ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ফোর-জি ভ্যাট : বকেয়া ১৮ কোটি টাকা আদায়ে শ্লথ গতি

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ২ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফোর-জি ভ্যাট : বকেয়া ১৮ কোটি টাকা আদায়ে শ্লথ গতি

এম এ রহমান মাসুম : চতুর্থ প্রজন্ম মোবাইল সেবার (ফোর-জি) তরঙ্গ মূল্যের উপর ভ্যাট বাবদ রবি আজিয়াটার কাছে পাওনা প্রায় ১৯ কোটি টাকা আদায়ে শ্লথ গতিতে হাঁটছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

ফোর-জি তরঙ্গ মূল্যের উপর ভ্যাট বাবদ গ্রামীণফোন এবং বাংলালিংকের কাছ থেকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মাধ্যমে ১৫২ কোটি টাকা আদায় করতে সক্ষম হলেও বিপরীত চিত্র রবি আজিয়াটার ক্ষেত্রে।

চলতি বছরের ১৯ মার্চ বিটিআরসি বৃহৎ করদাতা ইউনিটে (এলটিইউ) গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের ভ্যাটবাবদ ওই টাকা পরিশোধ করে। কিন্তু এরপর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও আদায় হয়নি রবি আজিয়াটার কাছে পাওনা ১৮ কোটি ৯৩ লাখ ৫২ হাজার ৫২৯ টাকা। এমনকি ওই ভ্যাট আদায়ে মামলা পর্যন্ত করা হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে এলটিইউ কমিশনার মো. মতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। যদিও এর আগে রবির কাছে পাওনা ভ্যাট পরিশোধ না হলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন মতিউর রহমান।

এলটিইউ সূত্রে জানা যায়, গত ২১ মার্চ রবি আজিয়াটা লিমিটেডের কাছে পাওনা আদায়ে বিটিআরসির মাধ্যমে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করেছিল বৃহৎ করদাতা ইউনিট। বিটিআরসি চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিটিআরসি রবি আজিয়াটা লিমিটেডকে লাইসেন্স বা টেকনোলজি নিউট্রালিটি সেবা প্রদান করেছে। রবি উক্ত সেবার বিপরীতে বিটিআরসিকে ৩৭৮ কোটি ৬২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৩ টাকা পরিশোধ করলেও বিটিআরসি মূল্য সংযোজন বিধিমালা ১৯৯১ এর  ১৮ (ঙ) এবং সাধারণ আদেশ নং ০২/মূসক/২০১৮ অনুযায়ী উৎসে মূসক বাবদ ১৮ কোটি ৯৩ লাখ ৫২ হাজার ৫২৯ টাকা জমা দেয়নি। প্রতিষ্ঠানের এরূপ কার্যকলাপ মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ধারা ৩ ও ৬, মূসক বিধিমালার ১৮(ঙ) এবং এনবিআর আদেশের লঙ্ঘন। তাই অনতিবিলম্বে উক্ত রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

সূত্র জানায়, ফোর-জি সেবা চালু হওয়ার আগেই মোবাইল কোম্পানিগুলোর তরঙ্গ মূল্য বাবদ ভ্যাট পরিশোধ করার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করায় ফোন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করে এলটিইউ। এর প্রেক্ষিতে গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক প্রথম কিস্তির পাওনা ১৫২ কোটি টাকা ভ্যাট পরিশোধ করে। যা গত ১৯ মার্চ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন  বৃহৎ করদাতা ইউনিটে (এলটিইউ) এই অর্থ জমা দেয়। তবে রবির কাছে ফোর-জি তরঙ্গ মূল্য বাবদ পাওনা ১৭ কোটি টাকার ভ্যাট এখনও পরিশোধ হয়নি।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ প্রজন্মের দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা চালু করার জন্য ৪টি মোবাইল ফোন অপারেটরকে ফোর-জি লাইসেন্স দেয় বিটিআরসি। সেই হিসেবে ২০ ফেব্রুয়ারির আগেই ফোর-জি তরঙ্গ মূল্য বাবদ ১৬৯ কোটি টাকা ভ্যাট পরিশোধ করার কথা ছিল এনবিআরকে। বাংলালিংক দুই হাজার ৫৫৮ কোটি টাকায় ১০ দশমিক ৬ মেগাহার্স এবং গ্রামীণফোন এক হাজার ২৮৪ কোটি টাকায় ৫ মেগাহার্স তরঙ্গ ক্রয় করে। এর ওপর এনবিআরকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান করতে হবে।

এর আগে ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ মূসক অডিটের পাঁচ সদস্যের কমিটি কর্তৃক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে রবির বিরুদ্ধে এসএপি সফটওয়্যার খাতে অপরিশোধিত মূসক বাবদ ৫৫৩ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার ৫২৮ টাকা এবং অপরিশোধিত উৎসে মূসক বাবদ ১৫৮ কোটি ২০ লাখ ৯৯ হাজার ৩৮৮ টাকা কম পরিশোধের প্রমাণ পায়। অর্থাৎ অনাদায়ী হিসেবে মোট ৭১১ কোটি ৮২ লাখ ১১ হাজার ৯১৭ টাকা আদায়ের জন্য দাবিনামা চূড়ান্ত করেছিল এলটিইউ। যা পরবর্তীকালে উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। শেষ পর্যন্ত আদালতের আদেশেই রাজস্ব আদায়ের পক্ষে বিষয়টির সুরাহা হয়।



রাইজিংবিডি/২ জুন ২০১৮/এম এ রহমান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়