ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শুধু স্বচ্ছলতা নয়, পরিবর্তন এসেছে গ্রামের মানুষের মস্তিষ্কেও

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৯, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শুধু স্বচ্ছলতা নয়, পরিবর্তন এসেছে গ্রামের মানুষের মস্তিষ্কেও

হাসান মাহামুদ: ‘ধুলোমাখা পথ’, ‘কাদামাখা শৈশব’, এক সময় গ্রাম নিয়ে স্মৃতিচারণে এই শব্দগুলোর ব্যবহার হতো। এখন শব্দ কেবল উপমাতেই সীমাবদ্ধ। দেশের অধিকাংশ গ্রামেই এখন আর কাদা নেই, বাঁশের সাঁকো নেই। সেখানে এখন পিচঢালা পথ, ইটের রাস্তা, কালভার্ট। গ্রামের মানুষকে এখন আর কাদায় হাঁটতে হয় না। সহজ-সরল মানুষগুলোকে আগের মতো প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয় না। মাথা নষ্ট করতে হয় না দুশ্চিন্তায়।

গ্রামীণ জীবন এখন অনেক বেশি সহজ এবং সুলভ। মানুষের মৌলিক চাহিদা পাঁচটি। এখন খাবার নিয়ে, পোশাক-আশাক নিয়ে, ঝড়ে মাথাগোঁজার ঠাঁই নষ্ট হওয়া নিয়ে, রোগ হলে চিকিৎসার বিষয়ে কিংবা ছেলেমেয়েকে ভাল একটি স্কুলে পড়ানো নি‌য়ে বাবা-মাকে আর ভাবতে হয় না। সেই স্থানে এখন মানুষ ভাবে কিভাবে জীবনকে আরেকটু সুন্দর করা যায়। মৌলিক চাহিদা পূরণের পর গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলোও এখন ভাবে বিনোদন নিয়ে, নিজের একটি শখ পূরণ নিয়ে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসবই সম্ভব হয়েছে গ্রামের উন্নয়নের কারণে, মানুষদের জীবনমান উন্নয়নের সুফল হিসেবে। কবি বলেছিলেন, এখানকার গ্রামগুলো ছবি মতন। বাস্তবিকতা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, এখনকার ছোট ছোট গ্রামগুলো যেন শহরেরই মতোন।  গ্রামের অনেক প্রচলিত কুসংস্কার রহিত হয়েছে, মানুষের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে, সুখ-সমৃদ্ধি ফিরে আসছে। এখন আর গ্রামকে টেনে শহরে আনতে হয় না। এখন শহর গিয়েই গ্রামে প্রবেশ করছে সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে।

উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসবই গ্রামভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণের সুফল। গ্রামে সঞ্চয়-বিনিয়োগ ব্যবস্থা, কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার ঘটেছে। জীবনমান উন্নয়ন, ভোগ তত্ত্বে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনা, সামাজিক উন্নয়ন এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়ে‌ছে।  অবাক করা বিষয় হলেও সত্যি, এখন কিছু প্রত্যন্ত গ্রামে কর্মজীবী নারীদের জন্য গড়ে উঠেছে ‘ডে কেয়ার সেন্টার’ও। এতদিন শুধু শহরের কর্মজীবী মায়েরাই এই বিষয়ের সুবিধা নিতে পেরেছেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘যে কোনো মানুষের মানসিক বিকাশ সুষ্ঠুভাবে কাজ করে যখন সে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, অশান্তি, হতাশা কিংবা দুশ্চিন্তামুক্ত হয়। আর এসবের মূলে মোটাদাগে কাজ করে অভাব। এর পরে দায়ী হিসেবে কাজ করে মানসিক, পারিবারিক, সামাজিক সমস্যা। এখন গ্রামে অভাব কেটেছে। কেটেছে এসব সমস্যাও। ফলে এসব মানুষের মানসিক পরিতৃপ্তির পাশাপাশি মানবিক বোধের বিকাশ হচ্ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি।

