ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

আইনজীবীদের অভিমত

‘সুলতানের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের কারণ নেই’

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৬, ৭ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সুলতানের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের কারণ নেই’

মেহেদী হাসান ডালিম : সুলতান মুহাম্মদ মনসুর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ায় তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না সে বিষয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও বিএনপিপন্থী বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীরা সুলতান মুহাম্মদ মনসুরের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের কোন কারণ দেখছেন না।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমি মনে করি সুলতান মুহাম্মদ মনসুরের সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে না। কারণ, তিনি যে দল থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন পার্লামেন্টে সেই দলের অন্য কোন সংসদ সদস্য নেই।’ তাহলে সুলতান মুহাম্মদ মনসুরের সংসদ সদস্য পদ বাতিল কে করবে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন সংসদ সদস্য সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দিলে বা দল থেকে পদত্যাগ করলে তার সদস্য পদ খালি হয়। কিন্তু সুলতান মুহাম্মদ মনসুর এর কোনটাই করেননি। বরং তাকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ কারণে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিলের প্রশ্নই উঠে না।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাক্তন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘দুই কারণে সংসদ সদস্যপদ বাতিল হতে পারে- সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য যদি তার দলের বিরুদ্ধে ভোট দেন (ফ্লোর ক্রসিং) অথবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেউ নির্বাচিত হওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে যদি শপথ না করেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো সংসদ সদস্যকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলে তার সংসদ সদস্য পদ যাবে না। তবে এ ব্যাপারে সংবিধানে সুনির্দিষ্ট করে কিছু উল্লেখ নেই।’

বিশিষ্ট আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দলের সিদ্ধান্তের বাইরে শপথ নিয়ে নৈতিকতা বিরোধী কাজ করেছেন।  সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ধনের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন এবং যে দল নির্বাচনকে স্বীকার করছে না, সেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। স্বাভাবিকভাবে জনগণ এটাকে ভালভাবে নেবে না। আইনগতভাবে সংবিধানে কোনো বাধা নেই। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে আছে কোনো সংসদ সদস্য পার্লামেন্টে যদি ওই দলের বিরুদ্ধে ভোট দেন তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু আমরা পার্লামেন্ট নেই। তাকে বহিস্কার করা হলে সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে না। কিন্তু এটা তিনি নৈতিকতা বিরোধী কাজ করেছেন।’ 

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পড়ে দেখুন, সেখানে সব স্পষ্টভাবে বলা আছে। এখন মূলত গণফোরামই তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এর বাইরে এ মুহূর্তে আর কোন মন্তব্য করতে চাইনা।’

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূণ্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’

এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, সুলতান মনসুর দল থেকে পদত্যাগ করেননি। সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার বিষয়টি আরও পরের কথা। তবে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নিলে এবং ওই অবস্থায় দল তাঁকে বহিষ্কার করলে পরিণতি কী হবে, সে বিষয়ে আইনে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। এই যুক্তিতে সুলতান মনসুরের সংসদ সদস্যপদ টিকে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন সুলতান মুহাম্মদ মনসুর। এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক গণফোরাম। দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এমনকি তার প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে নাম লিখিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসনে নির্বাচন করে জয়ী হন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।

আরো পড়ুন

>>
>>

>>

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ মার্চ ২০১৯/মেহেদী/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়