ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

অবশেষে প্রাণ পেল মানিলন্ডারিং আইন, বিধিমালা প্রণয়ন

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২২, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অবশেষে প্রাণ পেল মানিলন্ডারিং আইন, বিধিমালা প্রণয়ন

এম এ রহমান মাসুম : আইন পাশ হওয়ার সাত বছর পর ও সংশোধিত আকারে কার্যকর হওয়ার প্রায় চার বছর পর মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর বিধিমালা প্রণয়ন হলো।

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা ২০১৯ নামে অভিহিত হবে। বিধিমালায় ১২টি অধ‌্যায় ও ৫৭ ধারা রয়েছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের সই করা প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ‌্য জানা যায়। এটি ৩১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর ধরা হয়েছে।

এর মাধ‌্যমে আইনটি পূর্ণতা লাভ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো মনে করছে। একই সঙ্গে মানিলন্ডারিং অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তকাজে ২০১৫ সালে ক্ষমতাপ্রাপ্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিলে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হলো।

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পাস হয়। যা  ওই বছরের ১৬ জানুয়ারি কার্যকর হয়। তখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনে একমাত্র ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে।

এরপর ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনটি সংশোধন হয়। কিন্তু বিধিমালা প্রণয়ন হয়নি। এখন প্রণীত বিধিমালা ১২টি অধ‌্যায় ও ৫৭ ধারা দ্বারা সাজানো হয়েছে।

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা ২০১৯ এর ৫২ ধারায় আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের (চার্জশিট) অনুমতি প্রদানের ক্ষমতাপ্রাপ্ত নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের বিষয়ে বলা হয়েছে।

৫২ (১) অনুসারে আইনে উল্লিখিত অপরাধের তদন্ত সমাপ্ত হইবার পর আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের অনুমতি প্রদানের নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ বলিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষেত্রে, দুদক আইন, ২০০৪ (২০০৪ সনের ৫ নং আইন) এর ধারা ২ এর দফা (ঙ) এ সংজ্ঞায়িত কমিশন এবং এই বিধিমালার তফসিলের ‘তালিকা-১’ এ উল্লিখিত অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থার ক্ষেত্রে, সংস্থার প্রধানকে বোঝাবে।

ধারা (২) অনুসারে মানিলন্ডারিং অপরাধের অভিযোগ তদন্তের পর কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে, বিচার সুপারিশ করিয়া উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের করিবার ক্ষেত্রে, আইনের ধারা ১২ অনুযায়ী উপ-বিধি (১) এ উল্লিখিত তদন্তকারী সংস্থার নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণ আবশ্যক হবে এবং এইরূপ অনুমোদনপত্রের একটি কপি আদালতে দাখিল করা না হলে আদালত অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণ করবে না।

অন‌্যদিকে এই বিধিমালায় অপরাধের ২৭টি ধরন অনুসারে ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর বিবরণ তফসিলের ‘তালিকা-১’ এ উল্লেখ করা হয়েছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে বর্ণিত অপরাধ অনুসন্ধান ও তদন্তের জন‌্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্ধারিত সংস্থাগুলো হলো-

১] দুর্নীতি ও ঘুষ- দুর্নীতি দমন কমিশন
২] মুদ্রা জালকরণ- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
৩] দলিল দস্তাবেজ জালকরণ- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
৪] চাঁদাবাজি- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
৫] প্রতারণা- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
৬] জালিয়াতি- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
৭] অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
৮] অবৈধ মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবসা- মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
৯] চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা- বাংলাদেশ কাস্টমস ও বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
১০] অপহরণ, অবৈধভাবে আটকে রাখা ও পণবন্দী করা- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
১১] খুন, মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
১২] নারী ও শিশু পাচার- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
১৩]চোরাকারবার- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
১৪] দেশি ও বিদেশি মুদ্রা পাচার- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
১৫] চুরি বা ডাকাতি বা দস্যুতা বা জলদস্যুতা বা বিমান দস্যুতা- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
১৬] মানব পাচার- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
১৭] যৌতুক- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
১৮] চোরাচালানী ও শুল্ক সংক্রান্ত অপরাধ- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
১৯] কর সংক্রান্ত অপরাধ- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
২০] মেধাস্বত্ব লংঘন- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
২১] সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থ যোগান- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
২২] ভেজাল বা স্বত্ব লংঘন করে পণ্য উৎপাদন- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
২৩] পরিবেশগত অপরাধ পরিবেশ অধিদপ্তর- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
২৪- যৌন নিপীড়ন (সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়টেশন)- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
২৫] পুঁজিবাজার সংক্রান্ত অপরাধ (ইনসাইডার ট্রেডিং অ্যান্ড মার্কেট ম্যানিপুলেশন)- বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।
২৬] সংঘবদ্ধ অপরাধ- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ
২৭] ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ আদায়- বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ

বিধিমালা প্রণয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম‌্যান ইকবাল মাহমুদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিধিমালা এখনো আমি দেখিনি। তাই এ বিষয়ে মন্তব‌্য করতে পারবো না।’

অন‌্যদিকে এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। বিধিমালা প্রণয়নের ফলে আমাদের অনুসন্ধান ও তদন্তে গতি লাভ করবে। ২০১৫ সালে মামলা করার ক্ষমতা পেলেও চার্জশিট অনুমোদনের পর কর্তৃপক্ষের অভাবে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা সম্ভব হয়নি।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এ যাবৎ ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও ‍জানান তিনি।

এছাড়া বিধিমালায় মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে জাতীয় সমন্বয় কমিটি, ওয়ার্কিং কমিটি ও প্রাথমিক যোগাযোগ কর্মকর্তার দায়-দায়িত্বের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। বিধিমালার দ্বিতীয় অধ‌্যায়ের ৩ ধারায় জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠন ও কার্যপরিধির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৫ সদস‌্য বিশিষ্ট হবে ওই জাতীয় সমন্বয় কমিটি।

বিধিমালার ৫৪ ধারায় প্রয়োজনে যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্তের বিষয়ে বলা হয়েছে। এই বিধিমালার তফসিলের ‘তালিকা-১’ এ উল্লিখিত একাধিক তদন্তকারী সংস্থার সমন্বয়ে একটি নির্দিষ্ট তদন্তকারী সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত দল গঠন করা যাবে। এখানে ছয়টি উপধারায় তাদের কার্যধারা বর্ণনা করা হয়েছে।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/এম এ রহমান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়