ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৪ গুণ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৭, ২৯ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৪ গুণ

কেএমএ হাসনাত : দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গত এক দশকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। প্রতি অর্থবছর দেশের জাতীয় বাজেটের আকার বেড়েছে সেই সঙ্গে গত ১০ বছর এ বিভাগের আওতাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অন্যান্য অধিদপ্তর/সংস্থার উপর দায়িত্ব বেড়েছে। গত দশ বছরের মধ্যে তাদেরকে দেওয়া রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬ বার অর্জন করতে পেরেছে। আর রাজস্ব আদায় ৪ গুণ বেড়েছে।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ সারা দেশে রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা ও অধিকতর রাজস্ব আহরণের যুগপৎ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের মোট কর রাজস্বের প্রায় ৮৬ শতাংশ আহরণ এবং জাতীয় বাজেটের প্রায় ৬০ শতাংশ যোগান দিচ্ছে এ বিভাগ।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশের সার্বিক উন্নয়নে একটি দক্ষ রাজস্ব প্রশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৭৬ (The National Board of Revenue Order, 1972)- এর মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অভ্যন্তরীণ রাজস্ব তথা অক্সিজেন সরবরাহ করে জনকল্যাণে উন্নয়নমূলক কাজ সচল রাখার লক্ষ্যে সুশাসন ও আধুনিক ব্যবস্থাপনা কাঠামোর আলোকে পরিচালিত হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সার্বিক কর্মকাণ্ডের মূল লক্ষ্য হল : প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আরোপ, পরীক্ষণ, পরিবীক্ষণ ও আহরণ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আহরণ সম্পর্কিত আইন, বিধি-বিধান প্রণয়ন ও প্রয়োগে ব্যাখ্যা প্রদান এবং বিশ্লেষণ। জ্ঞানভিত্তিক, ন্যায়নীতিনির্ভর এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশে আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক, আবগারি ও আয়কর আহরণে নিয়োজিত দপ্তরসমূহের কার্যক্রম পরিবীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব বাজেট প্রস্তুতকরণ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশসমূহের সঙ্গে সাধারণ সহযোগিতা চুক্তি, অনুদান ও ঋণসংক্রান্ত চুক্তি এবং কর সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদনে সহায়তা করা।’

এছাড়াও স্বেচ্ছা প্রতিপালনে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে করদাতা এবং রাজস্ব আহরণের পরিধি বৃদ্ধি ও সঠিক কর নিরুপণের লক্ষ্যে তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করা। কর ফাঁকিরোধ, চোরাচালান প্রতিরোধ, আমদানি-রপ্তানি নীতি বাস্তবায়ন, দেশীয় শিল্পের সংরক্ষণ ও বিকাশ এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে সরকারি নীতি প্রণয়ন, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ ও প্রত্যর্পণ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধিতে এবং দেশীয় শিল্পের বিকাশ ও বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে নীতি প্রণয়নে সহায়তা করা এবং করদাতা সেবা প্রদান এবং করদাতাদের কর পরিশোধে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন শিক্ষামূলক ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির আয়োজন করা।

গত ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরের রাজস্ব আদায় ছিল ৪৭,৪৩৫.৬৬কোটি টাকা। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১,৭১,৬৫৬.৪৪ কোটি টাকা। গত দশ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯৮ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং গড় প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত কর ও জিডিপির অনুপাত ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশে এ উন্নীতকরন। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১,৮৫,০০০.০০ কোটি টাকা ও আহরণ হয়েছিল ১,৭১,৬৫৬.৪৪ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। গত দশ বছরের মধ্যে রাজস্ব আদয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৬ বার।

২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বর্তমান সরকারের সময়কালে বাংলাদেশে এনবিআর রাজস্ব আদায় রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ সময়ে রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি এবং কর রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত স্বাধীনতা উত্তরকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল। এ সময়ে আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর আদায়ের হারও ছিল বেশি, যা দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের ইঙ্গিত বহন করে।



২০০২-২০০৩ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায় ছিল ২৩,৫৬১ কোটি টাকা, যা ২০০৬-২০০৭ সালে ৩৭, ২১৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। এক্ষেত্রে বিবেচ্য সময়ে রাজস্বের প্রবৃদ্ধি ছিল অর্থবছরে গড়ে ১১.৫ শতাংশ। অন্যদিকে ২০০৮-২০০৯ সময়ে রাজস্ব ৫২,৫২৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২,০৬,৪০৭.২৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। গত দশ বছরে এনবিআরের আহরিত রাজস্বের পরিমাণ প্রায় চারগুণ হয়েছে। এক্ষেত্রে বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি ছিল ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা আগের সরকারের সময়কার অর্জিত প্রবৃদ্ধির প্রায় দ্বিগুণ। রাজস্বের এই বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি সরকারের সুষ্ঠু ও সঠিক করনীতি ও ব্যবস্থাপনার ফসল।

**



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ নভেম্বর ২০১৮/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়