অ্যাম্বুলেন্স যায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে: একটা সময় ছিল যখন খুব অসুস্থ রোগীকে শুধু ভাঙা রাস্তার কারণে আর যানবাহনের অভাবে হাসপাতালে আনা যেত না। ফলে অনেকটা বিনা চি‌কিৎসায় মারা যাওয়ার ‌মতো ঘটনা ঘটতো। বর্তমানে এসব অনাকাঙ্খিত বিষয়ের সমাধান হয়েছে। এখন গ্রামেই পাওয়া যায় মানসম্মত চিকিৎসাসেবা। খুব গুরুতর ক্ষেত্র ছাড়া রোগীকে তৎক্ষণাৎ শহরে হাসপাতালে আনার মতো পরিস্থিতি ঘটে না। কারণ, সচেতন মানুষগুলো রোগের প্রাথমিক পর্যায় থেকেই চিকিৎসাসেবা নিতে পারে। তারপরও বড় ধরনের দূর্ঘটনা, প্রসূতি কোনো মা কিংবা খুব ‌বয়োজ্যেষ্ঠদের তাৎক্ষণিক হাসপাতালে আনতে এখন গ্রামের মসৃণ পথ ধরে চলে অ্যাম্বুলেন্সও।

স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় সূ্ত্র জানায়, ২০১০ সালে মাঠ পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) গ্রাম উন্নয়নে লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি)- এর প্রথম পাইলট প্রকল্প করে সিরাজগঞ্জ জেলায়। এর সাফল্যের পর গ্রাম উন্নয়নে জবাবদিহিতার সহযোগিতা দিয়ে রিনিউভিত্তিক ২০১১ সালে ৫ বছর মেয়াদের কর্মসূচি চালু করে। প্রথম পর্যায়ের সফলতা দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। দেশের ৪ হাজার ৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদের সকল গ্রামে দ্বিতীয় পর্যায়ের এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়। এতে ব্যয় করা হয় ৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। এই অর্থের মধ্যে দাতাসংস্থা বিশ্বব্যাংক ঋণ সহায়তা দিয়েছে ২ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। 

প্রকল্পের আওতায় গ্রামের কোথায় কি করতে হবে সে চাহিদা নিরুপণ ও অগ্রাধিকার নির্ধারণ ওয়ার্ডের লোকজনই করে ইউপিকে জানায়। ইউপি ওয়ার্ডের ৫ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেয় ও জবাবদিহি করে। পরিষদ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছোটখাট অবকাঠামো নির্মাণ কাজ করে। নারীর ক্ষমতায়নে নারী পরামর্শ তো দেয়ই; কোন স্কিম বাস্তবায়ন করার আগে পুরুষ ও নারীর সমন্বয়ে সুপারভাইজার কমিটি গঠিত হয়। এলজিএসপি এভাবে সরাসরি গ্রামের মানুষের ভেতরে গিয়ে উন্নয়নে শরিক হয়েছে।

গতবছর এই কাজ শেষ হওয়ার পর তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এই পর্যায়ে প্রতিটি ইউনিয়নে প্রথমে থোক বরাদ্দ দেওয়ার প‌রিকল্পনা রয়েছে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিজিটাল সেবা, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট: ইন্টারনেট এখন একটি মৌলিক অধিকারের কাছাকাছি জায়গায় অবস্থান করছে। এই অধিকার প্রাপ্তি‌তেও গ্রামের মানুষ খুব একটা পিছিয়ে নেই। এখন আর শহরের কোনো দোকানে এসে টাকার বিনিময়ে ইন্টারনেট সেবা নিতে হয় না। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারাও পাচ্ছেন সব সেবা। অনলাইনে দরকারি সকল সেবা পাওয়ায় মানুষের জীবনটাই যেন সহজ হয়ে গেছে।  শহ‌রের ইট-পাথরের অট্টালিকার রুমে বসে কোনো ছাত্র হয়তো ইউরোপে যাওয়ার আবেদন করছেন, ঠিক একইভাবে টিনের ঘরে বসেও আবেদন করা যাচ্ছে। এসবই এখন ইন্টারনে‌টের সহজলভ্যতার কারণে সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে এখন শহর-গ্রামের পার্থক্য খুব‌ বেশি নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন, পবলিক পরীক্ষার ফলাফল দেখা, প্রতিদিনের চাকরির বিজ্ঞাপন, ভর্তির তথ্যাবলী জানা, কোথাও অনলাইনে আবেদন পাঠানো, ছবি স্ক্যান করা এমনকি বিমানের টিকেট বুকিংও করছে গ্রামের মানুষ, গ্রাম থেকেই।

