ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

অর্থ পাচার নয়, দুদকের লক্ষ্য অবৈধ সম্পদ

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১০, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অর্থ পাচার নয়, দুদকের লক্ষ্য অবৈধ সম্পদ

এম এ রহমান মাসুম : পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে যেসব বাংলাদেশিদের নাম এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান লক্ষ্য তাদের অবৈধ সম্পদের খোঁজ করা।

কারণ দুদকের অনুসন্ধান বা পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে সংশ্লিষ্ট সবাই ব্যবসায়ী বা বেসরকারি পর্যায়ের। যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ (সংশোধিত) আইন ২০১৫ অনুযায়ী দুদকের এখতিয়ার বহির্ভূত বলে মনে করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

যদিও অনুসন্ধান পর্যায়ে অর্থ পাচার বা এ সংক্রান্ত অন্য কোনো অপরাধের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে সংস্থাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের এফআইইউ, পুলিশের সিআইডি বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে তথ্য পাঠাবে।

দুদক চেয়ারম‌্যান ইকবাল মাহমুদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী যদি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থ পাচারে সংশ্লিষ্ট থাকেন, কেবল তখনই দুদক অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে পারে। তবে পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম এসেছে তাদের অনুপার্জিত আয়ের বিষয়টি দুদক অনুসন্ধান করবে এবং অনুসন্ধকালে যদি মানিলন্ডারিংসংক্রান্ত অন্য কোনো প্রেডিকেট অফেন্স পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে কমিশনের প্রাপ্ত তথ্যাদি বাংলাদেশ ব্যাংকের এফআইইউ, পুলিশের সিআইডি অথবা রাজস্ব বোর্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হবে।

২০১৬ সালের প্রথম দিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) ‘পানামা পেপারস’ নামে নথি প্রকাশ করে। যেখানে ১ কোটি ১০ লাখ নথি ফাঁস করা হয়। ওই তালিকায় বিশ্বের কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধানসহ শতাধিক ক্ষমতাধর ব্যক্তি ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের কর ফাঁকি দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ার প্রমাণ রয়েছে। যেখানে ৩৪ বাংলাদেশি ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের নাম আসে।

ওই বছরের ১৭ নভেম্বর বেনামি প্রতিষ্ঠান খুলে বিদেশে বিনিয়োগ করার ২৫ হাজার নথি ফাঁস করে প্যারাডাইস পেপারস। যেখানে নতুন করে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু, তার স্ত্রী নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, ছেলে তাফসির আউয়াল ও তাবিথ আউয়ালসহ মোট ১০ জন বাংলাদেশির নাম আসে। সর্বশেষ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ট্যাক্স ফাঁকি দিতে মাল্টায় বিভিন্ন কোম্পানিতে অর্থ বিনিয়োগ করার নতুন তালিকা প্রকাশ পায়। প্রকাশিত এ তালিকায় রয়েছে নতুন ২০ জন বাংলাদেশির নাম।

এদের মধ্যে রয়েছেন মুসা বিন শমসের, জুলফিকার আহমেদ, মোহাম্মদ এ মালেক, শাহনাজ হুদা রাজ্জাক, ইমরান রহমান, মোহাম্মদ এ আওয়াল, আতিকুজ্জামান, তাজুল ইসলাম তাজুন, ফারহান আকিবুর রহমান, আমানুল্লাহ চাগলা, মাহমুদ হোসেন, মোহাম্মদ কামাল ভুইয়া, তুহিন ইসলাম সুমন, মাহতাব রহমান, মো. ফজলে এলাহি চৌধুরী, ইউসুফ খালেক, ফারুক পালোয়ান, খন্দকার আসাদুল ইসলাম। এ তালিকায় দুটি নাম দুবার করে রয়েছে। কর ফাঁকি দিতে এসব ব্যক্তি মাল্টায় কোম্পানি খুলেছিলেন বলে বলা হয়। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস এ তথ্য ফাঁস করেছে।

দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম এসেছে, এ বিষয়ে কমিশনের একটি বিশেষ টিম কাজ করছে। এ টিমের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে তাদের সম্পদসংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। ইতোমধ্যে পানামা পেপারসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৫ জন ব্যক্তিকে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জনের লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। যাদের কেউ কেউ বিদেশের স্থায়ী নাগরিক। এখন সবার নাম ঠিকানা যাচাই করা হচ্ছে। তাদের কেউ কেউ দুদককে জানিয়েছে এদেশের কোনো অর্থ পাচার করেননি বরং বিদেশে উপার্জিত অর্থ এসব জায়গায় বিনিয়োগ করেছেন।

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিদেশ থেকে বেশ কয়েকজনের কয়েকজনের আংশিক তথ‌্য পেয়েছে দুদক। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে ওই তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলেও মেলেনি কাঙ্ক্ষিত তথ্য।

দুদক চেয়ারম‌্যান ইকবাল মাহমুদ এ বিষয়ে রাইজিংবিডিকে আরো বলেন, ‘পানামা পেপার্সের কাজ আমরা এখনো শেষ করতে পারিনি। মানুষের মনে একটি ধারণা থাকতে পারে- এতদিন ধরে দুদক কী করছে। সমস্যা হচ্ছে, মানিলন্ডারিং যখন হয়, তখন কারো কাছে তথ্য থাকলেও হুট করে তা পাওয়া যায় না। একটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এটাকে বলে এমএলএআর (মিচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্ট রিকোয়েস্ট) পাঠানো। আমরা এটি একাধিকবার পাঠিয়েছি, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত উত্তর মেলেনি।’

২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল পানামা পেপারসসংক্রান্ত তথ্য নিয়ে দুদকের উপপরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঁঞার নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম কাজ শুরু করে। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন, দুদকের সহকারী পরিচালক মজিবুর রহমান ও উপসহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাত।

পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ দেখতে দুদক স্প্রিংশোর ইনকরপোরেটেড প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সালমা হক ও তার স্বামী এফএম জুবাইদুল হক এবং রাইটস্টার প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার আজমত মঈনসহ ১৫ জন ব‌্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর্নধারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

এরপর যখন প্যারাডাইস পেপারসের ফাঁসের ঘটনা ঘটে সে বিষয়েও দুদক অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্যারাডাইস পেপারসে দুই দফায় প্রকাশ করা মোট ৩০ বাংলাদেশির ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে বলেও সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।

দুদক পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর তত্ত্বাবধানে ওই টিম অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।


* তিনটি দেশের তথ‌্য দুদকে, অনুসন্ধানে নতুন গতি

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/এম এ রহমান/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়