টলের সংখ্যা ৮ শতাধিক। এর মধ্যে বইয়ের স্টল ৬৭০, লিটল ম্যাগ ১৫০ ও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বেশকিছু সংখ্যক স্টল থাকবে। মেলার ব্যবস্থাপনায় এবার নিরাপত্তা আরো জোরদার হচ্ছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য ফোর্স। মেলায় ২৫০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা থাকবে।
 


মেলায় এবার বেশকিছু নতুন সংযোজন হচ্ছে। এবার প্রথমবারের মতো মেলার সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতাস্তম্ভকে যুক্ত করা হয়েছে।

এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা অনুষ্ঠান মঞ্চ হবে আরো বড়। ব্যবস্থাপনায় জনবল বাড়বে। কবি-সাহিত্যিকদের প্রবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলাদা একটি গেট স্থাপন করা হয়েছে।

প্রতি বছর মাসের প্রথমদিকে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন হলেও এবার হবে বইমেলা চলাকালে ২২ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি। এই সম্মেলনে ১৫টি দেশের কবি-লেখকরা যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনেরও উদ্বোধন করবেন।

বইমেলায় শিশু কর্ণারকে এবারও বেশ আকর্ষণীয় করে সাজানো হচ্ছে। পুরো চত্বরটি নানা রঙ বেরঙের লাইটিংয়ে সাজানো হবে। থাকবে শিশুদের জন্য খেলার সামগ্রী। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও শুক্র ও শনিবার থাকবে ‘শিশু প্রহর’। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থমেলা চত্বরের পরিবেশ নান্দনিক ও মনমুগ্ধকর করতে ফোয়ারা, চত্বর জুড়ে বিভিন্ন স্থানে ফুলের চারা রোপণ, স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল ও আড্ডার জন্য উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়েছে।

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য ইতিমধ্যে মেলা সংলগ্ন এলাকাজুড়ে আড়াইশত ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশের পক্ষ থেকে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থারসমূহের নিরাপত্তাকর্মীরা।

গ্রন্থমেলায় গতবারের মতো টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটো মূল প্রবেশ পথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাইরের আটটি পথ থাকছে। এবারো উদ্যানে প্রবেশের সুবিধার্থে একটি নতুন সুপ্রশস্ত গেট নির্মাণ করা হয়েছে। অধিকাংশ স্টল পূর্ব থেকে পশ্চিমে নিয়ে আসা হয়েছে।

শারিরীক প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক মানুষের চলাচলের জন্য এবারো ২০টি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাঠক-দর্শনার্থীদের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যোন ও বাংলা একাডেমি উভয় চত্বরে পর্যটনের দুটি খাবারের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে স্টলের ওপরে টিনের ছাউনি দেওয়া হচ্ছে মেলায়। এছাড়া শিশু কর্নারে স্থাপন করা হয়েছে মাতৃদুগ্ধ সেবাকেন্দ্র।
 


টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের মূল প্রবেশ পথে এলইডি মনিটর স্থাপন করা হয়েছে। এ থেকে মেলা সংক্রান্ত তথ্য জানা যাবে।

এবারো বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০ শতাংশ এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন, তাদের বই বিক্রি/প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে।

এবারো মেলা চলাকালে নামাজ ও মধ্যাহ্নভোজের জন্য এক ঘণ্টার বিরতি থাকবে। মেলার মূল মঞ্চে প্রতিদিনই থাকছে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট লেখক, সাহিত্যিক, গবেষক, চিন্তাবিদ ও কবিরা অংশ নেবেন। একাডেমির নিজস্ব দুটি ক্যান্টিন দর্শকদের জন্য সর্বক্ষণ খোলা থাকবে।

মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার করবে। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলও মেলার তথ্যাদি প্রতিদিন সরাসরি সম্প্রচার করবে। গ্রন্থমেলার খবর নিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বুলেটিন প্রকাশিত হবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিদিন মেলার তথ্য প্রচার করবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গের যে বীরত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে, সেই স্মৃতিকে অম্লান রাখতেই এই মাসে আয়োজিত এই বইমেলার নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। গ্রন্থমেলা স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর অন্যতম। এটি ব্যাপকভাবে পরিচিত একুশে বইমেলা হিসেবে। প্রতি বছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে এই মেলা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে ও বর্ধমান হাউজ ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সাল থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাংলা একাডেমির মুখোমুখি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

এবার ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭’ পেয়েছেন-কবিতায় মোহাম্মদ সাদিক ও মারুফুল ইসলাম, কথাসাহিত্যে মামুন হুসাইন, প্রবন্ধে মাহবুবুল হক, গবেষণায় রফিকউল্লাহ খান, অনুবাদে আমিনুল ইসলাম ভুইয়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্যে কামরুল হাসান ভুইয়া ও সুরমা জাহিদ, ভ্রমণে শাকুর মজিদ, নাটকে মলয় ভৌমিক, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে মোশতাক আহমদ এবং শিশুসাহিত্যে ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জানুয়ারি ২০১৮/হাসান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়