শিগগিরই সারাদেশে গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে যাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশকে ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় আনতে ‘অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট অ্যাট উপজেলা লেভেল প্রজেক্ট’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সংস্থাটি। এ প্রকল্পের আওতায় ৭ বিভাগের ৬৪ জেলার ২৯০টি উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার কেবল বসানো হচ্ছে। সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগ স্থাপিত হলে গ্রাহকরা নিরবচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট সুবিধা পাবেন। তখন শহর ও গ্রামের বৈষম্য আরো কমে যাবে। 

প্রকল্পের আওতায় ঢাকা বিভাগের ৬৭ উপজেলায়, চট্টগ্রাম বিভাগের ৫৯ উপজেলা, রাজশাহী বিভাগের ৩৮ উপজেলা, খুলনা বিভাগের ৩৭ উপজেলা, রংপুর বিভাগের ৪২ উপজেলা, সিলেট বিভাগের ২৬ উপজেলা এবং বরিশাল বিভাগের ২১টি উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগ স্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে ৪২ জেলায় মোট ৪৬ হাজার ক্ষমতাসম্পন্ন এডিএসএল এক্সেস নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। এক হাজার চারটি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইন স্থাপন করা হবে।

এছাড়া ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণাণলয় সূত্রে জানা গেছে, চীন সরকারের সহায়তায় দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য শিগগির আসছে নতুন প্রকল্প স্ট্যাবলিশিং ডিজিটাল কানেকটিভিটি (ইডিসি)।

কিস্তির টাকা নিয়ে দুঃচিন্তা নেই বরং পাচ্ছেন ভাতা-সহায়তা: কয়েক বছর আগেও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সর্বসান্ত হওয়ার অনেক সংবাদ পাওয়া যেত। কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে লাঞ্চিত হতে হতো। সে‌ দিনও বদলেছে। এখন বরং সরকারিভাবে কয়েক ধরনের ভাতা পাওয়া যাচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর বেড়েছে ভাতাভোগীর সংখ্যা এবং ভাতার পরিমানও।  গ্রামে স্বাবলম্বী মানুষ গড়ে তোলার লক্ষ্যে হাতে নেওয়া হয়েছিল ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প। সেই প্রকল্পের অধীনে তৈরি করা হয়েছে সমিতি। সেই সমিতি থেকেও সহায়তা পাচ্ছে দেশের ৩৩ লাখ পরিবার। এখন গ্রামের মানুষগুলোও শহরের মানুষদের মতোই নিয়মিত আয় নিয়ে ভাবে, সঞ্চয় নিয়ে ভাবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব এস. এম. গোলাম ফারুক রাইজিংবিডি‌কে বলেন, ‘সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের আওতায় ৭০ হাজার ১৪৭টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি থেকে দেশব্যাপী প্রায় ৩৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৮৭ হতদরিদ্র পরিবার সরাসরি উপকৃত হচ্ছে। এর ফলে এই প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করছেন ১ কোটি ৬৯ লাখেরও বেশি দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষ।’

তিনি বলেন, ‘দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচনে গৃহীত একটি অনন্য প্রকল্প হিসেবে সরকার এই ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীন এই প্রকল্প দেশে দারিদ্র্য নিরসনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’

ডিজিটাল কৃষি সেবা যাচ্ছে গ্রামে: কৃষি কাজে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে দেশের বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় স্থাপন করা হচ্ছে ‘কৃষক সেবা কেন্দ্র’। বর্তমানে কৃষকরা বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক সেবার আওতায় আসছেন। তবে এসব সেবাকেন্দ্র চালু হলে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উপজেলায় আসা যাওয়া করে কৃষি সেবার জন্য আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। কৃষি উন্নয়ন আরেক ধাপ এগিয়ে, কৃষি সেবা এখন গ্রামে। কৃষকরা হাতের নাগালে পাবেন কৃষি সেবা। এতে করে কৃষকদের সময় ও আর্থিক সাশ্রয় হবে। স্বচ্ছলতা আসবে কৃষক পরিবারগুলোতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক সেবা কেন্দ্র স্থাপন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর (পাইলট)’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ২১টি জেলার ২৪টি উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নে এ ধরনের কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ২০টি ইউনিয়নে আরো ২০টি ‘কৃষক সেবা কেন্দ্র’ নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের ২৪টি ইউনিয়নে পাইলটিং আকারে ‘কৃষক সেবা কেন্দ্র’ স্থাপন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ‘কৃষক সেবা কেন্দ্র’ গড়ে তোলা হবে। উৎপাদনের বিভিন্ন তথ্য কৃষকদের আগেই জানাতে পারলে কৃষক সহজে তার মাঠের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারবে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ, শস্য বহুমুখীকরণ, নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি কৃষকদের ঘরে পৌঁছে দিতে ‘কৃষক সেবা কেন্দ্র’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সম্প্রসারিত হচ্ছে গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি: দুই পর্যায়ের সফলতার পর তৃতীয় পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে ‘সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি’। এ পর্যায়ে দেশের সব জেলার ১৬২টি উপজেলায় ১০ হাজার ৩৫টি গ্রামে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। সম্প্রসারিত এ অংশ সম্পূর্ন বাস্তবায়ন হবে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে। এতে ব্যয় হবে ৩০১ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। গত ৮ মার্চ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়।

কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে গ্রামভিত্তিক একক সমবায় সংগঠনের আওতায় ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী নির্বিশেষে সব পেশা ও শ্রেণির জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করা হবে।  এছাড়া ১০ হাজার ৩৫টি সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে মোট ১৪ লাখ ৩০ হাজার ১৬৩ জনকে দক্ষতা ও আয় বৃদ্ধিসংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং সমবায় সমিতিগুলোর সদস্যদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে মূলধন গঠন এবং তা থেকে বিনিয়োগের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

কর্মসূচির আওতায় প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- সার্বিক গ্রাম উন্নয়নের জন্য গ্রামের ১৮ বছর বা তার ঊর্ধ্ব বয়সের সব অধিবাসীকে সমবায় পদ্ধতির আওতায় আনার জন্য উদ্বুদ্ধকরণ, গ্রামের প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিকের সমন্বয়ে প্রতি গ্রামে একটি করে মোট ১০ হাজার ৩৫টি গ্রামে সমবায় সমিতি গঠন, ১৪ লাখ ৩০ হাজার ১৬৩ জনকে দক্ষতা বৃদ্ধি, আয়বর্ধক কর্মকাণ্ড ও তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া, সমবায় সমিতির সদস্যদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে মোট ৫১০ কোটি টাকার মূলধন গঠন, এই মূলধন থেকে বিনিয়োগের মাধ্যমে তিন লাখ ৫০ হাজার আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি এবং প্রতিটি সমবায় সমিতির জন্য গ্রাম উন্নয়ন কর্মী তৈরি করা, যারা সরকারের বিভিন্ন জাতি গঠনমূলক সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতির যোগাযোগ স্থাপন করবে।

নেওয়া হয়েছে আরো বেশকিছু প্রকল্প: পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে একনেকে গ্রাম উন্নয়ন সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। সূত্র জানায়, এ সময়ে পল্লী অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে ১৭ হাজার ৭২৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে রাস্তা, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ-রক্ষণাবেক্ষণ, ঘাট নির্মাণ, গ্রামীণ হাটবাজার উন্নয়ন ও প্রকৌশল সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হবে। ফলে গ্রামের উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হবে।

নির্বাচনী ইশতেহারেও গ্রাম: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল ইশতেহার ‌ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ প্রধান প্রধান সব রাজনৈতিক দল ইশতেহারে গ্রাম উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে গ্রাম-শহরের বৈষম্য ঘুচানোর। ফলে আশা করা হচ্ছে, আগামী দি‌নে গ্রামের আরো উন্নয়ন হবে। 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ ডিসেম্বর ২০১৮/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়